সেলুলয়েডে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:৩৮ এএম, ২৭ মার্চ ২০১৯ বুধবার
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়ে আসছে। আর এগুলোর মধ্যে একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র। যেখানে সরাসরি যুদ্ধের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে কিছু চলচ্চিত্রে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধকে উপস্থাপন না করে পরোক্ষভাবে এর ভয়াবহতাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপস্থাপন করা হয়েছে যুদ্ধের স্বীকার হওয়া শরণার্থী বা পালিয়ে বেড়ানো মানুষের জীবনাবেগকে।
এ ধরনের চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে নেয়া, এখনো অনেক রাত, মেঘের অনেক রং, আলোর মিছিলসহ আরো বেশ কিছু চলচ্চিত্র।
১৯৭০ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’। সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শহীদের রক্তের দাগ তখনো শুকোয়নি। স্বাধীনতার উপলব্ধি তখনো অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে দিন-রাত। ঠিক সেই সময় পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম আর প্রযোজক মুরাদ পারভেজ দায় অনুভব করলেন সময়ের সাক্ষী হওয়ার। সঙ্গে নেয়া হল খসরু, মুরাদ ও নান্টুর মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের। সদ্য মুক্তি পাওয়া দেশে কলাকুশলীদের নিরন্তন ভালোবাসা ও কঠোর পরিশ্রমের ফসল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ছবি ‘ওরা ১১ জন’।
একই বছর সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন অরুণোদয়ের ‘অগ্নিসাক্ষী’। বীরাঙ্গনা নারীদের আকুতির প্রেক্ষাপট নিয়েই আবর্তিত হয় ছবিটির মূল কাহিনী। আরো মুক্তি পায় রক্তাক্ত বাংলা। এটি পরিচালনা করেন মমতাজ আলী। বাংলাদেশের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের আলমগীর কবিরের হাত ধরে আমরা পাই মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি ‘ধীরে বহে মেঘনা’। চলচ্চিত্রটির মূল পরিকল্পনা ছিল জহির রায়হানের।
১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের উপর বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পায়। এগুলোর মধ্যে আমজাদ হোসেন রচিত কাহিনী নিয়ে খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ বেশ জনপ্রিয়। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় নারায়ণ ঘোষ মিতার আলোর মিছিল। শাহরিয়ার কবিরের একাত্তরের যীশু উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ১৯৯৩ সালে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু নির্মাণ করেন ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটি।
নন্দিত কথা সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ আমাদের উপহার দিয়েছিলেন অনন্য এক মুক্তিযুদ্ধের ছবি। অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায়, প্রাণবন্ত অভিনয় আর কুশলী উপস্থাপনায় তিনি তৈরি করেছিলেন ‘আগুনের পরশমণি’। যা এখনো আমাদের মনকে নাড়া দেয়। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া তানভীর মোকাম্মেলের ‘নদীর নাম মধুমতি’। চলচ্চিত্রটি মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি রাজাকারদের দুরাচারের সাক্ষী।
এছাড়াও খান আতাউর রহমানের এখনো অনেক রাত, চাষী নজরুল ইসলামের হাঙর নদী গ্রেনেড, মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত শিশুতোষ উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত আমার বন্ধু রাশেদ, গেরিলা, মেহেরজান, জীবনঢুলী, ৭১ এর মা জননী, যুদ্ধশিশু, অনিল বাগচীর একদিন, তৌকির আহমেদের জয়যাত্র, সংগ্রাম, রক্তাক্ত বাংলা, আমার জন্মভূমি, শ্যামলছায়া, মেঘের অনেক রং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অহংকার। আর সেই অহংকারের উপর আমাদের সিনেমার সংখ্যা যে অসংখ্য, তা কিন্তু বলা যাবে না। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ অবধি আরো অনেক চলচ্চিত্রে উঠে এসেছে এ দেশের মুক্তির ইতিহাস। আমাদের এই নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে ওঠার পথে এই সব চলচ্চিত্রের আবেদন যুগ যুগান্তরের।