কেমন আছে আর্জেন্টিনার মুসলমানরা
ডেস্ক রিপোর্ট
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৫:২৫ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৯ বৃহস্পতিবার
আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটাজুড়েই এর অবস্থান। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আয়তন ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার বা ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৮ মাইল। আন্দিস পর্বতমালা দেশটির পশ্চিম সীমানা নির্ধারণ করেছে, যার অন্য পাশে চিলি অবস্থিত। উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগর এবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালি।
এর ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুতে রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা ও তার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির (যার নাম পাম্পাস) শহরগুলোতে বাস করে। পাম্পাসেই দেশটির বেশির ভাগ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় ‘গাউচো’দের আবাসস্থল।
রাজধানী বুয়েনস এইরেস। যা দেশটির সর্ববৃহৎ নগরী হিসেবেও পরিচিত। জনসংখ্যা ৪৪.২৯ মিলিয়ন। (সূত্র : ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০১৭) যার মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ৯২ শতাংশ, প্রটেস্ট্যান্ট ২ শতাংশ, ইহুদি ২ শতাংশ, অন্যান্য ৪ শতাংশ, আর মুসলমান প্রায় ২ শতাংশ। (সূত্র : ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক)
লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম আর্জেন্টিনায়। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত ২০০৯ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এখানকার মুসলিম জনসংখ্যা সাত লাখ ৮৪ হাজার।
ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে জানা যায়, আর্জেন্টিনায় যখন স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ কলোনি ছিল, তখন এখানে কাজ করার জন্য বহু পশ্চিম আফ্রিকান মানুষ ধরে আনা হতো। স্বভাবতই তারা ছিল মুসলিম। পরবর্তীকালে সিরিয়া, লেবাননসহ বিভিন্ন আরব দেশ থেকে অনেক মুসলমান অভিবাসী এখানে এসে বসত গড়ে। বর্তমানে বেশির ভাগ মুসলিমই সেখানকার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে বসবাস করে। ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমানরা বেশ স্বাধীনভাবেই এখানে ধর্ম পালন করতে পারে। ইবাদতের সুবিধার্থে গড়ে উঠেছে বড় বড় ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ ইত্যাদি। যার মধ্যে সিআইআরএ (দ্য ইসলামিক সেন্টার অব আর্জেন্টিনা), আহমদ মসজিদ, আত-তাওহিদ মসজিদ, কিং ফাহাদ বা পালার্মো মসজিদ অন্যতম।
পবিত্র রমজান, ঈদসহ সব ইসলামী উৎসব তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করে। রমজানে বড় বড় ইসলামিক সেন্টার ও মসজিদগুলো মুসল্লিদের জন্য সাহরি ও ইফতারের আয়োজন করে। অনেক মুসলিমই রমজানে ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে চলে আসে। তাদের সঠিক দ্বিন শিক্ষা দেওয়ার জন্য মসজিদগুলোতে শুরু হয় বিশেষ কোর্স। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেও পবিত্র রমজান মাসে ইসলামী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে মুসল্লিরা তাদের যেকোনো প্রশ্নের সমাধান মুফতি সাহেবদের থেকে নিতে পারে।
এ ছাড়া পবিত্র রমজান এলে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেওয়া হয় সহানুভূতির হাত। যার ফলে সেখানে দিন দিন মুসলিমের সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে মসজিদগুলোতে বাড়ছে মুসল্লিদের সংখ্যাও। নাইন-ইলেভেনের পর সেখানকার মুসলিমরাও প্রথম দিকে বেশ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করলেও সে দেশের সরকার মুসলিমদের প্রতি সহনশীল হওয়ায় তারা সে সংকট সহজে কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।