সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছাত্র-ছাত্রীদের তালিম ও তবরবিয়তের অপরিহার্যতা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:১৯ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার

‘তালিম এবং তরবিয়ত’ শব্দ দুটির মাঝে যদিও বাহ্যিকভাবে গভীর সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উভয়টির মাঝে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। তালিম অর্থ কোনো বিষয়ে জানা। আর তরবিয়ত হলো জ্ঞাত বিষয়কে জীবনে বাস্তবায়ন করা।

তালিমের মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে। আর তরবিয়তের মাধ্যমে মানুষ মানার যোগ্যতা অর্জন করে। কোরআনুল কারিমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের তিনটি মৌলিক কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো কোরআনের তেলাওয়াত, কিতাব ও হেকমতের শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধি করানো। (সূরা বাকারা- ১২৯)।

 

কোরআনের তেলাওয়াত, কিতাব ও হেকমতের শিক্ষা দ্বারা তালিমের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আত্মশুদ্ধি দ্বারা তরবিয়তকে বুঝানো হয়েছে। তালিম এবং তরবিয়ত উভয়টিই একজন মানুষের জন্য দরকারি। সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্থ হলো ঈমান থেকে বিরত ব্যক্তি। এরপর বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হলো, যে তালিম থেকে বিরত। যে লোক আকার-আকৃতি এবং আখলাক-চরিত্রে উত্তম কিন্তু ইলম থেকে বিরত তার দৃষ্টান্ত ওই ব্যক্তির ন্যায় যে বাহ্যিকভাবে খুব সুন্দর এবং সুস্থ, কিন্তু তার চক্ষু নেই। আর যে ইলম অর্জন করেছে কিন্তু তরবিয়ত শিখেনি তার দৃষ্টান্ত ওই অন্ধ ব্যক্তির ন্যায় যার হাতে লাঠি দিয়ে প্রহার করতে বলা হলো, আর সে জালেম-মাজলুম উভয়কেই প্রহার করলো। প্রথমোক্ত ব্যক্তি নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলো আর দ্বিতীয় ব্যক্তি সমাজ ও জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করলো। সুতরাং আমরা দেখতে পাই তালিম থেকে বিরত ব্যক্তি অপমান ও লাঞ্ছনার জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। আর শিক্ষিত কিন্তু তরবিয়ত থেকে বিরত ব্যক্তি সমগ্র জাতির জন্য বিষাক্ত আকার ধারন করে। তার অহংকার, বাড়াবাড়ি, অন্যের হক নষ্ট করা এবং সুদ-ঘুষের আদান-প্রদানের কারণে পুরো সমাজব্যবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

এজন্য ইসলাম ধর্ম তালিম এবং তরবিয়ত উভয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। নিজে তালিম হাসিল করা এবং অধীনস্থদের শিক্ষা দেয়ার প্রতি ইসলাম জোর-তাগিদ দিয়েছে। পরিবার এবং সমাজের দায়িত্বশীলদেরকে অধীনস্থদের তরবিয়ত শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, দোযখের আগুন থেকে নিজে বাঁচো এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে বাঁচাও। (সূরা তাহরিম-৬)। শুধু নামাজ আদায় করতে বলা হয়নি; বরং নিজের পরিবার-পরিজনকে নামাজের আদেশ করতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, নিজের পরিবার-পরিজনকে নামাজের নির্দেশ দাও। (সূরা তাহা-১৩২)। শিশুদের তরবিয়ত শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব তাগিদ দিয়েছেন, তিনি বলেন সন্তান সাত বছর বয়সে উপনীত হলে তাকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর হলে তাকে নামাজের জন্য প্রহার কর, আর এই বয়সে পৌঁছলে তার বিছানা আলাদা করে দাও। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর- ৪৯৫)। পিতার দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন পিতার দায়িত্ব হলো, সন্তানের জন্য ভালো নাম রাখা এবং তাকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নম্বর ৮৫৪)।

 

তিনি আরো বলেন, পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শেখানোর চেয়ে বড় কোনো অনুগ্রহ করতে পারে না। (তিরমিযি, হাদিস নম্বর- ১৯৫২)। হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কোনো লোক তার সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া প্রতিদিন এক সা’ (সাদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ) গম সদকা করার চেয়ে উত্তম। (মুসনাদে বাযযার ৪২৭৪)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সর্ববিষয়ের আদব শিক্ষা দিতেন। এমনকি পানাহারের আদবও শেখাতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সৎছেলে ওমর ইবনে আবু সালামা খানা খাচ্ছিলো। খাবারের সময় পাত্রের এদিক ওদিক হাত নাড়াচাড়া করছিলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, বিসমিল্লাহ বলে খাও, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনে থেকে খাও। (বুখারি- হাদিস নম্বর- ৫৩৭৬)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের সুন্দর সুন্দর উপদেশ দিতেন; এমন উপদেশ যা তাদের জীবনগঠনে সহায়ক হতো। তাদের জীবনের মোড়কে সঠিক পথে পরিচালিত করতো। একবার হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিআল্লাহু আনহুকে উপদেশ দিলেন, বললেন, হে আবদুল্লাহ! আমি তোমাকে কিছু কথা শিক্ষা দিব। তুমি আল্লাহর হুকুমের হেফাযত কর, আল্লাহ তোমাকে হেফাযত করবেন, আল্লাহর বিধানের হেফাযত কর, আল্লাহকে তোমার সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাইবে, আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে কেবল আল্লাহর কাছেই করবে। জেনে রেখ, সমস্ত জাতি যদি তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয় তাহলে এতটুকু উপকারই করতে পারবে, যা আল্লাহ লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা তোমার কোনা ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয় তাহলেও ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে, যা আল্লাহ লিখে রেখেছেন। সচ্ছলতার সময় আল্লাহকে স্বরণ করবে, অসচ্ছলতার সময় আল্লাহ তোমাকে স্বরণে রাখবেন। মনে রেখ! আল্লাহর সাহায্য ধৈর্যধারণ করার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর বিপদের সঙ্গে রয়েছে প্রশস্ততা আর সংকীর্ণতার সঙ্গে রয়েছে সহজতা। (তিরমিযি, হাদিস নম্বর- ২৫১৬)।

 

শুধু শিশুদের তরবিয়ত শেখানোই যথেষ্ট নয়; বরং সন্তান বড় হলে তাকেও তরবিয়তের ব্যাপারে সর্তক করতে হবে। এটা পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার বিয়ে-শাদীর ব্যবস্থা করা। যদি পিতা-মাতা এ ব্যাপারে অলসতা করে আর সন্তান কোনো গুনাহে লিপ্ত হয়, তাহলে ওই গুনাহের বোঝা পিতা-মাতার ওপরও বর্তাবে। (বায়হাকি শুয়াবুল ইমান, হাদিস নম্বর- ৮২৯৯)। এ জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের তরবিয়ত শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে যুবকদের তরবিয়তের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যদি বিবাহের পর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কারণ বিবাহ দৃষ্টি নত রাখতে এবং সতীত্ব রক্ষা করতে সহায়ক। আর যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না তার রোজা রাখা উচিত। কারণ রোজা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ঢালস্বরূপ। (বুখারি, হাদিস নম্বর- ৪৭৭৯)।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নসিহত করলেন। বললেন পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে মূল্যায়ন করবে। বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বে যৌবনকে, অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, অসচ্ছল হওয়ার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ত হওয়ার পূর্বে অবসরতাকে এবং মৃত্যুর পূর্বে নিজের জীবনকে। (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস নম্বর- ৭৮৪৬)। এ উপদেশগুলো সকলের জন্য জরুরি। বিশেষ করে যুবকদের জন্য বেশি জরুরি। কারণ, যৌবনে সাধারণত মানুষ সুস্থ থাকে। রুজি রোজগারের ক্ষমতা থাকার কারণে সচ্ছল থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাই যৌবনে অবসরতাও থাকে। যদি ভালোভাবে নিজের জীবনকে কাজে লাগাতে পারে। তাহলে সেই প্রকৃত ভাগ্যবান এবং সফল ব্যক্তি।

তরবিয়তের ক্ষেত্রে তিন ধরনের লোক দায়িত্ব পালন করতে পারেন। উসতাদগণ, পিতা-মাতা এবং বন্ধ-বান্ধব ও সহপাঠীরা। উসতাদের কাছে ছাত্ররা শুধু দরসের পড়া শিখবে না; বরং তারা চলন-বলন, আচার-ব্যবহার, পোশাক-আশাকসহ হাসি-ঠাট্টার শিক্ষাও উসতাদের কাছে শিখবে। উসতাদের এসব কাজকর্ম শিক্ষার্থীদের ওপর অনেক প্রভাব পরে। তবে পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে উসতাদরা শিক্ষাকে পেশাদারিত্ব মনে করেন। ছাত্ররা তাদর থেকে ভালো বিষয় শেখার পরিবর্তে খারাপ বিষয়গুলো শিখে। কাজের ফাঁকি দেয়া, অশালীন কথা-বার্তা, অসৎ আচরণ এবং দায়িত্ব পালন না করার সবক শিখে। আর নিজেদের কর্মজীবনে এগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

সন্তানকে তরবিয়ত শেখানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো পিতা-মাতার ওপর। কারণ সবাই চায়, নিজের সন্তানকে ভালো বানাতে। মদপায়ীও পছন্দ করে না, তার সন্তান মদপায়ী হোক। তবে তিনটি জিনিস তরবিয়তের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে থাকে। প্রথমত, পিতা-মাতার অজ্ঞতা। মুসলিম সমাজে বর্তমানে অনেক পিতা-মাতা এমন রয়েছেন, যারা নিজ সন্তানদের তরবিয়ত দেয়ার যোগ্যতা রাখেন না। দ্বিতীয়ত, অর্থ-কড়ি কামানোর ব্যস্ততা ও বিনোদনের দিকে ধাবিত হওয়া। শহরে এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা সন্তানদের দেখাশুনা করার মতো সময়-সুযোগ পান না। তাদের এতটুকু সময় হয় না, যা নিজ সন্তানের তরবিয়তের জন্য ব্যয় করবেন। তাদের জীবনের লক্ষ্য একটাই উপার্জন, উপার্জন আর উপার্জন। তৃতীয়ত, ওই সব লোক যারা শিক্ষিত, সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে সচেষ্ট কিন্তু তাদের কাছে তরবিয়তের উদ্দেশ্য কেবলই সন্তানকে পার্থিব উপকরণ অর্জনের জন্য প্রস্তুত করা। চারিত্রিক দীক্ষার কোনো মূল্য তাদের কাছে নেই। এরাই যখন বার্ধক্যে পৌঁছে আর নিজ সন্তানের অপকর্ম স্বচোক্ষে প্রত্যক্ষ করে তখন চোখের পানি ফেলে আর নিজেদের উদাসীনতার কথা অনুভব করে।

 

তরবিয়তের তৃতীয় মাধ্যম হলো সহপাঠী এবং বন্ধু-বান্ধব। মানুষ সহপাঠী এবং বন্ধু-বান্ধব দ্বারা প্রভাবিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে নিজের উসতাদ এবং পিতা-মাতার চেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তার সহপাঠী এবং বন্ধু-বান্ধব দ্বারা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নৈতিক উন্নতি এবং অবনতির ক্ষেত্রে সহপাঠীকে মডেল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ভালো সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো আতর বিক্রেতার ন্যায়। সে হয়তো আতর দিবে, নতুবা তার থেকে আতর ক্রয় করবে, তা না হলে কমপক্ষে আতরের ঘ্রাণ অবশ্যই পাবে। আর অসৎ সঙ্গীর দৃষ্টান্ত হলো হাপরে ফুঁ-দাতার ন্যায়। যদি আগুন নাও জ্বলে তারপরেও ধুয়া থেকে বাঁচতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৫২১৪)। বর্তমানে সমাজের অবস্থা খারাপ হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুবকরা যে সঙ্গ পায়, তা তাদের জন্য উপকারের চেয়ে অপকার মনে হচ্ছে। আর তাদের তরবিয়তের উপকরণও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তাই সমাজে শিক্ষার হার বাড়ছে আর চারিত্রিক অবক্ষয় হচ্ছে। পড়া-লেখা করে ভালো ডিগ্রি অর্জন করে, কিন্তু একজন ভালো মানুষ হতে পারে না।
 
বর্তমানের অবস্থা আরো ভয়াবহ। যুবকরা প্রাইমারি শিক্ষা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যান্য শহরে যায়। আর সেখানে এমন উসতাদ না পায়; যারা তাদেরকে আদর-সোহাগ করে শেখাবে, আর পিতা-মাতার তত্তাবধান থেকেও বিরত হয়, আবার ভালো কোনো সাথীরও সঙ্গ না পায়, তখন এসব বিষয় তাদের মানসিকতা নিচু বানিয়ে দেয়। বর্তমানে অনেক ছাত্র উচ্চশিক্ষার জন্য গ্রাম থেকে শহরমুখী হয়। তারা সঠিক তরবিয়ত ও দিক-নির্দেশনা না পাওয়ায় প্রতিনিয়ত অসৌজন্যমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি। তাই তাদের তত্তাবধান সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। বিশেষত যুবক-যুবতি যারা উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে মাতৃভূমি ছেড়ে দূরে অবস্থান করছে তাদের তত্তাবধান কীভাবে করা যায়? 

এ বিষয়ে পূর্বেই একটি ফর্মুলা পেশ করেছেন ইসলামি চিন্তাবিদ, আর্ন্তজাতিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা সাইয়েদ মানাযির আহসান গিলানী তার লিখিত ‘ইসলাম কা নেযামে তালিম ও তরবিয়ত’ (ইসলামে তালিম-তরবিয়তের ব্যবস্থা) গ্রন্থে। যার সারাংশ হলো শহরে মুসলিম ছাত্রদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্যেও দ্বীনি পরিবেশে পৃথকভাবে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখানে তাদের ধর্মের মৌলিক বিষয় শিক্ষা দেয়া হবে। যেভাবে ধর্মীয় শিক্ষাঙ্গনে তরবিয়ত শিক্ষা দেয়া হয়, সেভাবে তাদের শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। আকিদা, আমল এবং আখলাক সব বিষয়ের ওপর সমানভাবে গুরুত্বারোপ করা হবে। মেয়েদের হোস্টেলে পর্দার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। আবার লক্ষ রাখতে হবে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাদির ভুল ব্যবহারও যেন না হয়। চরিত্র নষ্ট করার মতো কাজ থেকেও বিরত রাখতে হবে। আর তা হবে সংরক্ষিত জায়গায়। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া যা খোলা হবে না। যদিও এই ব্যবস্থা আরো আগেই দরকার ছিল; কিন্তু বর্তমানের অবস্থা হলো, লোকজন প্রাইভেটভাবে যেসব হোস্টেল বানিয়েছে, তার উদ্দেশ্য কেবল ভাড়া দেয়া। সেখানে দীনি তরবিয়তের কোনো উদ্দেশ্য নাই। কয়েকজন ছাত্র মিলে যখন কোনো রুম এককভাবে ভাড়া নেয় তখন সেখানে চরিত্র নষ্ট করার উপকরণ অনেকাংশে বেড়ে যায়। আর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব হোস্টেল রয়েছে সেখানে পূর্ণরূপে তত্তাবধান করা হয় না। তা ছাড়া বর্তমানে সেখানে বিধর্মীদের নীতি-নৈতিকতা বাস্তবায়ন করা হয়। দেশের অমুসলিমদের সাহস যোগানো হয়, মূর্তির প্রতি আহ্বান করা হয়। তাই আবশ্যক হলো গ্রাম বা ছোট ছোট শহর থেকে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভালো পরিবেশে অল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা করা। যদি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের সীমানার ভেতরে ছাত্রদের জন্য আর মহিলা মাদরাসায় ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হোস্টেলের ব্যবস্থা করে, তাহলে তা অত্যন্ত কার্যকরি পদক্ষেপ হতে পারে। এরদ্বারা আমরা সমাজের অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবো। আর যে সব ছেলেরা জাগতিক শিক্ষা অর্জন করে ভবিষ্যতে সরকারী চাকুরী করবে বা রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মচারী হবে তারা ইসলামি চেন্তা-চেতনার সঙ্গে নিজেদের কাজ পরিচালনা করবে।