আমাদের যা কিছুই হয় আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:২১ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
আমাদের সবকিছুই হয় আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী এবং সবই হয় তাঁর অনুমতিক্রমে ও জ্ঞাতসারে।
তাঁর ইচ্ছা ও জানার বাইরে বান্দা কিছুই করতে পারে না। আমাদের যদি এই বিশ্বাস থাকে তাহলে অদষ্টৃবাদ ও অদৃষ্টকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আপনার মধ্যে যদি এই দৃঢ় বিশ্বাস থাকে তাহলে আপনি অতি আনন্দে আত্মহারা হবেন না কিংবা কোনো ব্যর্থতায় দিশেহারাও হবেন না।
আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ فَمِنكُمْ كَافِرٌ وَمِنكُم مُّؤْمِنٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের ও কেউ মুমিন। আর
তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সবই দেখেন’ (তাগাবুন ৬৪/২)।
অত্র আয়াতে বিশ্বাসগত দিক দিয়ে মানুষকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হয় সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হিসেবে ‘মুমিন’
হবে, অথবা অবিশ্বাসী হিসেবে ‘কাফের’ হবে। আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী হলে তার সার্বিক জীবন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী
গড়ে উঠবে। আর অবিশ্বাসী হলে তার সার্বিক জীবন শয়তানী খোশ-খেয়াল অনুযায়ী গড়ে উঠবে। পরিণতির দিক দিয়েও এক দল জান্নাতী হবে, এক দল জাহান্নামী হবে।
যেমন আল্লাহ বলেন,
وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لِّتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيهِ فَرِيقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيقٌ فِي السَّعِيرِ
‘এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি, যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন এবং সতর্ক করেন সমাবেশের দিন সম্পর্কে, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। একদল জান্নাতে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
(শূরা ৪২/৭)।
একটি মৌলিক দর্শন : ‘অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের ও কেউ মুমিন’ বলার মধ্যে একটি মৌলিক দর্শনের সন্ধান রয়েছে যে, আল্লাহ কাফের-মুমিন এবং কুফর ও ঈমান সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। কিন্তু বান্দা তার ইচ্ছামতো কুফর বা ঈমানকে বেছে নেয় ও সেভাবে কাজ করে। যেটি আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে,
‘আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সবই দেখেন’। আর সে হিসেবে তার পুরস্কার ও শাস্তি হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ
বলেন,
إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
‘আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।’ (দাহর ৭৬/৩)।
ক্বাযা ও ক্বদর : তবে সবকিছুই হয় ক্বাযা ও ক্বদর তথা আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ অনুযায়ী এবং সবই হয় তাঁর অনুমতিক্রমে ও তাঁর জ্ঞাতসারে। তাঁর ইচ্ছা ও তাঁর জানার বাইরে বান্দা কিছুই করতে পারে না। এই সঠিক বিশ্বাস থাকলে অদষ্টৃ বাদ ও অদৃষ্টকে অস্বীকারের ভ্রান্তি থেকে মানুষ নিরাপদ থাকবে। এই বিশ্বাস থাকলে বান্দা আনন্দে আত্মহারা হবে না বা ব্যর্থতায় দিশেহারা হবে না। যেমন আল্লাহ বলেন,
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي أَنفُسِكُمْ إِلَّا فِي كِتَابٍ مِّن قَبْلِ أَن نَّبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ
لِكَيْلَا تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلَا تَفْرَحُوا بِمَا آتَاكُمْ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
‘পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের ওপর কোনো বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’
‘এটা এজন্যে বলা হয়, যাতে তোমরা যা হারাও তজ্জন্যে দুঃখিত না হও এবং তিনি তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তজ্জন্যে উল্লসিত না হও। আল্লাহ কোন উদ্ধত অহংকারীকে পছন্দ করেন না,’ (হাদীদ ৫৭/২২-২৩)।
তিনি বলেন,
قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللّهُ لَنَا هُوَ مَوْلاَنَا وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ
‘আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছবে না, কিন্তু যা আল্লাহ আমাদের জন্য রেখেছেন; তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’ (তওবা ৯/৫১)।