নামাজে অবহেলার পরিণতি...
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَخَلَفَمِنبَعْدِهِمْخَلْفٌأَضَاعُواالصَّلَاةَوَاتَّبَعُواالشَّهَوَاتِفَسَوْفَيَلْقَوْنَغَيًّا
‘অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামাজ নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অন্তরবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।’
إِلَّامَنتَابَوَآمَنَوَعَمِلَصَالِحًافَأُوْلَئِكَيَدْخُلُونَالْجَنَّةَوَلَايُظْلَمُونَشَيْئًا
‘কিন্তু তারাব্যতীত, যারা তওবা করেছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের ওপর কোন জুলুম করা হবে না।’(সূরা: মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নামাজ নষ্ট করার অর্থ এই নয় যে, নামাজ সম্পূর্ণভাবে তরক করেছে। এর অর্থ হলো সময় চলে যাওযার পর আদায় করা। হজরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব (রা.) বলেন, এর অর্থ পরবর্তী নামাজের সময় এসে পড়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা।
যে লোক নামাজকে এভাবে বিলম্বিত করে বা অবহেলা করে তওবা না করেই মারা যায়, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের‘গায়’নামক কূপে নিক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। এটা জাহান্নামের অত্যন্ত নীচ ও নোংরা একটি গহব্বরেরনাম।
সূরামাউনের ৪, ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, সেই সব নামাজীদের জন্য‘ওয়াইল’যারা নিজেদের নামাজের ব্যাপারে অবহেলা বা শিথিলতা করে। অর্থাৎ আলসেমী বা গড়িমসি করে। হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, এই অবহেলা বা শিথিলতা কী? তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্বিত করা। তাদেরকে নামাজী বলা হয়েছে। কিন্তু উদাসীনতা ও বিলম্বের কারণে তাদের‘ওয়াইল’এর হুমকি দেয়া হয়েছে। ওয়াইল অর্থ আযাবের কঠোরতা।
কারো কারো মতে ওয়াইল হচ্ছে জাহান্নামের এমন একটি স্হান, যেখানে পৃথিবীর সমস্ত পাহাড়, পর্বত ঢেলে দিলেও তা তীব্র দহনে গলেযাবে। তওবা বা অনুশোচনা সহকারে ক্ষমা না চাইলে নামাজ কাযা ও আলসেমী কারীদের জন্য এই স্হান নির্ধারিত থাকবে।
রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে বলেন,
يَاأَيُّهَاالَّذِينَآمَنُوالَاتُلْهِكُمْأَمْوَالُكُمْوَلَاأَوْلَادُكُمْعَنذِكْرِاللَّهِوَمَنيَفْعَلْذَلِكَفَأُوْلَئِكَهُمُالْخَاسِرُونَ
‘মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সূরা: মুনাফিকূন, আয়াত: ৯)।
এ আয়াতে‘আল্লাহর স্মরণ’বলতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে বুঝানো হয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য, খেত-খামার এবং পরিবার-পরিজনের প্রয়োজন মিটানোর ব্যস্ততার দরুন যথাসময়ে নামাজ আদায় করে না, সে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, হাশরেরদিন প্রথমেই বান্দার আমলসমূহের মধ্যে নামাজের হিসেব নেয়া হবে। নামাজ সঠিকভাবে আদায় করে থাকলে পরিত্রাণ পাবে নচেৎ ব্যর্থতা অবধারিত। (তিবরানী)।
মহান আল্লাহ অপরাধীদের সম্পর্কে বলবেন,
مَاسَلَكَكُمْفِيسَقَرَ
‘বলবেঃ তোমাদেরকে কীসে জাহান্নামে নীত করেছে?’
قَالُوالَمْنَكُمِنَالْمُصَلِّينَ
‘তারা বলবেঃ আমরা নামাজ পড়তাম না,’
وَلَمْنَكُنُطْعِمُالْمِسْكِينَ
‘অভাবগ্রস্তকে আহার্য্য দিতামনা,’
وَكُنَّانَخُوضُمَعَالْخَائِضِينَ
‘আমরা সমালোচকদের সঙ্গে সমালোচনা করতাম।
وَكُنَّانُكَذِّبُبِيَوْمِالدِّينِ
‘এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।’
حَتَّىأَتَانَاالْيَقِينُ
‘আমাদের মৃত্যুপর্যন্ত।’
فَمَاتَنفَعُهُمْشَفَاعَةُالشَّافِعِينَ
‘অতএব, সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকারে আসবে না।’ (সূরা: মুদাস্সির, আয়াত: ৪২-৪৮)।
রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নামাজ ত্যাগ করা।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিযী)।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির আসরের নামাজ ছুটে গেল, তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।’
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল, সে আল্লাহর জিম্মাদারী থেকে বের হয়ে পড়ল।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বলবে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবংনামাজ ও জাকাত না আদায় করবে। যখন এগুলো করবে, তখন ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া তাদের জান-মাল আমার হাতে নিরাপদ। তাদেরকে আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে। (বুখারি ও মুসলিম)।
নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করবে, বিচার দিবসে তার জন্য নামাজ নূর হবে এবং মুক্তির উপায় হবে। আর যে ঠিকমত নামাজ আদায় করবে না, তারজন্য নামাজ নূর ও নাজাতের উসীলা হবে না। হাশরের দিন তার ফেরাউন, কারুণ, হামান ও উবাই বিন খালফের সঙ্গে হাশর হবে। (আহমাদ, তিবরানী)।
হাদিসটির ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কোনো কোনো আলেম বলেন, বর্ণিত চারজন কাফেরের সঙ্গে বেনামাজির হাশর হওয়ার কারণ এই যে, নামাজ ছাড়ার কারণ চার প্রকার হয়ে থাকে। অর্থোপার্জন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও চাকরি এবংব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ততার কারণে। সম্পদের হেফাযতের কারণে হলে কারুণের সঙ্গে, প্রশাসনিক ব্যস্ততার কারণ হলে হামানের সঙ্গে, রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণ হলে ফেরাউনের সঙ্গে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ততার কারণে নামাজ বর্জন হলে উবাই বিন খালফের সঙ্গে হাশর হবে।
হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘নামাজ ত্যাগকারি ইসলাম প্রদত্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে না।’
ইমাম আহমাদ হজরত মু‘আজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়, তার ওপর আল্লাহপাকের কোনো দায়িত্ব থাকেনা।’ (আহমাদ)।
হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘এক লোক রাসূল (সা.) এর নিকট হাজির হয়ে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! (সা.) ইসলামের কোন কাজ আল্লাহর নিকট বেশি পছন্দনীয়? তিনি বললেন, সময়মত নামাজ আদায় করা। যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করল তার কোনো ধর্ম নেই। নামাজ ইসলামের স্তম্ভ।’ (বায়হাকি)।
হজরত ওমর (রা.) বিশ্বাসঘাতকের আঘাতে আহত হলেন, তখন তাকে বলা হলো, ‘আমিনুলমুমিনীন! নামাজের সময় হয়ে গেছে।’ তিনি বললেন,‘হ্য আমি নামাজ আদায় করব। যে নামাজ ছেড়ে দেয় তার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।’ অতঃপর তিনি নামাজ আদায় করলেন অথচ তার ক্ষতস্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছিল।
হজরত আব্দুল্লাহ বিন শাকীক (রহ.) বলেন, সাহাবিগণ নামাজ ছাড়া আর কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরি মনে করতেন না। হজরত আলী (রা.)-কে কোনো এক বেনামাজি মহিলা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে তো কাফের।’ (তিরমিযী)।
হজরত ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, যে নামাজ পড়ে না, তার দীন বলতে কিছুই নেই। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে যে এক ওয়াক্ত নামাজও ছেড়ে দেয়, আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি তার প্রতি ক্রদ্ধ থাকেন। (মুহাম্মদ বিন নাসর)।
রাসূল (সা:) বলেন: যে ব্যক্তি বেনামাযীরুপে আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে’আল্লাহ তার অন্যান্য নেক আমলগুলো কবুল করবেন না (তিবরানী)।
ইমামইবনে হাযম (রহ.) বলেন, ‘শিরকের পর সবচেয়ে জঘন্য কবীরা গুনাহ হচ্ছে সময়মত নামাজ না পড়া ও অন্যায়ভাবে মুমিনকে হত্যা করা। হজরত ইব্রাহিম নখয়ী (রহ.) বলেন, ‘যে নামাজকে ছেড়ে দিল,সে কুফরি করল।
রাসূল (সা,) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ওযর (শরয়ীকারণ) ব্যতিত দু’ওয়াক্তের নামাজ একত্রে পড়ে, সে এক মস্তবড় কবীরা গুনাহসমূহের মধ্য হতে একটিতে প্রবেশ করল। (হাকেম)।
সন্তান-সন্ততিকে কখন নামাজের নির্দেশ দিবে?
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, বাচ্ছা যখন সাত বছরে পর্দাপন করে তখন তাকে নামাজ পড়তে আদেশ কর। আর দশ বছরে পর্দাপন করলে নামাজ না পড়ার দরুন প্রহার কর। (আবু দাউদ)।
অন্য বর্ণনায়আছে; তারবিছানা পৃথক করে দাও।
ইমাম আবু সালেম খাত্তাবী (রহ.) বলেন, এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, বাচ্চা নির্ধারিত বয়সে পৌঁছে নামাজ না পড়লে, তাজন্য শাস্তির ব্যবস্হা করতে হবে।