সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যে অভিযোগে মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কার্ট পরা নিষিদ্ধ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:১৩ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার একটি আদালত নির্দেশনা জারি করেছে যে, স্কার্ট পরে স্কুলে যেতে কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীকে বাধ্য করতে পারবে না কর্তৃপক্ষ। মেয়েদের জন্য স্কুলে নির্ধারিত পোশাক পরতে বাধ্য করা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অসাংবিধানিক। আদালত এটাকে লিঙ্গ বৈষম্য ও সমানাধিকার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছেন।

 

আমেরিকার সংবিধানে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলা রয়েছে। সে হিসেবে কোনো মেয়েকে স্কুলে বাধ্যতামূলক স্কার্ট পরে যেতে বাধ্য করা লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কাজ এবং আইনগতভাবে তা অসাংবিধানিকও বটে।

 

আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনার উইলমিংটনের ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত চার্টার ডে স্কুলে মেয়েদের স্কার্ট পরায় কড়া নিয়ম-কানুন নিয়েই আদালতের এ নির্দেশের সূত্রপাত হয়।

নর্থ ক্যারোলিনার এ স্কুলে কিন্ডারগার্টেন থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। মেয়েদের জন্য সাদা বা গাঢ় নীল রঙের শার্টের সঙ্গে খাকি প্যান্ট পরে স্কুলে আসতে হয়। কিন্তু মেয়েদের পরতে হয় স্কার্ট। এ নিয়মের একটু ব্যতিক্রম হলেই মেয়ে শিক্ষার্থীদের শাস্তি পেতে হয়।

মেয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ২০১৬ সালে এ নিয়মের বিরুদ্ধে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নর্থ ক্যারোলিনার একটি আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। তারা তাদের বক্তব্যে স্কার্ট পরায় যে সমস্যা ও আপত্তিগুলো তুলে ধরেন, তাহলো-
- কনকনে শীতের সময় স্কার্ট পরে স্কুলে যেতে প্রচণ্ড কষ্ট হয় মেয়েদের। ফলে তারা ক্লাসে পা জড়ো করে বসতে হয়।
- ইচ্ছে ও সুযোগ থাকার পরও স্কার্ট পরার কারণে মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে না।
- যদিও কেউ খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে অনেক সময় অসাবধানতাবশত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাদের অন্তর্বাস বেরিয়ে পড়ে। ফলে ছেলেদের দ্বারা তারা উত্ত্যক্তের স্বীকার হয়।
- এ অসাবধানতার জন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছেও বকুনি খেতে হয়।

এ ধরনের ঘটনায় তারা ঠিকভাবে পড়াশোনায়ও মনোযোগী হতে পারে না উল্লেখ করে অভিভাবকরা আদালতে এর সমাধানকল্পে অভিযোগ দায়ের করে।

গত তিন বছর ধরে মামলার শুনানি চলার পর চলতি সপ্তাহে অভিযোগকারী তিন অভিভাবকের পক্ষেই রায় দেন নর্থ ক্যারোলিনার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টের বিচারপতি ম্যালকম হাওয়ার্ড।

যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখান যে, আদালতের এই সিদ্ধান্তে স্কুলের ঐতিহ্য ও নিয়ম-শৃঙ্খলায় প্রভাব ফেলবে। কিন্তু তাতে সায় দেননি বিচারপতি ম্যালকম হাওয়ার্ড।

 

অন্য দিকে অভিযোগকারীরা আদালতের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা আরো জানায় যে, আফসোসের বিষয় হলো যে, মেয়েরা চাইলে স্কার্ট-এর পরিবর্তে পা ঢাকতে প্যান্ট পরতে পারে, এ টুকু বুঝাতে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

মেয়েদের জন্য স্কার্টের চেয়ে প্যান্ট কিংবা শালীন যে কোনো পোশাকই উত্তম। এতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা ও খেলাধুলায় অংশ নিতে পারবে। ফলে ছেলেদের টিজিংয়ের যেমন স্বীকার হবে না আবার নিজেদেরকে শালীন পরিবেশে মানিয়ে নিতেও কষ্ট হবে না।

 

নর্থ ক্যারোলিনার আদালতের এ রায় নিঃসন্দেহে স্কুলে মেয়েদের শালীন পোশাক পরতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।