১০০ সিনেপ্লেক্স করবে সরকার
বিনোদন ডেস্ক:
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বুধবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা এবং উত্তরনের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার শুরুতে প্রবন্ধ পাঠ করেন এই আয়োজনের সভাপতি লক্ষন চন্দ্র দেবনাথ। অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রবন্ধটির উপর আলোচনা করেন।
এই সেমিনারে প্রধান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বিশেষ অতিথি হিসিবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী একেএম খালিদ এএমপি, তথ্য মন্ত্রনালয় সচিব আব্দুল মালেক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু, মিয়া আলাউদ্দিন ও জায়েদ খান।
এসময় সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি জানান, সিনেপ্লেক্স নির্মাণ এখন সময়ের চাহিদা। সেই ভাবনা থেকেই সিনেমা হলের সংকট কাটাতে দেশের সব উপজেলায় মাল্টিপারপাস কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে শিগগিরই দেশের ১০০টি উপজেলায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
তিনি আরো বলেন, দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্মিতব্য এই মাল্টিপারপাস কালচারাল কমপ্লেক্সে থাকবে ৪০০ থেকে ৫০০ আসনের একটি মিলনায়তন, একটি মুক্তমঞ্চ ও একটি আধুনিক সিনেপ্লেক্স। এর মাধ্যমে দেশে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য আধুনিক মানের সিনেমা হলের সংকট দূর হবে।
সেমিনারের প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে প্রতি বছর ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালিত হচ্ছে। নতুন এসএমই নীতিমালা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ সুযোগ নিতে পারেন। আর সিনেমা হল আধুনিক করতে ও সিনেমায় অর্থলগ্নিসহ চলচ্চিত্র শিল্পের সকল সমস্যা দূর করতে তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় যৌথভাবে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করতে পারে। সেক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এ সময় খোরশেদ আলম খসরু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খসড়া কপিরাইট আইনের ১৫ (ঘ) ধারার প্রথম লাইন পড়লে মনে হয় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল। সেই ঘোষণার কপিরাইট মূলত বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই খসড়া আইনে যেভাবে লেখা হয়েছে সেটি দেখলে মনে হয় সেই কপিরাইট সত্ত্ব বঙ্গবন্ধুকেও দেয়া হয়েছে। আবার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকেও দেয়া হয়েছে। ধারাটি পড়লে আপাত দৃষ্টিতে এমনই মনে হয়। কপিরাইট কমিটির সংশোধনী মিটিং-এ বার বার বলা হলেও ওই ধারাটি এখন অবধি ওই অবস্থাতে রয়েছে।
খোরশেদ আলম খসরু আরো বলেন, কপিরাইট রেজিস্টার চলচ্চিত্রের কপিরাইট সমিতিরও নিবন্ধন দিয়েছেন। কিন্তু সেই সমিতিতে চলচ্চিত্রের কোনো মানুষ নেই। বিষয়টির দিকে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এদিকে কপিরাইট অফিসের ওয়েব সাইটে সংরক্ষিত খসড়া যে আইনটি রয়েছে, সেই আইনটিতেও এই ধারাটি এভাবেই লেখা আছে। যাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, যিনি বক্তৃতা দিয়েছেন এবং যার পক্ষে বিবৃতিটা দেয়া হয়েছে। তারা দুজনেই ওই কপি রাইটের মালিক হবেন।
সেমিনারে জায়েদ খান বলেন, আমরা যখন দেখলাম সিনেমা ডিজিটাল হওয়া শুরুর পর থেকেই চলচ্চিত্র অবনতির দিকে যাওয়া শুরু করে। এরপরে একটি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান আসলো জাজ মাল্টিমিডিয়া নামে। যিনি এসেই হলগুলো দখল করতে শুরু করলো মেশিন দেয়ার নামে। রিলিজ থেকে শুরু করে একটি ছবির যাবতীয় কিছু নিয়ন্ত্রন করা শুরু করলো, মামলা করে প্রদর্শক সমিতির নির্বাচন বন্ধ করলো এবং এফডিসির বাহিরে একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করলো। আর তারা প্রতিটি সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম শুরু করলেন। আবার সম্প্রতি প্রদর্শক সমিতি হল বাঁচানোর নাম করে সংস্কৃতিকে ধ্বংশ করার একটি পায়তারা করলো। রাতের অন্ধকারে বিদেশি ছবি এনে সেন্সর করে জাজের সহযোগিতায় দেশের ছবি মুক্তিতে বাধাগ্রস্থ করলো। আমি অনেক প্রযোজককে দেখেছি রাতে অন্ধকারে কেঁদে চলে গেছে আর সিনেমা বানাতে আসেনি। এই যে ষড়যন্ত্র আমার সংস্কৃতিকে ধ্বংশ করার সেটা আমরা কোনদিন হতে দেব না।
জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথের সভাপতিত্বে এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্মাতা মতিন রহমান। আরো আলোচনা করেন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, চলচ্চিত্র প্রদর্শক মিয়া আলাউদ্দিন সহ অনেকে।