কে এই সিকিউরিটি গার্ড, দেখে কী চেনা যায়?
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৫৫ এএম, ৫ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার
ভাগ্যের সব ধরণের খেলায় খেলেন ওপরওয়ালা। কার ভাগ্যে কী লেখা আছে, কখন কী হবে সব কিছুর হিসেব কষে রেখেছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনে আজ আপনি রাজা'তো কাল আপনি ভিখারী, মোটামুটি জীবনটা এমনই। এই জীবনটা হল হাতের পাঁচ আঙুলের মত। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কখনো উত্থান আবার কখনো পতন আসবেই। দিনের আলোর মতই খুব দ্রুতই যেন পাল্টে যায় সব ধরণের দৃশ্যপট।
ঠিক এমনই কাহিনী পাল্টে গেছে সাভি সাধুর জীবন। ছবি দেখে যারা চেনেননি তাদের অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, কে এই সাভি সাধু? মূলত ছবির লোকটিই সাভি সাধু। যিনি খুব বেশিদিন নয়, কিছুদিন আগেও বলিউডের সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। সে হিসেবে একজন বলিউড অভিনেতা তিনি। আর সেই ছবির লোকটি এখন একজন নিতান্তই সিকিউরিটি গার্ড।
বলিউডের অন্যান্য আরো অনেকের মতই মডেলিং দিয়ে শুরু হয়েছিল সাধুর ক্যারিয়ার। একসময় বেশ দাপটের সঙ্গেও কাজ করেছেন থিয়েটারে। সেখান থেকে একদিন সুযোগ আসে সিনেমায় কাজ করার। কিন্তু কে জানে ওপরওয়ালা তার ভাগ্যে অন্য কিছু লিখে রেখেছেন। একসময় তিনি স্বনামধন্য নির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে মিলে সিনেমায় কাজ করেছেন। তার অধীনেই প্রথম ‘পাঁচ’ সিনেমাটি সাইন করেন সাভি সাধু।
এদিকে, তার স্কুলজীবন কেটেছে লখনৌতে। সেখান থেকে চন্ড্রিগড়ে আসেন গ্র্যাজুয়েশনের জন্য। তখনই প্রথম মডেলিংয়ের প্রস্তাব পান এই সিকিউরিটি গার্ড। পরে লখনৌতে ফিরে আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। তখনই থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন সাভি সাধু।
তবে ওই সময় মুম্বাই আসা-যাওয়া তার জন্য বেশ সহজই ছিল। কারণ, তার ভাই চাকরি করতেন এয়ার ইন্ডিয়াতে। সেই সুবাদে নিয়মিতই প্রযোজক-পরিচালকদের ডাকে সাড়া দিতে পারতেন তিনি। তখনই আলাপ হয় অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে। সে আলাপে ব্যাটে বলে এক হয়ে যায় তার ক্যারিয়ার জীবন। আর সে থেকে সুযোগ হয় বড় পর্দায় কাজ করার।
বড় পর্দায় দুই একটা কাজ অক্ষয় কুমারের সঙ্গে করার সুযোগ হয় সাভি সাধুর। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘গুলাল’, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ কিংবা ‘পাতিয়ালা হাউজ’-এর মতো সিনেমা। এতে সহ-অভিনেতা হিসেবে অক্ষয় কুমার ছাড়াও ছিলেন ঋষি কাপুর, ডিম্পল কাপাডিয়াদের মত স্টাররা। সে সঙ্গে সুভাস ঘাই কিংবা যশ চোপড়াদের পেয়েছেন পরিচালক হিসেবে। এতে বড় পর্দায় প্রশংসাও কুড়িয়েছিলেন সাভি সাধু। তবে স্টারডামের স্বাদ নিয়েও আজ তিনি ভাগ্যের লীলা খেলায় পৌঁছে গেছেন নিজ স্থান থেকে অনেক নিচে। একেবারে সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বটা যেন জুটল তার জীবনে।
এখন প্রশ্ন কী করে এমন হল সাধুর জীবন? এর মাঝে নাকি তার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়। স্ত্রীকে হারিয়েছেন, সঙ্গে হারিয়েছেন বাবা-মাকেও। তাদের হারানোর শোকে শরীর ভেঙে গেছে অনেকটাই। এখন তিনি পুরোপুরিই নি:সঙ্গ, পরিবারের একা একজন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে এমন কঠিন জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাধু বলেছেন, স্ত্রীকে হারানোর শোকটা আমি আর কাটিয়ে উঠতে পারিনি। সব হারিয়ে তাই বেছে নিয়েছি নিভৃত এক মানবেতর জীবন।
বর্তমানে সাধু একটি হাউজিং সোস্যাইটিতে ১২ ঘণ্টার শিফটে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এদিকে তার এহেন খবরে শুভকামনা জানিয়েছেন অনুরাগ কাশ্যপ। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, অনেক অভিনেতাই আছেন, যাদের হাতে কোনো কাজ নেই। অভিনেতা হিসেবে সাভিকে আমি সম্মান করি। তিনবার আমি ওকে আমি আমার ছবিতে কাস্ট করেছি। ও যে জীবনটা বেছে নিয়েছে, তার প্রতিও আমার যথেষ্ট সম্মান রয়েছে। কোনো কাজ না থাকার চেয়ে কিছু একটা করে বেঁচে থাকা ভাল। কোনো কাজই পৃথিবীতে ছোট নয়। মানুষের আসল পরিচয় কাজ করে বেঁচে থাকা। কারো অধিনে না থাকা। সাভি সেটাই করছেন। আর এই কারণে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেলো।
অপরদিকে, ইন্ডাস্ট্রিতে যেন তিনি আবারো ফিরে আসতে পারেন তারই আশ্বাস দিয়েছেন সময়ের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেতা রাজকুমার রাও। তিনি এক টুইটে লিখেছেন, সাভি সিধুর গল্পটা বেশ অনুপ্রেরণাদায়ক। সিনেমায় আপনার কাজ সব সময়ই আমার পছন্দ। শুধু আমার নয়, আপনার কাজ এখনো বেঁচে আছে মানুষের হৃদয়ে। অবশ্যই সিনেমায় আবারো কাস্টিং করেন। সিনেমায় আমার যেসব বন্ধু আছেন তাদের সঙ্গে আপনার ব্যাপারে শিগগির আলাপ করবো।
তবে, বাস্তব জীবনে সাভির সবচেয়ে বড় উপকারটা করেছেন সুপারস্টার মিখা সিং। তিনি কাজের ব্যবস্থা করেছেন সাভিকে। তার কারণে এখন ভূষণ প্যাটেলের নির্মানে ‘আদাত’ ছবিতে দেখা যাবে সাভিকে। এর মাধ্যমে আবারো সিনেমায় আসছেন সাভি সাধু। আর এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকবেন বিপাশা বসু ও তার স্বামী করণ সিং গ্রোভার।