বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতের পর্যটকবাহী জাহাজ আর ভি বেঙ্গল গঙ্গা নারায়ণগঞ্জে

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:২৮ এএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ভারতের কলকাতা থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ আর ভি বেঙ্গল গঙ্গা নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছেছে। শুক্রবার বেলা এগারোটায় চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা এই জাহাজটি বিকেল সাড়ে তিনটায় বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের ভিআইপি জেটিতে এসে নোঙর করে। 

 

এসময় নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক গুলজার আলী, উপ পরিচালক মোঃ শহীদুল্লাহসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বিদেশি অতিথিদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। 

জানা গেছে, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি ও অষ্ট্রেলিয়ার ছয়জন পর্যটকসহ ঊনিশজন যাত্রী ও ত্রিশজন ক্রু নিয়ে জাহাজটি নারায়ণগঞ্জে এসে পৌঁছায়। এদের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া দীপাক বড়–য়া, ইন্ডিয়া ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (আই ডব্লিউ আই) সাবেক চেয়ারম্যান নোটন গুহ বিশ্বাস এবং আর ভি বেঙ্গল গঙ্গার চেয়ারম্যান রাজ সিং সহ বেশ কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীও রয়েছেন। গত ২৯ মার্চ দুপুর সাড়ে বারোটায় ভারতের কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। 

সুন্দরবন হয়ে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় খুলনার আংটিহারা বন্দরে জাহাজটি কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর মংলা, বরিশাল ও চাঁদপুর হয়ে নারায়ণগঞ্জে এসে নোঙর করে। 

যাত্রাপথে জাহাজটির তত্ত্বাবধান ও পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ের দায়িত্বে রয়েছে গালফ ওরিয়েন্ট সী ওয়েইজ লিমিটেড এবং জার্ণি ওয়ালেট লিমিটেড নামের দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

ভারত থেকে বাংলাদেশে নৌ-পথের এই ভ্রমনকে আনন্দদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমন হিসেবে উল্লেখ করে বিদেশী পর্যটকরা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তাদেরকে মুগ্ধ করেছে। এই ভ্রমন তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরোত্তর সাফল্যও কামনা করেন তারা। 

আর ভি বেঙ্গল গঙ্গার চেয়ারম্যান রাজ সিং জানান, স্বাধীনতার পূর্বে ভারতের সাথে বাংলাদেশের নৌ-পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও এক সময় তা বন্ধ হয়ে যায়। 

দীর্ঘ সত্তুর বছর পর পুনরায় এই যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক আরো উন্নত হবে বলে মনে করছেন তিনি। বাংলাদেশের মানুষের আথিতেয়তায়ও মুগ্ধ তিনি। 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপদেষ্টা দীপাক বড়–য়া জানান, তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতের পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশকেও ভালবাসেন। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রয়েছে। বাংলাদেশ আরো উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদী। 

সহযোগী বেসরকারি প্রতিষ্ঠন জার্ণি ওয়ালেট লিমিটেড এর সিইও জিহাদ বারী বলেন, নৌ-পথে দেশের বিভিন্ন স্থানের নদীবন্দর গুলোতে জেটি না থাকায় বিদেশী পর্যটকদের নামানো সম্ভব হয় নি। যার কারনে তারা অনেক দর্শনীয় পর্যটন স্থানের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেননি। সবগুলো বন্দরকে আরো আধুনিকায়ন করে উন্নতমানের জেটি স্থাপনের দাবী জানান বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মোঃ গুলজার আলী জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের এই জাহাজটি বাংলাদেশ সফরে এসেছে। পর্যায়ক্রমে বানিজ্যিকভাবে পর্যটনের জাহাজ ভারতে আসা যাওয়া করবে। 

দেশের দশটি মন্ত্রনালয় এর সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। তিনি জানান, দেশে বর্তমানে পঁয়ত্রিশটি নদীবন্দর রয়েছে। সরকার সবগুলো বন্দরকে আধুনিকায়ন করেছে। পর্যায়ংক্রমে আরো উন্নয়ন করা হবে। বিদেশী যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিভিন্ন ব্যবস্থার কথাও জানান তিনি। 

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মোঃ গুলজার আলী আরো জানান, ভারত থেকে আসা পর্যটকবাহি জাহাজ আর ভি বেঙ্গল গঙ্গা শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরে অবস্থান করবে। 

শনিবার সকালে তারা সোনারগাঁয়ের জাদুঘর, বড় সরদার বাড়ি, পানামনগরী, জামদানী পল্লীসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করবেন। বিকেলে পাগলা নৌবাহিনীর মেরী এন্ডারসন ভিআইপি জেটির উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। 

সেখানে বিদেশী পর্যটকদেরকে স্বাগত জানাবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং নৌ-পরিবহনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। আগামী ৮ এপ্রিল সকাল আটটায় সেখান থেকে জাহাজটি পুণরায় ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।