সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দ্বীনের দাওয়াত প্রসঙ্গে বিশ্বনবির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:১৪ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৯ রোববার

‘নিশ্চয় ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা।’ আল্লাহ তাআলা ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীনকেই জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেন না। আর এ ইসলাম মানেই হলো আত্মসমর্পণ।

তাই আল্লাহ তাআলা মানুষের কাছ থেকে যে দ্বীন গ্রহণ করেন, তা শুধু মস্তিষ্ক দ্বারা কোনো কিছু চিন্তা করা নয় এবং মন দ্বারা কোনো কিছুকে সত্য বলে মানাও নয় বরং তা হচ্ছে মস্তিষ্কের এ চিন্তা ও মনের স্বীকৃতিকে বাস্তবে রূপদান করা।

মানুষ দুনিয়ার জীবনের সব কাজে আল্লাহর বিধানকে কর্যকর করবে, নির্বিঘ্নে তাঁর আইন নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করবে এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা অনুসরণ করবে, এটাই হলো ইসলাম বা আত্মসমর্পণ।

আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আহলে কিতাবের অনুসারীদের উদ্দেশ্যে ইসলামের প্রতি তাদের আনুগত্য সম্পর্কে তাঁর ও উম্মতের বিষয়ে সুস্পষ্ট মনোভাব তুলে ধরার নির্দেশ দিয়ে বলেন-

Quran
আয়াতের অনুবাদ
Quran

আয়াতের পরিচয় ও নাজিলের কারণ
এ সুরার ১৯ নং আয়াতে প্রিয় নবি আহলে কিতাবের অনুসারীদের কাছে তাঁর ও উম্মতে মুহাম্মাদির ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। আর আহলে কিতাবের অনুসারীদের মধ্য থেকে যারা ইসলামে প্রবেশ করবে তারা সত্য ও ন্যয়ের পথ লাভ করবে বলে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন।

এ কথা ঘোষণা দেন যে, ‘আমি ও আমার অনুসারীরা তো সেই নির্ভেজাল ইসলামের স্বীকৃতি দিয়েছি, যেটি আল্লাহর প্রকৃত দ্বীন ও জীবন বিধান।’

আর আহলে কিতাবের অনুসারীদের কাছে প্রিয় নবির জিজ্ঞাসা হলো এমন যে, ‘তোমরা বলো, তোমরা ও তোমাদের পূর্বপুরুষ দ্বীনের মধ্যে যে পরিবর্তন করেছো তা বাদ দিয়ে আল্লাহর প্রকৃত দ্বীন ও জীবন বিধানের দিকে কি ফিরে আসবে?

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ জিজ্ঞাসা শুধু আহলে কিতাবের অনুসারীদের প্রতিই ছিল না বরং তা আরবের মুশরিকদের কাছেও ছিল। তারা আহলে কিতাবের অনুসারীদের তুলনায় সাধারণভাবে নিরক্ষর ছিল।

আল্লাহ তাআলা সে সময়কার আহলে কিতাবের অনুসারীদের আচরণকে জনসম্মুখে তুলে ধরেন। আহলে কিতাবের অনুসারীরা নিজেদের আল্লাহর দ্বীনের অনুসারী বলে দাবি করতো।

অথচ যখনই তাদেরকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফয়সালার আহ্বান জানানো হতো, তখনই তাদের একদল তা প্রত্যাখ্যান করতো। যা ছিল তাদের দাবির পরিপন্থী বিষয়।

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা ঘোষণার নির্দেশ দেন যে, 
‘হে রাসুল! যদি কাফেররা আপনার সঙ্গে দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা নিয়ে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয় তবে আপনি তাদের বলে দিন, আমি ও আমার অনুসারীরা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমরা তাঁর বাধ্যগত।
আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে সেসব আহলে কিতাবের অনুসারী ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের এবং নিরক্ষরদের তথা আরবের মুশরিকদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় না জড়িয়ে শুধু বলুন, তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ (আত্মসমর্পণ) করেছ?
যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে তারা পথভ্রষ্টতা থেকে হেদায়েত পাবে। আর যদি তারা ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনার দায়িত্ব হলো শুধু দ্বীনের আহ্বান তথা রেসালাতের বাণী প্রচার করা। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার সব কাজ দেখেন এবং এর প্রতিফল দান করেন।

মুমিন মুসলমানের উচিত জীবনের প্রতিটি বিষয়ে দ্বীনের ওপর অটল ও অবিচল থাকা। ইসলামের বিষয়ে কারো সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় না জড়িয়ে ইসলামের সৌন্দর্য ও বিধানগুলো সবার কাছে তুলে ধরা। যারা ইসলামের এ আহ্বান গ্রহণ করবে তারাই হবে সফলকাম।

উল্লেখ্য যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধ তথা জিহাদের আয়াত নাজিল হওয়ার আগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি নির্দেশ ছিলো এমন যে, ইসলাম নিয়ে কারো সঙ্গে কোনো বাক-বিতণ্ডার প্রয়োজন নেই। আপনার কাজ হলো শুধু দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয়ার মাধ্যমে জীবনের সব কাজ ইসলামের আলোকে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।