আবাহনীকে সরিয়ে এককভাবে শীর্ষে রূপগঞ্জ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৫:৩৫ পিএম, ৭ এপ্রিল ২০১৯ রোববার
দিনের খেলা তখনো বাকি প্রায় ৩৪ ওভার। দুই দল পুরো পঞ্চাশ ওভার খেললে ম্যাচ শেষ হতে লাগতো আরও ঘণ্টাদুয়েক সময়। কিন্তু অত দেরি করার সময় যেনো ছিলো না লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের। দুপুর গড়াতেই ম্যাচ শেষ করে উঠে গিয়েছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
রোববার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মাঝদুপুরে আবাহনী লিমিটেডের খণ্ডকালীন লেগস্পিনার সাব্বির রহমানের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিটি মিডঅফ ফিল্ডারের ডানপাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দেন শাহরিয়ার নাফীস। সে সঙ্গেই নিশ্চিত হয়ে যায় রূপগঞ্জের জয় এবং পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান।
শুভাশিষ রয় এবং মোহাম্মদ শহীদের বোলিং তোপে মাত্র ১২২ রানেই অলআউট হয় আবাহনী লিমিটেড। তখনো তাদের ইনিংসে বাকি ছিলো ১০.৫ ওভারে। জবাবে নাফীস যখন উইনিং শটটি নেন, তখনো রূপগঞ্জের ইনিংসে বাকি ২৩.১ ওভার। ৬ উইকেটের দুর্দান্ত জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে রূপগঞ্জ।
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের নবম রাউন্ড শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিলো আবাহনী লিমিটেড। তাদের সমান ৮ জয় থাকলেও নেট রানরেটের কারণে দ্বিতীয়তে থেকে যায় লিজেন্ডস অব রুপগঞ্জ। তাই দশম রাউন্ডে এ দুইদলের মুখোমুখি লড়াইটি ছিলো মূলত শীর্ষস্থান দখলের লড়াই।
এমন ম্যাচে রূপগঞ্জের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ১২৩ রানের। যা তাড়া করতে নেমে মেহেদি মারুফের ৮৫ বলে ৫৯, মোহাম্মদ নাইমের ২০ বলে ২২, মুমিনুল হকের ৩৫ বলে ১৭ এবং শাহরিয়ার নাফীসের অপরাজিত ১৪ বলে ১২ রানের ইনিংসে ২৬.৫ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছে রূপগঞ্জ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কোণঠাসা হয়ে পড়ে আবাহনী। আগের ম্যাচে ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জেতানো জহুরুল ইসলাম আজ সাজঘরে ফিরেছেন ইনিংসের প্রথম বলেই। শুভাশিষ রয়ের বলে সরাসরি বোল্ড হয়েছেন চলতি লিগে এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক জহুরুল।
নিজের পরের ওভারে আবাহনী শিবিরে আরেকটি ধাক্কা দেন শুভাশিষ। এবার তিনি উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। ৯ বলে ৬ রান করে ফেরেন শান্ত। অন্যদিকে উইকেট না পেলেও দারুণ মাপা বোলিং করতে থাকেন মোহাম্মদ শহীদ।
পরপর দুই ওভারে দুইটি বাউন্ডারি মেরে পাল্টা আক্রমণের আভাস দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তাকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শুভাশিষ। অযথাই অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে কট বিহাইন্ড হন ২২ বলে ১৪ রান করা সৌম্য।
এতক্ষণ ধরে শুভাশিষের বোলিং তোপ ও উইকেট শিকার দেখছিলেন শহীদ। ইনিংসের ১০ম ওভারে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন তিনিও। ভারতীয় রিক্রুট প্রিয়াঙ্ক ক্রিত পাঞ্চালকে সাজঘরে পাঠান শহীদ। সৌম্যের মতোই অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে উইকেট কিপার জাকের আলীর গ্লাভাসে ক্যাচ দেন পাঞ্চাল।
নিজের পরের ওভারে তথা ইনিংসের ১২তম ওভারে ফের আঘাত হানেন শহীদ। এবার তিনি সাজঘরে পাঠান সাব্বির রহমানকে। শহীদের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড হয়ে যান সাব্বির। ১২ ওভার শেষে আবাহনীর সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২৯ রান।
নিজেদের প্রথম স্পেলে ৭ ওভার করে বোলিং করেন শুভাশিষ এবং শহীদ। এরপর আরও এক ওভার করে বোলিং করেছেন দুজন, তবে উইকেট নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষে শুভাশিষের বোলিং ফিগার ৮-০-৩৭-৩ এবং মোহাম্মদ শহীদের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৭-৪-১১-২!
ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এবং মোহাম্মদ মিঠুন। তবে তা ৪৩ রানের বেশি দীর্ঘ হয়নি। শুরু থেকে ভালো খেলতে খেলতে হুট করেই নাবিল সামাদের বলে সফট হ্যান্ডে খেলতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বসেন মিঠুন। সমাপ্তি ঘটে তার ৫৫ বলে ৩৮ রানের ইনিংস।
মাত্র ৭২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে একশর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় আবাহনী। ছয় রান পড়ে সাজঘরে ফেরেন আগের তিন ম্যাচে তিন ফিফটি করা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাঈফউদ্দীন। অফস্পিনিং অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজও সাজঘরে ফিরে যান দলীয় ৮৮ রানের মাথায়।
নবম উইকেটে ২৫ রান যোগ করে দলকে ১০০ পার করান মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। পরপর দুই ওভারে ছক্কা হাঁকান মাশরাফি। খেলেন ১০ বলে ১৫ রানের ইনিংস। মুক্তারকে লং অফের ওপর দিয়ে পর পর দুই ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে ঋষি ধাওয়ানের বলে মিড অনে ৩০ গজের মাথায় ক্যাচে পরিণত হন মাশরাফি।
আবাহনীর ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে রানআউটের মধ্য দিয়ে। রিশি ধাওয়ানের ফুল লেন্থ বলে সোজা ব্যাটে জেন্টল পুশ করেন মোসাদ্দেক। কিন্তু নন স্ট্রাইকে থাকা নাজমুল ইসলাম অপু ছিলেন পপিং ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে। ওদিকে বোলার রিশির হাতে লেগে বল আঘাত হানে স্টাম্পে। ফলে ১০.৫ ওভার বাকি থাকতেই ১২২ রানে থেমে যায় আবাহনীর ইনিংস।
মাঠ ছাড়ার সময় শেষ রানআউটের ব্যাপারে একে-অপরকে দোষারোপ করতে থাকেন মোসাদ্দেক ও নাজমুল অপু। এক প্রান্ত আগলে রাখা ইনিংসে ৮৮ বলে ৪০ রান করেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক সৈকত। রূপগঞ্জের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শুভাশিষ। এছাড়া শহীদ ২ এবং নাবিল সামাদ ১০ ওভারে ৪ মেইডেনের সহায়তায় মাত্র ১৫ রান খরচায় নেন ২টি উইকেট।