আলেমগণের মতভেদে জনসাধারণের করণীয়
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৩৯ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার
আবু আখতার : আলেমগণের পারস্পরিক মতভেদ দেখে জেনারেল শিক্ষিত মুসলমানদের অনেকে তাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে নিজেদের কুপ্রবৃত্তির চাহিদামাফিক চলতে থাকে। আবার অনেকে এসব মতভেদ দেখে আলেমগণের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে। এর কোনটিই ইসলাম সমর্থন করে না।
আসলে ইসলামের মৌলিক যেসব বিষয় কুরআন-সুন্নাহতে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হয়েছে এসব বিষয়ে হকপন্থী আলেমগণের কোন মতভেদ নেই। এসব বিষয়ে তারা সকলে একমত। এক্ষেত্রে মতভেদের কোন সুযোগও নেই। এসব বিষয়ে কেউ ভিন্নমত পোষণ করলে সে আলেম তো দূরের কথা মুসলমান হিসবেও গণ্য হতে পারে না। কিন্তু ইসলামের শাখাগত যেসব বিষয় কুরআন সুন্নাহতে সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায় না, বরং ইজতিহাদের মাধ্যমে কুরআন সুন্নাহর আলোকে বের করতে হয় এসব বিষয়েই সাধারণত মতভেদ দেখা যায়। আর ইজতিহাদী মতভেদ ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দণীয় নয়। তবে সবার জন্য ইজতিহাদ বৈধ নয়। ইজতিহাদের জন্য কুরআন সুন্নাহ বিষয়ে বিশেষ পান্ডিত্য অর্জন করা জরুরি। ইজতিহাদের যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদ ইজতিহাদে ভুল করলেও সওয়াব পাবে। হজরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে এ কথা বলতে শুনেছেন, ‘কোন বিচারক ইজতিহাদে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছলে তার জন্য আছে দু’টি পুরস্কার। আর বিচারক ইজতিহাদে ভুল করলে তার জন্যও রয়েছে একটি পুরস্কার।’ (সহিহ বুখারীঃ ৭৩৫২)
এরূপ ইজতিহাদী মতভেদ রাসুলুল্লাহ সা. এর যুগ হতেই চলে আসছে এবং তিনি এরূপ মতভেদের ব্যাপারে মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন ও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, ‘নবী সা. আহযাব যুদ্ধ হতে ফিরার পথে আমাদেরকে বললেন, বনু কুরাইজা এলাকায় পৌঁছার পূর্বে কেউ যেন আসর সালাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের রাস্তাতেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে না পৌঁছে সালাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা সালাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া) নবী সা. এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাঁদের কারোর ব্যাপারে কড়াকড়ি করেননি।’ (সহিহ বুখারীঃ ৯৪৬) সুতরাং যারা ইজতিহাদী মতভেদের কারণে আলেমগণকে দোষারোপ করে তারা কঠিন বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। তাদের এ বিভ্রান্তির কারণে তারা আলেমগণের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে। আর সাধারণ মুসলমানদের আলেমগণের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার অর্থই হলো ইসলাম হতে তাদের দূরে সরে যাওয়া। আর এভাবেই তাদের বিভ্রান্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইজতেহাদী মতভেদের আলোকেই প্রধানত চারটি মাজহাবের উদ্ভব হয়েছে। চার মাজহাবের ইমামগণ দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে সবাই একমত ছিলেন। তাদের পারস্পারিক মতভেদ ছিল শুধুমাত্র ইজতিহাদী মাসআলায়। আর ইজতিহাদী মাস’আলায় সকল মতের পক্ষে দলীল থাকে। তবে কোন মতের দলীল একটু শক্তিশালী এবং কোন মতের দলীল একটু দুর্বল। কিন্তু কোন মাজহাবই দলীল ছাড়া নয়। তাই চার মাজহাবের প্রত্যেকটি দলীলের উপর প্রতিষ্ঠিত। যার সমাজে যে মাজহাব প্রচলিত তার সে মাজহাব অনুযায়ী আমল করা উচিত।
তাই জনসাধারণের কর্তব্য হলো কোন হকপন্থী আলেমের পরামর্শ অনুযায়ী কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চলা এবং ইজতিহাদী মাসআলায় সমাজের অধিকাংশ মানুষ যে মাজহাবে চলে সে মাজহাবের অনুসরণ করা। তবে অন্য মাজহাব সম্পর্কে কুধারণা ও কটূক্তি করা বৈধ নয় এবং বিনা প্রমাণে তাকে বাতিল বলাও উচিত নয়। সর্বোপরি আলিমগণের মাজহাবগত মতভিন্নতার ব্যাপারে জনসাধারণের বিরূপ মন্তব্য করা ঠিক নয়। বরং জনসাধারণ ও আলেমসমাজের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।