রাসূল সা.কে সিক্স প্যাক বলা সুন্নাহ বিরোধী
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৪৮ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিক্স প্যাক (পেটে ৬টি ভাজ বিশিষ্ট) ছিলেন সরাসরি এ ধরনের বক্তব্য সুন্নাহ বিরোধী। এ ধরনের কথার কোন প্রমাণ শরীয়তের দলিল গুলোতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ চাঁদ কিংবা সূর্যের সঙ্গে তুলনা করা হয় এটা একটা অনুভূত বিষয়। তবে যারা সিক্স প্যাক করে দেহের সৌন্দর্য বাড়ায়, তাদের চেয়েও হাজার গুণ বেশি সুন্দর ছিলেন।
রাসূল সা.- এর সৌন্দর্য
বারা ইবনে আযেব রা. বলেন, ‘রাসুল সা. ছিলেন মাঝারি গড়নের। তার উভয় বাহুমূলের মধ্যবর্তীস্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তার মাথার কেশরাশি উভয় কানের লতি পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল। পরনের লাল পোশাকে তার চেয়ে অধিক সুন্দর আমি কাউকে দেখিনি’।
অন্য বর্ণনায় আছে- রাসুল সা. ছিলেন সবচে’ সুন্দর চেহারা ও গঠনের অধিকারী; অতি লম্বাও না, খাটোও না।
অন্য হাদিসে আছে- বাবরি চুল বিশিষ্ট লাল পোশাক পরিহিত কোনো লোককে রাসুল সা. এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। তার চুল কাঁধ ছুঁয়ে যেত।
বারা রা.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, রাসুল সা.-এর চেহারা কি তরবারির মতো ছিল? তিনি জবাব দিলেন, ‘না; বরং চাঁদের মতো’। [বুখারী, হাদিস ৩৫৪৯, ৩৫৫১, ৩৫৫২]
আনাস ইবনে মালেক রা. বলেন, ‘রাসুল সা. অতি লম্বা ছিলেন না, আবার খাটোও না। তিনি ধবধবে সাদা ছিলেন না, আবার সম্পূর্ণ তামাটে বর্ণেরও না। কুঞ্চিত চুল বিশিষ্ট ছিলেন না, আবার তার চুল একেবারে সোজাও ছিল না’।
অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ছিলেন মাংসল হাত-পা ও সুদর্শন চেহারার অধিকারী। আমি পূর্বে বা পরে কাউকে তার মতো দেখিনি। তার হাতের তালু ছিল প্রশস্ত।
আবু তুফাইল রা. বলেন, ‘রাসুল সা. ছিলেন ফর্সা লাবণ্যময় আকর্ষণীয়। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি ছিলেন ফর্সা ও লাবণ্যময় চেহারার অধিকারী’। [মুসলিম, হাদিস ২৩৪০]
জাবের ইবনে সামুরা বলেন, ‘রাসুল সা.-এর মুখবিবর ছিল কিছুটা প্রশস্ত, চোখ ছিলো টানা। পায়ের গোড়ালি ছিল হালকা গোশতবিশিষ্ট’। [মুসলিম, হাদিস ২৩৩৯]
তিনি আরও বলেন, রাসুল সা.-এর মাথার অগ্রভাগের কিছু চুল ও কিছু দাড়ি ধুসর বর্ণের হয়ে গিয়েছিল। তেল ব্যবহার করলে তা প্রকাশ পেত না। চুলগুলো এলোমেলো থাকলে বোঝা যেত। তিনি ছিলেন ঘন দাঁড়িবিশিষ্ট। কেউ বলল, তার চেহারা কি তলোয়ারের মতো ছিল? তিনি বললেন, না; বরং চাঁদ-সূর্যের মতো, গোলাকৃতির। তার স্কন্ধদেশে মোহরে নবুয়ত দেখেছি কবুতরের ডিমের মতো; তার শরীরের বর্ণেরই। [মুসলিম, হাদিস ২৩৪৪]
আনাস রা. বলেন, ‘রাসুল সা.-এর হাতের তালুর মতো কোমল রেশমও আমি স্পর্শ করি নি। এবং তার শরীরের ঘ্রাণের চেয়ে উত্তম কোনো ঘ্রাণ অনুভব করিনি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সা. ছিলেন উজ্জ্বল বর্ণের। তার ঘাম মুক্তার মতো চকচক করত। হাঁটার সময় তিনি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন’। [বুখারী, হাদিস ৩৫৬১]
জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, শৈশবে রাসুল সা. তার গালে হাত বুলিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি তার হাতে এমন শীতলতা ও সুগন্ধি অনুভব করেছি, যেন তিনি তা সুগন্ধির কস্তুরি থেকে বের করেছেন’। [মুসলিম, হাদিস ২৩২৯]
অবয়বের সৌন্দর্য : রাসুল সা.-এর দেহাবয়ব ও সৌন্দর্য বিবরণ-সম্বলিত হাদিসগুলো একত্র করলে দুটি বিষয় স্পষ্ট ফুটে উঠবে- ১. সুষম ও মধ্যম ধরন এবং ২. শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সামঞ্জস্যপূর্ণতা। দৈর্ঘ্যে তিনি ছিলেন মাঝারি আকৃতির। বেশি লম্বা বা খাটো ছিলেন না। বর্ণের দিক থেকে ছিলেন স্বাভাবিক ফর্সা, ধবধবে সাদা বা তামাটে বর্ণের নয়, বরং উজ্জ্বল বর্ণের। তার মাথার চুল ছিল মধ্যম ধরনের, অর্থাৎ কোঁকড়ানোও না. একেবারে সোজাও না।
শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যথাযথ সামঞ্জস্য থাকলেই দেহের সৌন্দর্য পূর্ণতা পায়, তিনি তেমনই ছিলেন। উভয় বাহুর মধ্যবর্তী স্থানের প্রশস্ততা, উভয় হাত ও পায়ের মাংসল হওয়া এগুলো কোনো দৈহিক ত্রুটি নয়। বরং তা সামঞ্জস্যেরই বিবরণ।