রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পৃথিবীর প্রথম নারী হজরত হাওয়াকে নিয়ে কুরআনের বর্ণনা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৬:২৭ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

দুনিয়ার সব মানুষের মা হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম। তার গর্ভজাত সন্তানের দ্বারাই আজ সারা দুনিয়ায় মানুষের বংশবৃদ্ধি হয়ে এ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইসলামের ইতিহাসে যেসব নারী বিখ্যাত হয়ে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম এবং পৃথিবীর প্রথম নারীও হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম।

কুরআনুল কারিমের ছয় স্থানে তাকে নিয়ে আয়াত নাজিল করেছেন আল্লাহ তাআলা। হজরত আদম আলাইহিস সালামকে একাকিত্ব থেকে মুক্ত করতে এবং মানব সৃষ্টির প্রচলনকল্পে হজরত হাওয়া আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি ছিলেন হজরত আদম আলাইহিস সালামের স্ত্রী।

তিনিই প্রথম সৃষ্টি যিনি কোনো জীবন থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছেন। তার মাধ্যমেই মানব জীবনের উৎসের সূচনা হয়েছে। তিনিই সমগ্র মানব জাতির মা। আল্লাহর সৃষ্টিতে দ্বিতীয় মানুষ ও প্রথম নারী।

কুরআনের যে ছয় স্থানে হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে তাহলো-

> হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম মানব জাতির মা। আল্লাহ বলেন-

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর; যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের দুজন থেকে বিস্তার করেছেন অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাঞ্চা করে থাক এব আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১)

> বাবা-মা ছাড়া মাটি দ্বারা সৃষ্টি।

আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পর তার চিত্ত বিনোদন ও মানুষের প্রজন্ম সৃষ্টি লক্ষ্যে হজরত আদম থেকে মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। আল্লাহ বলেন-
‘তার নিদর্শনাবলির মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ। পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ।’ (সুরা আর-রূম : আয়াত ২০)

> হজরত আদম থেকে হাওয়ার সৃষ্টি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের একই ব্যক্তি থেকে। অতঃপর তা থেকে তার যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের জন্য আট ধরনের চতুষ্পদ জন্তু অবতীর্ণ করেছেন। তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাতৃগর্ভে পর্যায়ক্রমে একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে। তিনি আল্লাহ; তোমাদের পালনকর্তা, রাজত্বও তারই। তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। অতএব, তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?’ (সুরা আয-যুমার : আয়াত ০৬)

> হজরত হাওয়ার সৃষ্টি প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-

‘তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছে একটি মাত্র সত্তা থেকে। আর তার থেকেই তৈরি করেছেন তার জোড়; যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করলো, তখন, সে গর্ভবর্তী হলেঅ। অতি হালকা গর্ভ। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকলো। তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকলো যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদের সুস্থ ও ভাল দান কর তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করবো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৮৯)

> হজরত হাওয়ার বেহেশতে থেকে বের হওয়ারে কথার উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন-

‘হে আদমের বংশধর! শয়তান যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে; যেমন করে সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম-হাওয়া) জান্নাত থেকে বের করেছে। (তারা) বের হওয়ার সময় (তাদের) অবস্থা এমন হয়েছিল যে, তাদের (জান্নাতি) পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছে। যাতের তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়ে। সে এবং তার দলবল তোমাদের দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদের তাদের বন্ধু বন্ধু করে দিয়েছি; যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।’ (সুরা আল-আরাফ : আয়াত ২৭)

> শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে যে দোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ-

‘তারা উভয়ে বললো- হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো।’ (সুরা আল-আরাফ : আয়াত ২৩)

হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ দোয়া দুনিয়া ও পরকালে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক কার্যকরী টনিক। মুসলিম উম্মাহ সব সময় এ দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

সুতরাং কুরআনে বর্ণিত সর্বোচ্চ মর্যাদার ৫ মহিয়সী নারীর মধ্যে হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন অন্যতম একজন। সমগ্র মানব জাতির জন্য শিক্ষণীয় আদর্শ। তার কাছ থেকেই ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভের অনুপ্রেরণা লাভ করে মুমিন।

কারণ তিনি আল্লাহ নির্দেশ অমান্য করে বেহেশতের মতো শান্তির স্থান থেকে দুনিয়াতে এসেছিলেন। আর আল্লাহর হুকুম অমান্যের অপরাধ থেকেও মুক্তি লাভ করেছিলেন। যে দোয়ার মাধ্যমে তিনি মুক্তি লাভ করেছিলেন সেটিও মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে তুলে ধরেছেন।

এক নজরে বর্ণিত সুরার নাম ও আয়াত নম্বর-

- সুরা নিসা : আয়াত ০১
- সুরা আরাফ : আয়াত ২৩, ২৭ ও ১৮৯
-সুরা আয-যুমার : আয়াত ০৬
- সুরা আর-রূম : আয়াত ২০

কুরআনে বর্ণিত আয়াতের আলোকে দুনিয়ায় মুমিন মুসলমান নতুন জীবন সাজাতে সচেষ্ট হবে। আল্লাহর নির্দেশ মানতে অনুপ্রেরণা লাভ করবে। আল্লাহ তাআলা তা কবুল করুন। আমিন।