‘শিক্ষকদের প্রমোশনের ব্যবস্থা করতে হবে’
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:৪৯ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বাবা মায়ের দায়িত্ব সন্তানকে স্কুলে পাঠানো। আর সেই শিশুকে আলোকিত মানুষ গড়ার নেপথ্যে শিক্ষকের ভূমিকায় মুখ্য। আর সেটি যদি হয় গ্রামের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাহলে তো দায়িত্বটা আরও একধাপ বেড়ে যায়। অন্যের সন্তানকে পরম মমতায় আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সার্থকতা একমাত্র শিক্ষকতার পেশায় আছে। যা আর দশটা পেশায় এই সুযোগ নেই। এজন্য শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।
অসংখ্য সন্তানের স্বপ্ন বুননের এই কাজে ভালবাসাও কম নয়। হাজারো সন্তানের ভালবাসা, অর্থের বিনিময়ে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ভালবাসার টানেই শিক্ষকতার পেশাকে আপন করে নিয়েছি। সংকট আছে, হতাশা আছে, তারপরও শিশুদের ভালবাসার কাছে হার মেনেছে সবকিছু। কথাগুলো বলছিলেন যশোর সদর উপজেলার হালসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিক্তা রাণী দাস। ২০ বছরের শিক্ষকতার পেশায় অভিজ্ঞতাও কম হয়নি। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে শিক্ষকতা জীবনের নানা সংগ্রাম আর সফলতার কথা।
রিক্তা রাণী দাস বলেন, এখনো কিছু সমস্যা আছে গ্রামে গঞ্জে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ বছর বয়স থেকে ভর্তি করায়। শিশু শ্রেণিতে। পরে দেখা যায় ওই শিশুকে মাদরাসায় নিয়ে ভর্তি করায়। দুটোর শিক্ষা পদ্ধতি পুরোপুরি ভিন্ন। আমরা যা শেখায় তা পুরোপুরি ভুলে যায়। ওই বাচ্চা আমাদের কাছে এসে আবার যখন ভর্তি হয় তখন আবার নতুন করে শেখাতে হয়। আমাদের নির্দেশনা আছে কেউ চলে গিয়ে আসলে তাকে আবার ভর্তি করে নেওয়ার। এক ক্লাসে দুই বছর রেখে দিতে হয়। আবার এই স্কুল থেকে চলে গেলে আমাদের খোঁজ নিতে হয় সে কি করছে। কোথায় পড়ে। পড়লে ঝরে পড়া হয় না। এই তথ্যগুলো প্রতি বছর আমাদের শিক্ষা অফিসে দেয়া লাগে।
তিনি বলেন, অভিভাবকরা এখন আগের থেকে সচেতন হয়েছে। আমি ১৯৯৮ সালে যখন শুরু করেছি তখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্র খুঁজে ভর্তি করাতাম। আগে তো ছেলে মেয়েরা ভর্তি হতো না। তবে এখন সবাই পড়াতে চায়।
শিক্ষকতা জীবনে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নি বলে জানান তিনি। বলেন, আমি যে সব এলাকায় শিক্ষকতা করেছি তা খুব রিমোট না। অনেক যায়গায় মেয়েরা সমস্যায় পড়ে তবে আমি পড়িনি। খুব বেশি সমস্যা না পড়লেও তবে চাকরির জীবনে পরিবারের সানিধ্য খুব বেশি পাননি। রিক্তা রানী বলেন, আমি পরিবারে সময় কম দিতে পেরেছি। চাকরি করতে হয়েছে দূরে। সময়মতো স্কুলে পৌঁছাতে আমার সকাল ছয়টার আগে বাসা থেকে বের হতে হতো। স্টুডেন্ট জীবনে বিয়ে হয়েছে। আমি যখন অনার্স প্রথম বর্ষে তখন আমার বড় ছেলে হয়। ছোট ছেলের জন্ম মাস্টার্স পরীক্ষার পর।
শিক্ষকতা পেশায় আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিক্ষকতা ভালো একটা পেশা। আমার পরিবারের কেউ শিক্ষকতা পেশায় নেই। প্রথম দিকে একটা চাকরি করতে হবে এই মানসিকতায় শিক্ষকতায় আসা। তবে ধীরে ধীরে বাচ্চাদের প্রতি ভালোলাগায় থেকে যাওয়া। বাচ্চারা খুব মনে রাখে। ভালোবাসে। ভালোবাসার টানে শিক্ষকতা পেশায় আছি।
বাচ্চাদের শেখানো অবশ্যই কঠিন। রুট লেভেলের গার্ডিয়ানরা অত সচেতন না। উপরের লেভেলে পড়ানোর চেয়ে প্রাইমারিতে পড়ানো দশগুন কঠিন। যেহেতু তারা কিছুই জানে না। কথা বলতেও জানে না। শুধু লেখা পড়া শেখানো নয়, ওদের বাথরুম করা, নখ কাটা, হাত ধোয়াও শেখাতে হয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এসব কিছু আমাদের শেখাতে হয়।
এই বাইরেও আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। যেমন, আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিবছর জনসংখ্যার যে হিসাব হয় তাও আমাদের করতে হয়। ছয় মাস পর পর ছাত্রদের ওজন নেয়া। হাইট নেয়া। সে গুলো লিখে রাখা।
রিক্তা দাস আরো বলেন, সময় মেনে না চললে শিক্ষকতা জীবনে কারো অনুকরণীয় হতে পারবে না। আবার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছেও ভাল হতে পারবে না। আন্তরিক হতে হবে। আমাদের ফিফটি পার্সেন্ট অভিভাবক সচেতন না। তার ভেতর থেকে তাদের সাথে লিয়াজোঁ করতে হয়।
শিক্ষকতাকে আরো পেশাদার জায়গায় নেয়ার দাবি জানিয়ে রিক্ত রাণী বলেন, শিক্ষকদের প্রমোশনের ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘদিন পর ২০১৪ সাথে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সহকারি শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষা অফিসার হিসেবে পদোন্নতির ব্যবস্থা করলে মেধাবিরা এই পেশায় নিশ্চয়ই আসবে। ১৯৯৬ সালে আমি মাস্টার্স করেছি। যদি আমি ব্যাংকে চাকরি করতাম। তাহলে একই পদে থাকতাম না। আমি চলে যাব তাও মনে হয় প্রমোশন হবে না। শিক্ষা অফিসে যে ড্রাইভার আছে আমার সহকারি শিক্ষকরা তাদেরও নিচের ক্লাসে চাকরি করেন। কোন উপায় না পেয়ে এই চাকরি করেন।