মধ্যরাতে ‘দম ফুরাবে’ পরমাণু ঘড়ির
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:১৪ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

আবারো সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যা হয়েছিল ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালে পদার্পণের সময়ে। যার নাম- ‘ওয়াইটুকে প্রবলেম’!
আজ শুক্রবার মধ্যরাতে সেই আশঙ্কাই ফের দেখা দিয়েছে। গোটা বিশ্বে পারমাণবিক ঘড়ির (অ্যাটমিক ক্লক) দম ফুরিয়ে যাবে বলে। ১৯৮০ সালের ৬ জানুয়ারি চালু হয়েছিল ওই ঘড়ি। সেই ঘড়ির দম ফুরিয়েছিল ১৯৯৯ এর ৬ এপ্রিল। তার পর ফের দম দেয়া হয়েছিল সেই পারমাণবিক ঘড়িতে। শুক্রবার মধ্যরাতের পর (৬ এপ্রিল) যার দম ফুরিয়ে যাবে আবার। ১ হাজার ২৪ সপ্তাহ বা ১৯ বছর ৭ মাস পর। তাকে আবার নতুন করে দম দিতে হবে।
ওই ঘড়ির উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল পৃথিবীতে আমি, আপনি-সহ যাবতীয় প্রাণী ও উদ্ভিদের অবস্থান। যার নাম- ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ বা জিপিএস। সেই ঘড়ির দম ফুরোলে ভূপৃষ্ঠে ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছি আমি, আপনি, তার বাছবিচারের পদ্ধতিতে (জিপিএস) গন্ডগোল হয়ে যাওয়ারই জোর আশঙ্কা। জিপিএসের উপর নির্ভরশীল ইন্টারনেট। নির্ভরশীল নেট-ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা। নির্ভরশীল পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথে থাকা অন্তত ৫ হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ। নির্ভর করে রয়েছে সমুদ্র ও আকাশে নেভিগেশনের অনেকটাই।
ওলটপালট হবে ইন্টারনেট, গন্ডগোল উপগ্রহে?
তাই প্রশ্ন সর্বত্রই, অনেকটা লোডশেডিংয়ের মতোই মাঝরাতের পর ঝুপ্ করে বন্ধ হয়ে যাবে না তো বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবস্থা? অকেজো হয়ে পড়বে না তো নেট-ব্যাঙ্কিং, কিছু ক্ষণের জন্য হলেও? আচার, আচরণে ‘পাগলামো’ ধরা পড়বে না তো পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথে থাকা মহাকাশযান আর উপগ্রহগুলির? নেভিগেশনে বড় ধরনের ওলটপালট হওয়ার ফলে নাবিকরা বিপদে পড়বেন না তো মাঝসমুদ্রে? বিপদে পড়বেন না তো মৎস্যজীবীরা? বিগড়ে যাবে না তো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো ভূকম্প বোঝার যন্ত্রগুলি?
জেনে বা না জেনে এ ব্যাপারে আমজনতার যতটা উদ্বেগ, সাড়ে ১৯ বছর আগেকার অভিজ্ঞতার পর অবশ্য ততটা উদ্বেগে নেই বিজ্ঞানী মহল। তাঁদের আস্থা বাড়িয়েছে আগেভাগে নেয়া কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। তার পরেও যে প্রশ্নটাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তা হলো সেই ব্যবস্থা ঠিক সময়ে যদি কার্যকর না হয়, তা হলে কী হবে?
ঘড়ির নিয়মকানুন বদলালে চিন্তা কমতে পারে
কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি) জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী অবশ্য আমজনতার সেই আশঙ্কাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে রাজি নন। তার কথায়, যে সময়সীমা ধরে ওই ঘড়িতে দম দেয়া রয়েছে, তাতেই কিছু অসঙ্গতি থেকে গেছে। সাড়ে ১৯ বছর (আরও সঠিক ভাবে বললে, ১৯ বছর ৭ মাস) কেন, ওই সময়সীমাটা তো আরো অনেকটাই বাড়ানো যায়। ঘটনা হলো, ওই ঘড়িটা চালু করা হয়েছিল দশটি ক্যারেক্টার দিয়ে। যেগুলি শূন্য। মানে, দশটা শূন্য। সেই ক্যারেক্টারগুলি বাড়তে বাড়তে বড়জোর ৯ হতে পারে। হতে পারে দশটি ৯। তার পরই সেই ঘড়ির দম ফুরিয়ে যাবে। আর তাতেই ঘটবে বিপত্তি। ঘড়িটা পেছনের দিকে চলতে শুরু করবে। যেন সময়টা পিছিয়ে গেল আচমকা। তেমন কিছু হলে আজ ইন্টারনেটটা পিছিয়ে যেতে পারে সাড়ে ১৯ বছর আগেকার সময়ে! তখন সেটাকে অ্যাডজাস্ট করতে হবে তড়িঘড়ি। দম ফুরিয়ে গেলে আমরা যেমন আবার দম দিই ঘড়িতে।
জিপিএস পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়?
বিজ্ঞানের পরিভাষায় জিপিএস পদ্ধতির আদত নাম- ‘জিও-পজিশনাল সিস্টেম অফ স্যাটেলাইটস’ বা ‘জিপিএসএস’। যে পদ্ধতিতে আমি, আপনি-সহ পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীর অবস্থান নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট কোনো দেশের নিরিখে নয়। অক্ষাংশ আর দ্রাঘিমাংশের নিরিখে। সেই অক্ষাংশ বোঝানো হয় অক্ষরেখার মাধ্যমে। যা টানা হয়েছে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে। আর দ্রাঘিমাংশ বোঝানো হয় দ্রাঘিমারেখার মাধ্যমে, যা টানা হয় পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত।
এই পদ্ধতিতে কী ভাবে আমার, আপনার অবস্থান মাপা হয়?
সন্দীপ জানান, তার জন্য একইসঙ্গে লাগবে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা অন্তত ৪টি কৃত্রিম উপগ্রহকে। ওই ৪টি উপগ্রহ মিলে ঠিক করবে কোন সময়ে পৃথিবীর ঠিক কোন জায়গায় আমার, আপনার অবস্থান রয়েছে। তার ফলে, ওই ৪টি উপগ্রহকেই একই সঙ্গে একই সময়ে আমাকে, আপনাকে দেখতে হবে। না হলে তারা কেউই সঠিকভাবে আমার, আপনার অবস্থান (পজিশন) নির্ধারণ করতে পারবে না। বিভিন্ন দেশের এমন ৩২টি উপগ্রহ রয়েছে কক্ষপথে।