শীতলক্ষ্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ফেরিতে যানবাহন পারাপার, ভোগান্তির শেষ নেই
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৫৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার
রূপগঞ্জে মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করছে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা। ঝুঁকিপূর্ণ ফেরিতে যানবাহন পারাপারে ভোগান্তির শেষ নেই।ঝুঁকিপূর্ণ ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে ছোট-বড় সব ধরণের যানবাহন।
ঘাটে দুটি ফেরি রয়েছে। আর দুটি ফেরিতে দুটি করে চারটি ইঞ্জিন রয়েছে কিন্তু চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে দুটি ইঞ্জিন সব সময়ই বিকল থাকে। এ জন্য ঘাটে ফেরি ভিড়াতে গিয়ে প্রচন্ড বেগে ধাক্কা লেগে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন।
শুধু তাই নয়, পল্টুন ও গ্যাংওয়ের অবস্থা জরাজীর্ণ। ইঞ্জিন বিকলের কারণে প্রায় সময়ই ঘন্টার পর ঘন্টা আটকা পড়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। প্রতিদিন দেশের প্রায় ১৭টি জেলা থেকে আগত যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর এ ফেরি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ও এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেছেন, ফেরিঘাটের পার্শবর্তী ইছাখালী-মুড়াপাড়া গঙ্গানগড় এলাকায় অবস্থিত দ্বিতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। আর সেতু উদ্বোধন করা হলে দুর্ভোগ কমে যাবে। দ্রুত গতিতে ইছাখালী অংশের কাজ চলছে।
জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়ক যোগে আসা প্রায় ১৭টি জেলার সাধারণ যাত্রীরা মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে পারাপার হয়ে এয়ারপোর্টসহ রাজধানীতে প্রবেশ করছে।
বিশেষ করে কুমিল্লা, দাউদকান্দি, চাঁদপুর, মতলব, নোয়াখালী, ফেনি, চট্রগাম, হবিগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, মৌলিবাজার, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জের যাত্রীরা এ পথ ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ভুলতা ফ্লাইওভারের কাজ চলাচলের কারনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে না গিয়ে ফেরি পথ ব্যবহার করছে অনেক যানবাহন।
অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানীতে প্রবেশ পথ হিসেবে যাত্রীরা শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে ফেরি যোগে চলাচল করে থাকেন। প্রতিদিন হাজার হাজার যানাবাহন চলাচল করে এ পথ দিয়ে। এ কারণেই সড়ক ও জনপদ বিভাগ মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দুটি ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ওই দুটি ফেরি প্রতি বছর ইজারা দিয়ে থাকেন বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ফেরি দুটির রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগ। বর্তমানে ফেরির দায়িত্বে রয়েছেন সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া-রূপগঞ্জ সদর এলাকার শীতলক্ষ্যা নদীর দুই পারের রাস্তাটি প্রশস্থ অনেকটা কম। এ সড়কটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতায়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সব সময়ই এসব ভাঙ্গা গর্তে পানি জমে থাকে। গর্তে পড়ে প্রায় সময়ই যানবাহন বিকল হয়ে পড়ছে, ঘটছে দুর্ঘটনা।
বিভিন্ন সমস্যার কারণে ফেরি দুটি দিয়ে এসব যানবাহন সময় মতো পারাপার করতে না পারায় বেশির ভাগ সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। নদীর দুই পারের ফেরি লাগানো গ্যাংঅয়ে ও পল্টুনের বিভিন্ন অংশ জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। স্টীলের সিটগুলো খসে খসে পড়ছে। পল্টুনের তলায় পানি প্রবেশ করে ডুবে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। অনেক সময় সেলু মেশিন দিয়ে সেচেও পানি কমাতে হচ্ছে।
ফেরির উপরের পিচ উঠে গিয়ে স্টীলের সিট বের হয়ে গেছে। এতে যানবাহনগুলো স্লিপ করে। ফেরিঘাটের দুই পাড়ই অতিরিক্ত ঢালু হওয়ায় অনেক সময় গাড়ি উঠতে বা নামতে গিয়ে দুর্ঘটনা বা বিকল হয়ে পড়ে। দুটি ফেরির মধ্যে একটি ফেরি প্রায় ২৮ বছর আগের, অপরটিও একই সময়ের। ইঞ্জিন ও ফেরির বডি মেরামত করে এখন পর্যন্ত চালানো হচ্ছে ওই দুটি ফেরি।
এসব সমস্যা নিয়ে ইজারাদাররা কর্তৃপক্ষকে জানালে তেমন কোন কাজ হয়না। ঝালাই মেশিন ও রেকার আনলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা গুনতে হয়। যানবাহন নিয়ে ফেরি ছাড়লে সময় মতো ওপারে না পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রবল বেগে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। পরে অপর ফেরির সহযোগিতা নিয়ে টেনে আনতে হয়।
ভোগান্তির শিকার বেশ কয়েকজন যানবাহন চালক বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী ফেরির ভাড়া দিচ্ছি, আমরা ভোগান্তির শিকার হবো কেন?
সুমন এন্টার প্রাইজের মালিক সমর আলী সরদার বলেন, আমরা এসব সমস্যার ব্যপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানালে তারা এসে কাজ করে দিয়ে যায় কিন্তু ফের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদের বিভাগের এসডি শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফেরির সমস্যা গুলো নিয়ে আমরা মিটিং করেছি, দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, ফেরির নানা সমস্যা ও যাত্রীদের দুর্ভোগ বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।