সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

ডার্ক ওয়েবের অজানা অংশ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৪৭ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ইন্টারনেট ছাড়া কি একটি মিনিটও কাটানো সম্ভব! বর্তমানে সকলেই কোনো কিছু সম্পর্কে জানার জন্য কিংবা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেটকে তথ্যের আধার হিসেবেও বিবেচনে করা হয়।

ইন্টারনেটের সাহায্যে পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তথ্য আহরণ করা সম্ভব। তবে জানেন কি আমরা ইন্টারনেটে মোট তথ্যের মাত্র ৩ থেকে ৪ ভাগ উপভোগ করি এবং বাকি প্রায় ৯৫ ভাগই গোপন থাকে। হ্যাঁ, এই প্রশ্নের উত্তরেই আসে ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েবের কথা। আমরা অনেকেই এই ডিপ ওয়েব সম্পর্কে কমবেশি ধারণা রাখি। কিন্তু এই ডিপ এবং ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই ভুল ধারণা রাখি। কারণ ইন্টারনেটের এই অজানা অংশ নিয়ে রয়েছে অনেক গুজব। যার কিছু কিছু সত্যি হলেও বেশিরিভাগই মিথ্যা। কিন্তু কেন এত গুজব কেনই বা ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে বেশিরিভাগ মানুষেরই ধারণা নেই। আর কিই বা ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব 

ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জেনে নিতে হবে ইন্টারনেটের যে অংশে আমরা ভ্রমণ করে থাকি তা সম্পর্কে। আমাদের ইন্টারনেটের যে অংশে প্রবেশঅধিকার রয়েছে তাকে বলা হয় সার্ফেস ওয়েব। আমরা গুগল, ইয়াহু কিংবা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মাধ্যমে যেকোনো তথ্য সার্চ করলে যে সকল ওয়েবসাইটগুলো আসে সেগুলো সার্ফেস ওয়েব এর অংশ। এই সকল ওয়েবসাইটগুলো তাদের মালিক দ্বারা সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে রেজিস্টার্ড কিংবা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর স্বয়ংক্রিতার মাধ্যমে এগুলোকে এসকল সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে লিস্টেড করা হয়েছে। একারণে খুব সহজেই আমরা এসকল ওয়েবসাইটে এক্সেস পেয়ে থাকি।  কিন্তু এমন অনেক ওয়েবসাইট এবং তথ্য ভান্ডার রয়েছে যেগুলোতে আমাদের এক্সেস নেই এবং লিস্টেড ওয়েবসাইটের তুলনায় এদের সংখ্যাই বেশি। আর ইন্টারনেটের যে অংশে সাধারণ মানুষের এক্সেস নেই সেটিই হল ডিপ ওয়েব এবং যে সকল ওয়েবসাইটগুলো সার্চ ইঞ্জিনে লিস্টেড না এগুলোই ডার্ক ওয়েবের অংশ। আমরা অনেকেই ডিপ এবং ডার্ক ওয়েবকে একই মনে করে থাকি।কিন্তু এটা সত্য না। তবে কি থাকে এই ডিপ ওয়েবে এবং ডার্ক ওয়েবে 

ডিপ এবং ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে অনেক গুজব রয়েছে। যেমন এই ওয়েবে ঢুকলেই সকল তথ্য হ্যাক হয়ে যাবে, ব্লাকমেইল করা হবে অনেক ক্ষেত্রে খুনের ভয় দেখানো হবে। আবার অনেকেরই ধারণা ইন্টারনেটের এই অংশে পুরোটা জুড়ে হয়ে থাকে বেয়াইনি সব কার্যকালাপ। অস্ত্র ব্যবসা, দেহ ব্যবসা, চাইল্ড পর্ণ, নিষিদ্ধ ড্রাগ, খুনি ভাড়া করা আরো অনেক বেয়াইনি কাজ। হ্যাঁ, এমন অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে ডার্ক ওয়েবে কিন্তু ডিপ এবং ডার্ক ওয়েবের পুরোটা জুড়ে শুধু এই বেয়াইনি কার্যকলাপই হয়ে থাকেনা। 

 

প্রথমে জেনে নেয়া যাক ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে, ডিপ ওয়েবই মূলত ইন্টারনেটের প্রায় ৯০ ভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে। ইন্টারনেটের এই অংশে সাধারণ মানুষের এক্সেস থাকে না। কারণ এই অংশে মূলত মানুষের পার্সোনাল ডাটা স্টোর করা হয়ে থাকে। যেমন যেকোনো কারো মেইল একাউন্টের তথ্য সম্পর্কে অন্য মানুষ জানতে পারেনা। এই মেইল একাউন্টের মধ্যকার তথ্যই মূলত ডিপ ওয়েবের অংশ। শুধু মেইল নয় বরং ক্লাউডে জমা করা পার্সোনাল তথ্য, ব্যাংক একাউন্টের তথ্য, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব তথ্য। ইন্টারনেটে জমা এসকল তথ্যই যেগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না সেগুলোই মূলত ডার্ক ওয়েবে জমা করা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করা প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের তথ্য জমা করা হয় বলেই ইন্টারনেটের এই অংশের আয়তন এত বড়। তবে ডিপ ওয়েব সম্পর্কে প্রচলিত সব গুজবই কি মিথ্যা না গুজবগুলো মূলত ডার্ক ওয়েব নিয়ে। 

ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের সবথেকে ভেতরের অংশ। এই অংশে রয়েছে সকল আনলিস্টেড বা সাধারণ ইউজার থেকে হাইড করা ওয়েবসাইটগুলো। এই অংশও প্রায় আমাদের ব্যবহার করা সার্ফেস ওয়েবের সমানই বড়। ইন্টারনেটের ৩ থেকে ৪ ভাগ অংশই ডিপ ওয়েবের অংশ। কিন্তু কীভাবে হাইড করা হয়েছে এই অংশ লক্ষ্য করলে দেখতে পাব আমরা সে সকল ওয়েবসাইট এক্সেস করতে পারি তার সবগুলোই প্রথমে ডব্লু ডব্লু ডবু ডট এবং শেষে ডট কম বা ডট ওয়ারজি এসকল থাকে। কিন্তু ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলোতে এর কিছুই থাকেনা। ফলে ক্রোম, ফায়ারফক্সের মত সাধারণ ওয়েব ব্রাউজার গুলোর সাহায্যে এসকল ওয়েবসাইটগুলোতে এক্সেস করা যায়না। 

 

এসকল ওয়েবসাইটগুলো এক্সেস করতে প্রয়োজন হয় টর ব্রাউজারের মত ব্রাউজারগুলো। কিন্তু কী এই ব্রাউজার ইউ এস নেভির তিনজন সদস্য দ্বারা নিজেদের মধ্যে গোপন যোগাযোগের জন্য এই ওয়েব ব্রাউজার তৈরি করা হয়। আমরা যেমন অনেক সময় নিজেদের আইপি এড্রেস হাইড করার  জন্য ভিপিএন প্রক্সি এগুলো ব্যবহার করি। টর ব্রাউজারের বিল্ট ইন ই এমন ভিপিএন রয়েছে যা সাধারণ ভিপিএন এর মত শুধুমাত্র এক স্তর নয় বরং অনেকগুলো স্তর ও আলাদা আলাদা আইপি ব্যবহার করে থাকে। যে কারণে ব্যবহারকারীদের বা ওয়েবসাইটের মালিকদের  খুব সহজেই খুজে বের করা সম্ভব হয় না। কিন্তু কেন এত গোপনীয়তা আর কারাই বা ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েব 

যারা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চায় তারাই মূলত ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারকারী। এর মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। তবে ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করলেই যে সবকিছু হ্যাক হয়ে যাবে এ ধারণা ভুল। কারণ ডার্ক ওয়েব পুরোটাই  প্রাইভেসি নির্ভর। কিন্তু কেন ব্যবহার করা হয় ডার্ক ওয়েব হ্যাঁ, উপরে উল্লেখিত বেয়াইনি কাজগুলো ডার্ক ওয়েবের বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। তবে শুধু বেয়াইনি কাজেই নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি তথ্য ফাঁস, গোয়েন্দাগিরি, স্পর্শকাতর তথ্য আদান প্রদান এসকল কাজেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে ডার্ক ওয়েব। তবে ডার্ক ওয়েব নিয়ে এত গুজব কেন কারন ডার্ক ওয়েবের ব্যবহারকারীরা এই ওয়েবে সাধারণ মানুষের এক্সেস চাননা। একারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ডার্ক ওয়েবের সম্পর্কে গুজবগুলো ছড়ানো হয়েছে।