বৃহস্পতিবার   ০৮ মে ২০২৫   বৈশাখ ২৪ ১৪৩২   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৬

স্মার্টফোন কিনে কী ঠকছেন?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৪৮ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

মানুষের সবচেয়ে প্রিয় ব্যবহৃত জিনিসের মধ্যে একটি হলো স্মার্ট ফোন। যে যত দাম দিয়ে ফোন কিনে সে তত স্মার্ট। যার ক্যামেরার মেগাফিক্সেল বেশি সেই ফোনের চাহিদাও বেশি। এমন একটি প্রতিযোগিতা এখন নিয়মিত ঘটছে ব্যবহারকারীদের মধ্যে। একটি মডেল ব্যবহার করতে না করতে বাজারে আসছে অন্য একটি মডেল। অপরদিকে ব্যবহারকারীরাও একটি মডেলের ব্যবহার শেষ করতে না করতে অন্য একটি নতুন মডেলের ফোন কিনতে মরিয়া হয়ে উঠছে। কারণ চায়ের আড্ডায়, বন্ধুদের গল্পচ্ছলে সেই ফোনটি তাকে করে তুলবে সবার চেয়ে স্মার্ট, এমন একটি মানসিকতা এখন মানুষের মধ্যে প্রবেশ করেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে ব্যক্তি এত দাম দিয়ে ফোনটি কিনছে, সে কি বাস্তবে আসল ফোনটি কিনছে? কারণ বিশ্বখ্যাত সব স্মার্টফোনগুলো এমনভাবে ‘কপি’ করে যে, হুবহু একই রকম দেখতে মনে হয়, আর সেই নিম্নমানের গ্যাজেট বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়, যা দেখলে আসল-নকলের তফাৎ করা মুশকিল। আরেকটি ব্যাপার হল, আসল ফোন চেনার জন্য তাকে আসল জিনিস অবশ্য বুঝতে হবে। তা না হলে নকল জিনিস সে কীভাবে চিনবে। 

কিন্তু বাজারের নকল ফোনগুলো দেখতে এতটাই আসল যে, কেউ একপলক দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই, এটা আসল না নকল! তারপরেও নকলবাজরা ছোটখাটো কিছু ভুল করে ফেলেন। আর সেই ভুলগুলো দেখে নিলে হয়ত আপনিও নকল গ্যাজেট সনাক্ত করতে পারেন। তবে আগে থেকে বলে রাখা ভালো, ফোন কিনতে গেলে প্রথমে আসল-নকল জেনে যাবেন, কারণ আপনি যদি নকল বা ক্লোন ফোন চেনেন, সে ক্ষেত্রে আসল ফোন আপনি বেছে নিতে পারবেন। আর যদি আপনি আসল ফোন চেনেন তাহলে নিশ্চয় নকলটিও ধরতে পারবেন। 

চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক, আসল ফোন যেভাবে চিনবেন-

প্যাকেজিং

আসল ফোন চিনতে পারবেন আপনি প্যাকেজিং দেখে। কারণ নকল স্মার্টফোন নির্মাতারা অনেক সময়ই প্যাকেজিংয়ের বিষয়টা আমলে নেয় না। তবে আসল ফোন তথা, আইফোন, স্যামসং, সনি, অপ্পো ও নোকিয়ার সত্যিকারের নির্মাতাদের প্যাকেজিং হয় একেবারেই নিখুঁত। তাই প্রথমে কেনার আগে আপনাকে প্যাকেজিংটা ভাল করে দেখতে হবে। প্রিন্ট কোয়ালিটি অথবা যে প্লাস্টিক দিয়ে আপনার ক্রয়কৃত ফোনটি মোড়ানো তার কোয়ালিটি পরখ করুন। সত্যিকারের ম্যানুফ্যাকচারাররা কখনোই পরিবহনের সময় প্যাকেজিংয়ের কোনো ক্ষতি হতে দেয় না। এছাড়াও প্যাকেটের প্রতিটা কোণ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। বাঁকানো মনে হলে বা কোনো সন্দেহ হলে সেটি কেনা থেকে বিরত থাকুন। আর অবশ্য প্যাকেটের গায়ে প্রদর্শিত সিরিয়াল নাম্বারের সঙ্গে আপনার ফোনের আইএমইআই মিল আছে কিনা দেখে নিবেন।


 

 

ইউজার ম্যানুয়াল

আসল ফোন চেনার আরেকটি উপায় হল ইউজার ম্যানুয়াল। কারণ যেকোনো স্মার্টফোনের ব্যবহার নির্দেশিকা হলো এই ইউজার ম্যানুয়াল। পণ্যটি  যে দেশের সেখানকার ভাষায় এই ইউজার ম্যানুয়ালটি লিপিবদ্ধ থাকে। আর সেখানে ফোন ব্যবহার করার সব নিয়মাবলী দেয়া থাকে। যদি ফোনটি যে দেশের ইউজার ম্যানুয়ালটি সে দেশের না হলে বুঝবেন সেটা আসল নয়। তখন ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকবেন।

কাঁচামাল

আসল না নকল ফোন পরখ করার জন্য স্মার্টফোনের কাঁচামাল কি দিয়ে বানানো হয়েছে সেটা দেখে নিন। প্লাস্টিক, রাবার না অ্যালুমিনিয়াম কোন কোয়ালিটির স্মার্ট ফোন, সেটা যাচাই করে নিন। প্লাস্টিক নিয়ে নির্মিত হল বহির্ভাগটা মসৃন কি না দেখুন, এসব গ্যাজেট সাধারণত নিখুঁত হয়। নকল গ্যাজেটের ক্ষেত্রে সস্তা প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয়, ফলে বহির্ভাগটা সমতল থাকে না, উঁচু-নিচু হয়ে যায়।

লোগোর ফন্ট

যে প্রতিষ্ঠানের স্মার্টফোন (অ্যাপেল বা স্যামসং, সনি, হুয়াই) তাদের লোগোটা ভালভাবে দেখে নিন। কারণ অরজিনাল ফোনের প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের লোগোর ব্যাপারে বেশ সচেতন। আর যাইহোক তারা নিজেদের লোগো ঊনিশ-বিশ হতে দিবে না। তাই ফোন কেনার আগে তাদের লোগো ভালোভাবে চেক করে নিন। 


 

 

চার্জার

অবশ্য একটি স্মার্ট ফোন কেনার আগে চার্জারটি দেখে ফোনটি কিনবেন। তবে চার্জারটি কেনার আগে আপনার দেশের সঙ্গে যাই কিনা দেখে নিবেন। যেমন ইউরোপের চার্জারগুলোতে বিশেষ একটা ‘ব্লক’ থাকে। যদি ফোন কেনার সময় আপনাকে কোনো অ্যাডাপটার বা আলাদা চার্জার কিনতে বলা হয় তাহলে ধরে নিবেন ওই ফোনটি নকল। আর একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন, ব্র্যান্ডের চার্জারগুলো কখনোই রঙিণ হয় না। আর ব্র্যান্ডগুলোই আপনার ফোনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই অনেক দামী ফোন কেনার আগে আপনার চার্জারটি আসল কিনা দেখে কিনবেন।


 

 

ডাটা কেবল

আসল ফোনের কেবলগুলো অনেক ভালো কোয়ালিটির হয়ে থাকে। তাই কেনার আগে কেবল ওয়ারের কোয়ালিটি দেখে নেবেন। আর নকল স্মার্টফোনে অনেক সময় পিনগুলো তুলনামূলক লম্বা হয়। যা ফোনে ডুকালে সহজে কানেক্ট হতে চায় না। অপরদিকে ব্র্যান্ডের ডাটা কেবলগুলো সহজেই ফোনের সঙ্গে কানেক্ট হয়ে যায়। যেহেতু আপনার ফোনটি অনেক দাম দিয়ে কিনছেন সেহেতু ডাটা কেবলটিও সে মানের কেনার চেষ্টা করবেন। শুধু তাই নয়, কেবলের ওপরে খোদাই করা নানা রকম প্রতীকগুলোর দিকে চোখ রাখুন। তাহলে নিমিষেই বুঝতে পারবেন আপনার ক্যাবলটি আসল না নকল।