জিরো থেকে বলিউডের সর্বোচ্চ চূড়ায় এই তারকারা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:৩৬ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার
বলিউড সিনেমার সবচেয়ে অবিচ্ছেদ্য অংশই হলো গানের সঙ্গে নাচ। এই নাচ অন্যান্য দেশ এখনো রপ্ত করতে পারেনি, যেমনি বলিউড নাচে। তারা গানের প্রতিটি লিরিকের সঙ্গে তাদের শরীরের অঙ্গের পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে সম্ভব। তাই বলিউডের নাচ এখনো পুরো পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত।
আর নাচ ছাড়া এখনো বলিউডি ছবি কল্পনা করা যায় না। বলিউডে গল্পের পরিবর্তন এসেছে, সব কিছুর পরিবর্তন এসেছে তবে নাচের কোনো পরিবর্তন আসেনি, এসেছে শুধু নতুনত্ব। তবে আজ কোনো নাচ-গান নিয়ে নয় বরং এমন কিছু অভিনেতার গল্প ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জানাব, যারা আগে নাচতেন তবে এখন একেকজন বলিউডের প্রতিষ্ঠিত তারকা। তবে হুম, বলিউডে যে সব বড় ও উজ্জ্বল তারকাদের আমরা চিনি, তারা অনেক স্ট্রাগল করে এই পর্যায়ে এসেছেন এবং অবস্থান ধরে রাখার জন্য সর্বদা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
চলুন আজ তেমনই কিছু জনপ্রিয় তারকার গল্প জেনে নেই –
আজ যাদের গল্প বলব, তারা একসময় কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার ছিলেন, মানে নায়ক-নায়িকাদের পেছনে নাচতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে তারা আজ হয়ে ওঠেছেন নামি-দামি বলিউডতারকা। এখন তাদের পেছনে নাচেন অন্য ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার।
ডেইজি শাহ
ডেইজি শাহ। যার আবির্ভাব ঘটেছিল নায়ক সালমান খানের মাধ্যমে। কয়েক বছর আগে তার অভিনীত ছবি ‘জয় হো’ মুক্তি পেয়েছিল সালমানের সঙ্গে। নিশ্চয় সবার মনে আছে, সে ছবির কথা। থাকারই কথা, কারণ এই ছবির নায়ক বলিউড ভাইজান সালমান খান। ওই সিনেমার মধ্যদিয়ে মূলত এ নায়িকার অভিষেক হয়েছে। তিনিও এক সময় ছিলেন ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার, সেখান থেকে হয়েছেন নায়িকা। আরো মজার ব্যাপার হলো, যে নায়কের হাত ধরে তিনি বলিউডে আসেন, সেই সালমান খানের পিছনে এক সময় তিনি ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে নেচেছেন। তার অভিনীত ছবি ‘তেরে নাম’-এ ‘লাগান লাগি’ গানে তার উপস্থিতি দেখা গেছে।
সুশান্ত সিং রাজপুত
বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুত। ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ক্যারিয়ার গড়ার আশায় বলিউডে পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। এরপর আমির খানের ‘পিকে’ ছবিতে তার অভিনয় বেশ আলোচনায় নিয়ে আসে। এদিকে, ২০১৬ এর দিকে তার মুক্তি পাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটার এস.এস ধোনীর জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘এম.এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় মধ্যদিয়েই বাজিমাত করেন এই হার্টথ্রব। কিন্তু অনেকেই জানেন না তিনিও এক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার ছিলেন। হৃতিক রোশনের ‘ধুম ২’ ছবির ‘ধুম মাচালে’ গানে ড্যান্স করেছেন এই অভিনেতা। সেখান থেকে মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে আজ তিনি বলিউডের তারকা।
নিতু চন্দ্র
নিতু চন্দ্র। তিনি তার অভিনীত ‘গরম মশলা’ ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন পুরো বলিউডজুড়ে। তার ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল ব্যাকগ্রাউন্ডে ড্যান্সের মধ্যদিয়ে। সোফির ‘মেরা বাবু ছেল ছাবিলা’ গানে দেখা গেছে তাকে। এরপর থেকে তিনি এখন বলিউড নায়িকা। আর তার পেছনে থাকে একগুচ্ছ ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার।
রেমো ডি’সুজা
রেমো ডি’সুজা। তাকে নিশ্চয় অনেকেই চেনেন। তিনি হলেন বলিউডের নামকরা কোরিওগ্রাফার। এক নামেই সবাই চিনে তাকে। মাঝে মাঝে টুকটাক ফিল্মও বানান। ‘এবিসিডি’ ‘এবিসিডি টু’ ‘ফালতু’ ‘অ্যা ফ্লাইং জেট’-এর মতো ব্যবসা সফল ছবি তার হাত ধরেই এসেছে। কিন্তু এসব কিছুর আগে তিনি স্রেফ ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। শাহরুখ খানের একটি গানে তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সেখান থেকে পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে তিনি আজ বলিউডের অনেক কিছু।
ফারাহ খান
ফারাহ খান। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে। নেচেছেন বহু তারকার পিছনে। তবে বর্তমানে তিনিও একজন খ্যাতনামা বলিউড ছবির পরিচালক। এছাড়া ‘ওম শান্তি ওম’ এবং ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ ছবিতে তিনি একজন কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন। অসংখ্য গানের কোরিওগ্রাফ করেছেন। এছাড়া প্রযোজনা, অভিনয় কিংবা রিয়েলিটি শো’র বিচারক ছিলেন। সবখানেই তার আলাদা একটা কদর আছে। ‘সদা সোহাগান’ ছবিতে ‘হাম হ্যায় নওজাওয়ান’ গানে অভিনেতা গোবিন্দর সঙ্গে নেচেছেন তিনি। তবে যাই করেছেন অতীতে, এখন কিন্তু তিনিও বলিউডের একজন নামীদামী তারকা।
সরোজ খান
সরোজ খান। তার হাত ধরে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক ড্যান্স স্টারের জন্ম হয়েছে। আর তিনি নিজেও ছিলেন একজন ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার। আশোক কুমার আর মধুবালার বিখ্যাত ছবি ‘হাওড়া ব্রিজ’-এর ‘আয়ে মেহেরবান’ নামক একটি গানের ব্যাকগ্রাউন্ডে ড্যান্স করেছেন তিনি। তবে তিনিও এখন বলিউডের নামীদামী তারকাদের একজন।
আরশাদ ওয়ারসি
আরশাদ ওয়ারসি। এই অভিনেতাকে নিশ্চয় সবাই ছবিতে চেনেন। তিনি ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ কিংবা ‘গোলমাল’-এর মতো সিনেমায় নিজের জাত চিনিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই জানে না যে, এই অভিনেতাও একসময় ছিলেন একজন কোরিওগ্রাফার এবং তার শুরুটা হয়েছিলো ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে। জিতেন্দ্র ও কিমি কাটকার অভিনীত ‘আগ সে খেলেঙ্গে’ ছবির ‘হেল্প মি’ গানে ড্যান্স করেছেন তিনি। তবে তিনিও এখন বলিউডের নামীদামী তারকা।
সাজিদ খান
সাজিদ খান। তাকেও আরশাদ ওয়ারসির সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে নাচতে দেখা গেছে। তবে তিনিও এখন একজন বলিউডতারকা। এর আগে তিনি জিতেন্দ্র ও কিমি কাটকার অভিনীত ‘আগ সে খেলেঙ্গে’ ছবির ‘হেল্প মি’ গানে তারকার পেছনে নেচেছেন।
অনুরাগ বসু
অনুরাগ বসু। তাকে চিনতে তার নামটিই যথেষ্ট। আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। ‘বরফি’ কিংবা ‘জাজ্ঞা জাসুস’-এর মতো ছবি তার হাত দিয়েই নির্মিত। এবং এসব ছবি শুধু তাকে দিয়েই সম্ভব। এই ডিরেক্টর কলেজ ছেড়ে ফিল্মে এসেছিলেন, এবং ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে প্রথম ক্যারিয়ার শুরু করেন।
শহীদ কাপুর
শহীদ কাপুর। বলিউডের হার্টথ্রব নায়কদের একজন তিনি। তাকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছুই নেই। যেমন নাচে তেমন অভিনয়ে তিনি সমান পারদর্শী। বলিউডের অসংখ্য হিট ছবি আছে তার ঝুলিতে। কিন্তু এমনি এমনি তো আর প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাননি, ক্যারিয়ারের শুরুতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে প্রচুর। ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে কাজ করেছেন ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবির ‘মুঝকো হুই না খবর’ ও ‘তাল’ ছবির ‘কাহি আগ লাগে লাগ যায়ে’-সহ বেশ কয়েকটি গানে। তবে এখন অনেকেই তার পেছনে নাচে আর শিখে।
কাজল আগারওয়াল
কাজল আগারওয়াল। রুপের জাদুতে অনেককে মুগ্ধ করেছেন এই নায়িকা। সাউথ থেকে মুম্বাই পর্যন্ত তার নামডাক রয়েছে। তবে হিন্দি, তামিল, তেলেগু সব জায়গায়ই যার সমান পদচারণা থাকলেও, একসময় তিনি ছিলেন শুধু ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার। এর আগে ‘কিউ! হো গ্যায়া না…’ ছবির ‘উলজানে’ গানে ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের পাশে ড্যান্স করতে দেখা গেছে ‘সিংঘাম’ ছবির এই নায়িকাকে।
দিয়া মির্জা
দিয়া মির্জা। ‘রেহনা হ্যায় তেরে দিল ম্যায়’-সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে ফাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে সাবেক মিস এশিয়া প্যাসিফিক এই অভিনেত্রী ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে। ‘ইন সুহাসা কাটরা’ ছবির ‘ঝুমবালাকা’ গানে তার উপস্থিতি বেশ নজরকাড়া ছিলো। তবে এখন তিনি এসব করেননা। এখন বলিউডে তার নামডাক নায়িকা হিসেবে।
ইশা শারভানি
ইশা শারভানি। এই নায়িকাকে হয়ত অনেকেই চেনেন না। তিনি ‘তাল’ ছবির ‘কাহি আগ লাগে লাগ যায়ে’ গানে পেছনে নেচেছেন। যেখানে আরো দেখা গেছে জাঁদরেল অভিনেতা শহীদ কাপুরকে।
এছাড়া বলিউডে আরো অনেক তারকাই আছেন যারা এই ধরনের অবস্থান থেকে আজকের এই অবস্থানে এসেছেন। মূলত পরিশ্রম ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তারা একেকজন বলিউডে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছেন। কথাই আছে না ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। হয়ত অধিক ইচ্ছা ছিল তাই আজ তারা নিজেদের সে অবস্থানে নিয়ে যেতে পেরেছেন। যদি ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সারকে জিরো ধরা হয় তাহলে তারা প্রত্যেকে আজ জিরো থেকে বলিউডের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠেছেন।