সোমবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩১   ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেই ছোট্ট শিশুটি যেভাবে আজ তিশা

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:৫০ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। টেলিভিশন জগতের এক অন্যতম জনপ্রিয় নাম, যিনি সেই থেকে এই পর্যন্ত নিজের অভিনয় যোগ্যতা দিয়ে সর্বোচ্চ আসন অধিষ্ঠিত করে রেখেছেন। শুরুতে ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়িতে যখন শ্রেষ্ট শিশুশিল্পী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন, তখন তিশা একেবারে ভাবেননি আজকের এই দিনে এতদূর নিজেকে পৌঁছাতে পারবেন। তবে আজ তিনি সত্যি অনেকদূর পৌঁছে গেছেন যা তিশার সমতুল্য অন্য কেউ ভাবতেই পারে না। 

তিশা ১৯৮৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর আলো দেখেন (জন্ম)। শো-বিজ অঙ্গনে তার শুরুটা হয় ৯ বছর বয়সেই ১৯৯৫ সালে, নতুন কুঁড়ির মধ্য দিয়ে। এর আগে, তিনি ঘরে বসে অভিনয়, আবৃতির চর্চা করতেন। এরপর তিনি নতুন কুঁড়িতে শ্রেষ্ট শিশুশিল্পী হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন। সেই ছোট বেলায় তিনি গান থেকে নাচ, অভিনয়, আবৃতি সব শাখাতেই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তার প্রথম টিভি নাটক ‘সাতপোড়ে কাব্য’। তবে শিশু শিল্পী হিসেবে বেশ আলোচনায় আসেন হুমায়ূন আহমেদের ‘প্যাকেজ সংবাদ’ নাটক দিয়ে, এরপর বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেন তিশা।

 

 

‘অত:পর নুরুল হুদা’, ‘গ্র্যাজুয়েট’, ‘বুকের ভিতর কিছু পাথর থাকা ভালো’ প্রভৃতি নাটকের মধ্য দিয়ে তিশাকে পাওয়া গেছে অন্যরকমভাবে। যেখানে তিনি নিজেকে ছড়িয়েছেন বেশ জোরালোভাবে। এরপর টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত করলেন। এরপর ‘হালদা’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’সহ একাধিক চলচ্চিত্রে তাকে পাওয়া গেছে বড় পর্দায়। যেখানে তিনি নিজেকে সমুজ্জ্বল করেছেন  আর দিনকে দিন তিনি হয়েছেন সেরা জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা।

তিশা মডেলিং-য়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি এই প্ল্যাটফর্মে প্রথম আলোচনায় আসেন কোকাকোলার বিজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে আর সেখানেই বাজিমাৎ করেন। ‘একলাই খাইবা, আমারে দিবা না?’, কোকাকোলার এই জনপ্রিয় ডায়লগটি এখনো সকলের মুখে মুখে। একই বছর সিটিসেলের বিজ্ঞাপন করে আরো বেশি জনপ্রিয়তা পান এই অভিনেত্রী। নোবেলের সঙ্গে সিটিসেলের বিজ্ঞাপনে ‘নিশিতে যাইয়ো ফুলো বনে’র সেই মিষ্টি হাসির কন্যা ছিলেন তিশা। মডেলিং জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর নাট্যজগতে পদচারণা, সেখানেও সফল।  তার পরের বছর কেয়ার বিজ্ঞাপন করে নিজেকে মডেলিং জগতের শীর্ষস্থানে নিয়ে আসেন। এরপর বিভিন্ন পণ্য সংস্থা তাকে নিয়ে চড়া দামে বিজ্ঞাপন বানাতে থাকে। মডেলিং জগতে তিশা হয়ে উঠে অন্যতম। 

 

 

ওই সময় দেশের অন্যতম সেরা নারী মডেলদের নাম নিলে, সে তালিকায় প্রথমে চলে আসত তিশার নাম। মডেলিং জগতের সাফল্যের পর টিভি নাটকে নিজেকে নিয়মিত করলেন তিশা। হয়ে উঠলেন অভিনেত্রী হিসেবে অনন্যা। অরন্য আনোয়ারের ‘নুরুল হুদা একদা ভালোবেসেছিল’ ও ফারুকীর ‘ক্যারাম ১ম পত্র’ ও ‘৬৯’ ছিল সেই যাত্রায় প্রথম ধাপ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে এসে তিনি মাহফুজ আহমেদের বিপরীতে ‘অত:পর নুরুলহুদা’ ও ‘ক্যারাম ২য় পত্র’-এ অভিনয় করে বেশ আলোচনায় আসেন। 

এরপর তিশার অন্যতম কাজের মধ্যে রয়েছে, ‘ইট কাঠের খাঁচা’, ‘৪২০’, ‘প্রভাতী সবুজ সংঘ’, ‘কফি হাউজ’, ‘শেষ প্রান্তে’, ‘এসএমএস’ অন্যতম। এরপর এই সময়ে এসে তিনি একে একে ‘গ্র্যাজুয়েট’, ‘একে একে ভালোবাসি তাই’, ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’, ‘আরমান ভাই সিরিজ’, ‘মনফড়িংয়ের গল্প’, ‘মনসুবা জংশন’, ‘লংমার্চ’, ‘শুনতে কি পাও’, ‘আমি তৃণা ও ম্যাজিক’, ‘সিকান্দার বক্স সিরিজ’, ‘শেফালি’, ‘রাতারগুল’, ‘অ্যাংরি বার্ড’, ‘মায়া ও মমতার গল্প’, ‘বুকের ভিতর কিছু পাথর থাকা’ ভালোসহ অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আসতে আসতে এসবের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তিশা হয়ে উঠেছেন এক জনপ্রিয় নাম। 

 

বর্তমানে তিশা নাট্যজগতের শীর্ষ অভিনেত্রীদের একজন। পাশাপাশি সেই স্থান বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি রেখেছেন। টানা পাঁচ বছর ধরে বলা যায়, জায়গাটি শুধুই তিশার। এখনো তিনি টিভি নাটকের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রী। গেলো বছর তার ‘একটি মধ্যবিত্ত ফ্রিজের গল্প’ও দর্শক মুগ্ধ করেছে।

 

ফারুকীর জনপ্রিয় সিনেমা ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ দিয়ে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন তিশা। এরপর একে একে ‘টেলিভিশন’, ‘অস্তিত্ব’, ‘ডুব’, ‘হালদা’য় নিজেকে সমাদৃত করেছেন তিনি। যদিও ‘রানা পাগলা’য় অভিনয় করে তিশা বেশ সমালোচিত হয়েছেন। তবে বাকি সিনেমাগুলোতে তিশা নিজেকে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি একজন জাত অভিনেত্রী। এছাড়াও তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’তে অতিথি শিল্পী হিসেবেও অভিনয় করেছেন তিশা। সবচেয়ে বেশী প্রশংসা কুড়িয়েছেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘ফাগুন হাওয়ায়’। 

এদিকে, মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার আলোচিত দু’টি ছবি ‘শনিবার বিকেল’ ও ‘হলুদবনি’। সামনে আসছে সূচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস নিয়ে নির্মিত ছবি ‘বালিঘর’। এতেই বোঝা যায়, তার ভবিষ্যৎ আরো সমুজ্জ্বল। দিনকে দিন তিনি নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য উচ্চতায়। যেখানে যেতে হয়ত তার মত অভিনেত্রীদের অনেক সময়ের প্রয়োজন। তিশা সেটি অর্জন করতে চলেছেন।

 

তিশা ক্যারিয়ার জীবনে বেশ কয়েকজন অভিনেতার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন। এর মধ্যে বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মোশাররফ করিম ও তাহসানের সঙ্গে জুটি বেঁধে। এছাড়া মাহফুজ আহমেদ, জাহিদ হাসানের সঙ্গে কাজ করেও বেশ আলোচনায় এসেছেন তিনি। এদিকে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পুরস্কার মেরিল প্রথম আলোতে সর্বোচ্চ পুরস্কারের মালিক তিনি। এখন পর্যন্ত এই পুরস্কার মোট ১২টি পেয়েছেন একমাত্র তিশা, ভাগ্য সহায় হলে হয়তো জাতীয় পুরস্কারের আক্ষেপটাও ঘুঁচতে পারে খুব শিগগির। বিশেষ করে ‘হালদা’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ও ‘শনিবার বিকেল’ এই তিনটি ছবি তাকে এনে দিতে পারে এই পুরস্কারটিও।

ব্যক্তিজীবনে তিশা বিয়ে করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে, নির্মাণে যার কোন তুলনা নেই। তিশা হলেন তার স্ত্রী। কোনোরকম গুজববিহীন বেশ সুখেই সংসার করছেন তারা। তাদের কোন ধরণের বিবাদের গল্প আজো মিডিয়ায় শোনা যায়নি।