সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫   বৈশাখ ৮ ১৪৩২   ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

পাঁচ সেকেন্ড অক্সিজেন না থাকলে যে ভয়ানক ঘটনা ঘটবে

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:২৮ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার

অক্সিজেন আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণীর বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কি হবে যদি পৃথিবীতে মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের জন্য অক্সিজেন না থাকে বা উধাও হয়ে যায়? অনেকের মনে হতে পারে যে, এই আবার এমন কি শক্ত ব্যাপার পাঁচ সেকেন্ড তো যে কেউ থাকতেই পারে। চব্বিশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে শ্বাস ধরে রাখার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু পাঁচ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? তাই ডেইলি বাংলাদেশের আজকের আলোচনা থেকে জানবো সত্যিই যদি পৃথিবীতে অক্সিজেন না থাকে তাহলে কি কি ঘটনা ঘটবে?  

আমরা সবাই জানি যে দু ভাগ হাইড্রোজেন এবং এক ভাগ অক্সিজেন মিলে পানি তৈরি হয়। এবার হঠাৎ করে পানির মধ্যে থাকা অক্সিজেন নাই হয়ে গেলে পড়ে থাকবে হাইড্রোজেন, যার সাধারণ অবস্থা গ্যাস এবং যা সবচেয়ে হালকা। হাইড্রোজেন ফ্রি হয়ে গিয়ে আকাশের দিকে যেতে থাকবে। এমনকি পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশে চলে যাবে। তার মানে পৃথিবীতে যত পরিমাণ পানি আছে সব বাষ্পীভূত হয়ে যাবে।  

 

শুধু তাই নয় পৃথিবীতে যত গাছ আছে সব শুকিয়ে যাবে। যত ধাতু আছে সব একসঙ্গে জুড়ে যাবে। সাধারণভাবে প্রতিটি ধাতুর উপর অক্সিজেনের লেয়ার থাকে এবং সেটি না থাকলে পরস্পরের সাথে লেগে থাকা ধাতু নিজে থেকে জুড়ে যাবে।  পৃথিবীতে যত গাড়ি আছে সব বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ ইঞ্জিন কাজ করে ফিউল এর সাহায্যে এবং অক্সিজেনের অভাবে কম্প্রেসন হবে না এবং সঙ্গে সঙ্গে সব বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় আকাশে যে বিমান বা হেলিকপ্টার উড়বে তা সবই কাজ করা বন্ধ করে দেবে অক্সিজেনের অভাবে। 

এদিকে, পৃথিবীর মাটি ধসে পড়বে কারণ মাটির সঙ্গে মিশে আছে অক্সিজেন যা প্রায় ৪৫ শতাংশ এবং এটি মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই অক্সিজেনের অভাবে তা হালকা হয়ে ধসতে শুরু করবে। যতক্ষণ না সব গুড়ো হয়ে যায়। অক্সিজেন চলে গেলেই আমাদের শরীরের জ্বালা করতে শুরু করবে। কারণ সূর্য থেকে কিছু ক্ষতিকারক রশ্মি পৃথিবীতে আসে যা থেকে আমাদের রক্ষা করে ওজোন গ্যাস। অক্সিজেন না থাকা মানে ওজোন গ্যাসও থাকবে না। অক্সিজেনের অভাবে সেসব ক্ষতিকারক রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসবে এবং আমাদের শরীরকে পুড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর সব জায়গায় যেখানে আগুন জ্বলছে সব নিভে যাবে। কারণ আমরা সবাই জানি অক্সিজেন কোন কিছুকে জ্বলতে সাহায্য করে। 

শুধু তাই নয় সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। কারণ অক্সিজেন কণা আলোকে রিফ্লেক্ট করে। অক্সিজেন না থাকলে আলোর রিফ্লেকশন এর অভাবে অন্ধকার হতে শুরু করবে। আমাদের কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে। যেকোনো ভাবে উৎপন্ন শব্দ শুনতে হলে যে শুধুমাত্র আমাদের কানই যথেষ্ট তা একেবারেই নয়। এর জন্য অক্সিজেনের ভূমিকা রয়েছে। কানের মধ্যে যে ইয়ার ড্রাম রয়েছে তা কাজ করে অক্সিজেন এর সাহায্যে অর্থাৎ কোন শব্দ শোনার জন্য। কিন্তু হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে বাতাসের চাপ ২১ শতাংশ কমে যাবে এবং কানের ইয়ার ড্রাম ফেটে যাবে এবং এটি ঘটবেই এক সেকেন্ডের মধ্যেই। এরপরে অক্সিজেন এসে গেলেও শোনার ক্ষমতা আমাদের থাকবে না। 

 

অক্সিজেন উধাও হতেই পৃথিবীতে যত কংক্রিটের তৈরি বাড়ি আছে সব ভেঙ্গে পড়বে। এর কারণ হলো কংক্রিটকে শক্তভাবে ধরে রাখতে সাহায্য করে অক্সিজেন। প্রতিটি কণাকে শক্তভাবে ধরে রাখার কাজ করে এই অক্সিজেন। তাই অক্সিজেন না থাকলে বন্ধন আলগা হয়ে গিয়ে সব বাড়ি ব্রীজ মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে পড়বে। আমাদের শরীর প্রধানত কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন দিয়ে তৈরি। আর আমাদের শরীরের ৭০% পানি দিয়ে তৈরি অর্থাৎ অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনের মিশ্রণ। এরপর হঠাৎ অক্সিজেন উধাও হয়ে গেলে আমাদের শরীর শুকিয়ে যাবে মমির মতো। এটি শুধুমাত্র মানুষই নয় পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সবার সাথে এমনটাই ঘটবে। পাঁচ সেকেন্ড পর যদি হঠাৎ অক্সিজেন ফিরে আসে তাহলে পুরো পৃথিবী সম্পূর্ণটা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে এবং ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটবে। কারণ অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসা মাত্র সবকিছু অক্সিডাইসড হতে শুরু করবে। যেমন সমুদ্রের পানির সৃষ্টি হবে মাটিতে অক্সিজেন মিশতে থাকবে ইত্যাদি এবং এর ফলে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটবে।  সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন করে গাছ ফটোসিন্থেসিস এর মাধ্যমে। তাই গাছকে রক্ষা করা এবং গাছ লাগানো কতটা জরুরি তা তো বুঝতেই পারছেন। তাই সবাই গাছ লাগান এবং গাছকে রক্ষা করুন ।