রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

`প্রেম করেছেন ইউসুফ নবী` একটি জঘন্য অপবাদ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:৪৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

আমাদের দেশে কোন কোন মানুষকে বলতে শোনা যায়, “প্রেম করেছেন ইউসুফ নবী”, প্রেম পবিত্র। এর মাধ্যমে তারা নিজের ও অন্যের অবৈধ সম্পর্ককে বৈধ মনে করতে থাকেন। বিষয়টি এমনই ন্যাক্কারজনক যে, এ গর্হিত বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রেমিক যুগল বিবাহ বহির্ভূত দৈহিক সম্পর্কে জড়াতেও কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না। অথচ পবিত্র কুরআনে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে একমাত্র বিবাহের মাধ্যমেই বৈধ করেছেন।

 

আর, আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ (আ.) কি কোন প্রেম করেছিলেন? এটা বরং তাঁর পবিত্র নবী সত্ত্বার উপর মারাত্মক অপবাদ। প্রেম তো নয়ই, তরুণ ইউসুফ (আ.) কে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল, তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান করেছিলেন।

তাঁর এই চারিত্রিক দৃঢ়তা বরং যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। কুরআনে ইউসুফ (আ.) এর সেই ঘটনা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে। মহান আল্লাহ সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

২৩. আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বলল, শুনো! তোমাকে বলছি, এদিকে আসো, সে বলল, আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না। ২৪. নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত, যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনিবাবে হয়েছে, যাতে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নিলজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন। ২৫. তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল, যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে? ২৬. ইউসুফ (আ.) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে। মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদি। ২৭. এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী। ২৮. অতঃপর গৃহস্বামী যখন দেখল যে, তার জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্মক। ২৯. ইউসুফ এ প্রসঙ্গ ছাড়ো! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো নিঃসন্দেহে তুমি-ই পাপাচারিনী। ৩০. নগরে মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, আযীযের স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কুমতলব চরিতার্থ করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উম্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি। ৩১. যখন সে তাদের চক্রান্ত শুনলো, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠালয় এবং তাদের জন্যে একটি ভোজ সভার আয়োজন করলো। সে তাদের প্রত্যেককে একটি ছুরি দিয়ে বললো, ইউসুফ এদের সামনে চলে এসো। যখন তারা তাকে দেখল, হতভম্ব হয়ে গেল এবং আপন হাত কেটে ফেলল। তারা বলল, কখনোই নয় এ ব্যক্তি মানব নয়। এ তো কোন মহান ফেরেশতা। ৩২. মহিলা বলল, এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করছিলে। আমি ওরই মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর আমি যা আদেশ দেই, সে যদি তা না করে, তবে অবশ্যই সে কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্চিত হবে। ৩৩. ইউসুফ বলল, হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বো এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবো। ৩৪. অতঃপর তার পালনকর্তা তার দুআ কবুল করে নিলেন। অতঃপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ। -অনুবাদ, সূরা ইউসুফ, আয়াত : ২৩-৩৪

মহান আল্লাহ আমাদের চরিত্রকে যাবতীয় অশ্লীলতা, অন্যায়, অনাচার, পাপাচার থেকে পবিত্র রাখার তাওফিক দান করুন। আমীন।