ইবাদতে নিরুদ্যমতার প্রতিকার
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৫:৫০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার
সমাজ জীবনে কখনো এমন মানুষকে দেখা যায় যিনি এক সময় আল্লাহকে ভয় করতেন। হারাম উপার্জন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ বিষয়গুলো এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি নিরুদ্যম হয়ে পড়েছেন। আগের মত নিয়মিত ইবাদত এখন আর করছেন না। ফরয ইবাদতগুলোর পাশাপাশি কিছু বিশেষ আমল করা হতো, এখন ফরয ইবাদত পালনেও অলসতা করছেন। তো, ধার্মিক জীবন-যাপনে এ উদ্যমহীনতা দূর করার কী উপায় – চলুন জেনে নিই।
নিরুদ্যমতা সৃষ্টির বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রতিকার জানার আগে নিরুদ্যম হয়ে পড়ার কারণগুলো জেনে নেয়া জরুরী। কারণগুলো জানা গেলে প্রতিরোধ করার উপায়ও জানা যাবে। উদ্যমহীনতার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা, আনুগত্য ও ইবাদত পালনে অলসতা, দুর্বল আকাঙ্ক্ষার ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগ নিয়ে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে। কোন মুসলিম উদ্যমহীনতার রোগে দ্বারা আক্রান্ত হলে সেটা প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে-
এক. স্বীয় প্রতিপালকের সাথে সম্পর্ক মজবুত করা। এটি অর্জিত হবে কুরআনে কারীম বুঝে বুঝে, চিন্তাভাবনার সাথে অধ্যয়ন করার মাধ্যমে। আল্লাহর কিতাবের মাহাত্ম্য দিয়ে আল্লাহর মাহাত্ম্য অনুধাবন করার মাধ্যমে, আল্লাহ তাআলার মহান নাম ও গুণাবলী নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মাধ্যমে।
দুই. পরিমাণে কম হলেও নিয়মিত ও বিরতিহীনভাবে নফল আমল আদায় করা। কোন মুসলিম উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- খুব আবেগপ্রবণ হয়ে প্রথম ধাপে অতি বেশি নেক আমল করা। এটি নবীজি কারীম (সা.) এর আদর্শ নয় এবং উম্মতের প্রতি তাঁর ওসিয়ত নয়। আয়েশা (রা.) নবীজি (সা.) এর আমলকে বিশেষিত করতে গিয়ে বলেন: “তাঁর আমল ছিল নিয়মিত”। নবীজি (সা.) নিজে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল- নিয়মিত আমল; যদিও সেটা পরিমাণে কম হোক না কেন”। অতএব, কোন মুসলিম যদি উদ্যমহীনতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায় তাহলে সে যেন নিয়মিতভাবে অল্প অল্প আমল করার চেষ্টা করে। অনিয়মিত বেশি আমলের চেয়ে নিয়মিত কম আমল ভাল।
তিন. নেককার ও উদ্যমীদের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করা। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি আপনার মাঝেও উদ্যম সৃষ্টি করবে। অলস ব্যক্তি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির সাহচর্যে থাকতে রাজি হয় না। অতএব, আপনি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধবের সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করুন। যাদের মধ্যে মুখস্থ করা, ইলম অর্জন করা, দাওয়াতি কাজ করা ইত্যাদি করার মত উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। এ ধরনের লোক আপনাকে ইবাদতের প্রতি, ভাল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবে।
চার. জীবনে যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের জীবনীগ্রন্থ অধ্যয়ন করা। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে। এ ধরনের বইয়ের মধ্যে রয়েছে- আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, লেখক: ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ; উলুউল হিম্মাহ, লেখক: শাইখ মুহাম্মদ বিন ঈসমাইল আল-মুকাদ্দাম এবং সালাহুল উম্মাহ ফি উলুইল হিম্মাহ, লেখক: শাইখ সৈয়দ আফানি।
পাঁচ. এক্ষেত্রে দুআ করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ; বিশেষতঃ শেষ রাতে। যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করতে পারার জন্য তাঁর রবের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে বিফল হয় না। আমরা দুআ করছি- আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করেন। আমাদেরকে উত্তম কথা, কাজ ও উন্নত আচরণের সাথে জীবন যাপনের তাওফিক দান করেন। আমীন।