বিশ্ব ঐতিহ্যের বিস্ময় ইরানের তাব্রিজ বাজার
ধর্ম ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৫:৫২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার
উত্তর ইরানের তাব্রিজ শহরের ‘গ্র্যান্ড বাজার’ মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন একটি মার্কেট। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাদবিশিষ্ট মার্কেট হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছে। ২০১০ সালে ইউনেস্কো স্থাপনাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী এর স্থাপত্যগত বিস্ময়ের বিরামহীন জটিলতার সাথে বিচিত্র পণ্যের সমাহার ও প্রাচ্যদেশীয় মশলার সুঘ্রাণ পর্যটকদের আকর্ষন করে আসছে।
তাব্রিজ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সুবিশাল এই স্থাপনাটি দ্বাদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। বর্তমানে উত্তর ইরানের অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মার্কো পোলো, ইয়াকুত আল-হামাউয়ী, জ্যা শার্দে সহ প্রমুখ পরিব্রাজক তাদের ভ্রমণকাহিনীতে এই বাজার সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক রেশম সড়কের পার্শ্বে অবস্থিত থাকার কারনে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য কাফেলা এর পাশ দিয়ে যাতায়াত করতো, যা একে তৎকালীন বিশ্বের সমৃদ্ধতম এক অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করেছিল।
ষোড়শ শতাব্দীতে তাব্রিজ বাজার তার ইতিহাসের সোনালী সময় অতিক্রম করে, যখন ইরানের সাফাভী সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে তাব্রিজ থেকে শাসনকার্য পরিচালিত হয়েছিল। কিন্তু সপ্তদশ শতকে রাজধানী ইসপাহানে নিয়ে যাওয়ার পর তাব্রিজের সমৃদ্ধির কিছুটা অবনতি ঘটে।
তথাপি বর্তমান অবধি তাব্রিজ বাজারের বাণিজ্যিক গুরুত্ব ও ব্যস্ততা মোটেও কমেনি। উনবিংশ শতকে, ইরানের মোট বানিজ্যের পঁচিশ শতাংশের অধিক তাব্রিজ বাজারে সম্পন্ন হত, যা ছিল রাজধানী তেহরানের মোট বাণিজ্যিক বিনিময়েরও অধিক।
তাব্রিজের ঐতিহাসিক জামে মসজিদ।
সম্পূর্ণ স্থাপনাটি ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সংস্কার হয়ে বর্তমান আকৃতি লাভ করেছে। এর পশ্চিমে তাব্রিজের ঐতিহাসিক জামে মসজিদ, পূর্বে প্রাদেশিক গর্ভনরের আবাসভবন এবং এর উত্তর দিয়ে মেহরানেহ নদী বয়ে গেছে।
তাব্রিজের ঐতিহাসিক জামে মসজিদের অভ্যন্তরীণ মনোরম দৃশ্য
এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রে চল্লিশের অধিক প্রকারের ৫৫০০ টি ভিন্ন ভিন্ন দোকান রয়েছে। এছাড়া এর ভিন্ন ভিন্ন বিশটি গলিপথে ষাটটি সরাইখানা, ত্রিশটি মসজিদ, পাঁচটি হাম্মাম (গোসলখানা), বারোটি বিদ্যালয় এবং পাঁচটি যাদুঘর রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী অন্যান্য বাজারের মত, তাব্রিজের বাজারেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এক বিশেষ অবস্থান রয়েছে। বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায় আর্মেনিয় ও জর্জিয় বংশদ্ভুত খ্রিস্টান ব্যবসায়ীরা প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পে বাজারটি ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু তাতে বাজারটির কার্যক্রম থেমে না থেকে পুনরায় নতুন করে এখানে বাণিজ্যিক লেনদেন শুরু হয়। ১৭৮০ সালে শেষবারের মত ভূমিকম্পে বাজারটি ধ্বংস হওয়ার পর তা পুনর্নিমাণ করা হয়।
অর্থনৈতিক ভূমিকা ছাড়াও, ইরানের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে তাব্রিজ বাজারের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৯ সালের ইরানের ইসলামী বিপ্লবে তাব্রিজের বাজার থেকেই প্রথম বিপ্লবের সূচনা ঘটে।