৮ বছরেও কু-প্রস্তাবের বিচার পাননি নর্থ সাউথের শিক্ষিকা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:৫৬ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার
দীর্ঘ আট বছরেও যৌন হয়রানির বিচার পাননি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা। তৎকালীন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান মো. শাজাহান মিয়া তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তও হয়। তবে এতে হিতে বিপরীত হয়। উল্টো মিথ্যা অভিযোগ আসে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের এক শিক্ষিকাকে রুমে ডেকে নিয়ে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. শাজাহান মিয়া কু-প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অপমান করে শিক্ষিকাকে রুম থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে লজ্জায় বিষয়টি তিনি চেপে যান। এর তিন মাস পরে তৎকালীন উপাচার্য হাফিজ জি এ সিদ্দিকী (২০১৭ সালে মারা যান) অভিযোগকারী শিক্ষিকাকে ডেকে নতুন করে তার চাকরির মেয়াদ নবায়ন করা হবে না বলে জানিয়ে দেন। নবায়ন না করার কারণ জানতে চাইলে বলা হয়, পরিচালনা পর্যদ চায় না বলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই শিক্ষিকা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানের কু-প্রস্তাবে আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আমার সঙ্গে খারাব ব্যবহারও করা হয়। এ বিষয়ে আমি বিচার পেতে ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ জানাই। তবে ইউজিসির কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি তিনি ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানকেও জানিয়েছেন বলে জানান।
এই শিক্ষিকা আরও বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনেক নারী শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন, কিন্তু লজ্জায় কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু আমি দাঁতভাঙা জবাব দিতে ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর পেরিয়ে গেলেও আজও এ অন্যায়ের বিচার পাইনি। একজন বিচারপতির মেয়ে হয়েও যদি আমি যৌন হয়রানির বিচার না পাই, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে বিচার পাবে, প্রশ্ন তোলেন তিনি।
নবায়ন না করার কারণ বুঝতে পেরে পরে ওই শিক্ষিকা লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) লিখিত অভিযোগ দেন। পরে তৎকালীন ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) আতফুল হাই শিবলীকে (অবসরে গেছেন) আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি তদন্ত করে ২০১২ সালের প্রথম দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ ঘটনার কোনো সাক্ষী পাওয়া যায়নি, তাই শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে কিনা-তা প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগকারীর শুধু লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এ তদন্ত করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকার দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে আর কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিষয়টি ইউজিসি থেকে যথাযথ তদন্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।’
ইউজিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণসহ প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তা চাপা পড়ে যায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের হাত শক্তিশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ জানতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।