মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ওলিকুল সম্রাট বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী (রহ.)

ধর্ম ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৫:৫৯ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

কুতুবে রব্বানি মাহবুবে সুবহানি শায়খ সাইয়্যিদ আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) (৪৭১-৫৬১ হিজরি) মুসলিম বিশ্বের পতন যুগে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামের শাশ্বত আদর্শকে।

তার মাধ্যমেই ইসলাম পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছিল। এ জন্যই তার উপাধি ছিল মুহীউদ্দীন। হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদাতের ৭০০ বছর পর হজরত বড় পীরের মাধ্যমেই সেই জায়গা পূরণ হয়েছে।

হাফেজ মো. ইবরাহিম মোহাদ্দেস দেহলভীর (রহ.) কিতাব থেকে জানা গেছে, এক রাতে গাউসে পাক (রহ.) মোরাকাবায় হুজুর (সা.) কে দেখে তার খুশির কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তুমি চাঁদের ১২ তারিখ খুব আনন্দ কর, আন্তরিকতার সঙ্গে সবাইকে নিয়ে। তোমাকে একটি দিন দিলাম, সেটা হল ১১ তারিখ। ঠিক তার এক বছর পর ১১ রবিউস সানিতে হজরত গাউসুল আজম (রহ.) ইন্তেকাল করেন।

পৃথিবীর বহু মুসলিম দেশে ১১ রবিউস সানিতে ফাতেহা শরিফ অনুষ্ঠান হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাঁকে বড়পীর সাহেব বলেন।

শরিয়ত ও তরিকত জগতের সম্রাট হুজুর গাউসে আজম শাহেনশাহে বাগদাদ সাইয়্যিদুনা আবদুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর মাতার নাম সাইয়্যিদা হজরত ফাতেমা সানীয়া (রহ.) এবং পিতা ছিলেন মুসা জঙ্গী দোসত (রহ.)। বাবার দিক থেকে হাসানি আর মাতার দিক থেকে হুসাইনি ছিলেন তিনি।

হজরত গাউসে সাকালাইন (রহ.) এর ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা ও আদর্শ যুগে যুগে সঠিক পথের দিশা দিয়ে আসছে। বর্তমানে অনেক তরিকতের শায়খকে দেখা যায় শরিয়তের বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করেন না।

এ বিষয়ে গাউসে পাক (রহ.) বলেন, বাতেনি রাজ্যের বিভিন্ন পদে যারা অধিষ্ঠিত আছেন, তাদের সবার একমাত্র অভিভাবক হচ্ছেন নবী সম্রাট হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)।

তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি যে পদ এবং যে পুরস্কার পেয়ে থাকেন, তা কেবল রাসূলে মাকবুল (সা.)-এর বদৌলতেই পেয়ে থাকেন। সুতরাং জেনে রাখ, যে ব্যক্তি সুন্নতের গণ্ডি থেকে ইঞ্চি পরিমাণও এদিক সেদিক হবেন, তার পক্ষে আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়া এবং তার সন্তুষ্টিলাভের আশা করা দুরাশা মাত্র।

আর যে তরিকতের সঙ্গে শরিয়তের একটি আদেশেরও বিরোধ থাকে, এমন তরিকত অনুসরণ করে চললে অকপট পরম ধার্মিক না হয়ে বেইমান হতে হয়। [আবদুল খালেক, গাউসে আজম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) পৃ. ১৮২]।

কাদেরীয়া তরিকার প্রবর্তক হজরত গাউসুল আজম আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) প্রিয় রাসূল (সা.)-এর প্রতিনিধি হিসেবে দ্বীনের প্রচার ও প্রসার অক্লান্তভাবে করে গেছেন।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অমূল্য বাণীর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানে ইসলামের প্রকৃত রূপ জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। তার অপরিসীম জ্ঞানের পরিধি, ভাষার মাধুর্যতায় মানব সমাজকে ইসলামের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেছেন।

তার বক্তব্য শোনার জন্য বাদশা থেকে দরিদ্র এমনকি ভিন্ন জাতির মানুষও জড়ো হতো। অতঃপর ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিতে কুণ্ঠাবোধ করত না।

কুতুবুল আকতাব ও গাউসুল আজম (রহ.)-এর অসামান্য অবদানকে প্রখ্যাত লেখকরা তার মহান জীবন ও কর্মের ধারার ওপর প্রচুর গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি নিজেও প্রচুর গভীর তত্ত্বমূলক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা থেকে আমাদের হৃদয়ে তিনি জাগরুখ রয়েছেন।

গাউস পাকের আধ্যাত্মিক কাব্য সংকলন দেওয়ানে গাউসিয়ার কিছু বয়ান না লিখে পারছি না। বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যাসহ ৪৭নং বয়ান : আজ দুনিয়াতে অসতর্ক থেকো না এবং আগামী দিনের চিন্তা থেকে দূরে থেকো না। ব্যাখ্যা : দুনিয়াতে সামান্য অসতর্ক হলেই নফস ও শয়তান তোমার মন-মগজ দখল করে অন্ধকারে নিক্ষেপ করবে। আগামী অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তা তোমাকে উচ্চতম সফলতা দেবে।

মুহিউদ্দীন বন্ধুর প্রতি তাকাল এবং বলল, ‘আমার বারান্দা থেকে পুনরায় চাঁদ উঠেছে।’

ব্যাখ্যা : প্রিয়জন যতবার নেকনজরে তাকায়, ততবারই মনে হয় যেন পূর্ণ চন্দ্র উদয় হয়, বিকশিত হয়। আশেক যে দিকেই তাকায়, মাশুকেরই পূর্ণরূপ দেখার তড়পানি থাকে। তলব করে পূর্ণ দিদার। লানতারানি বলে সৃষ্টি ও আত্মবৈচিত্র্যকে কেন্দ্র করে মোরাকাবায় লিপ্ত করে দেয়, যাতে পিপাসা বাড়েই শুধু।

হে রেজওয়ান (জান্নাতের রক্ষক) তুমি কত দিন আমাকে জান্নাতের শরাব দান করবে? তোমার শরবতে আমার পিপাসা নিবৃত্ত হবে না।

ব্যাখ্যা : জান্নাতের নাজ-নেয়ামত আশেক বান্দাদের তৃপ্ত করবে না যতক্ষণ না মাশুকের দিদার হবে।

৭৫ নং বয়ান : যদি তোমার আকাক্সক্ষা থাকে, তবে তোমার রাত জাগরণ কই? কোথায় তোমার খোদার জন্য নির্জন ইবাদত।

ব্যাখ্যা : আল্লাহর মোবারক সাক্ষাতের আরজু যার মধ্যে আছে তার নিরলস নির্জন ইবাদতে মশগুল থাকা আবশ্যক। রাত জাগরণ, অধিক মাত্রায় রোদন, আহাজারি, দীর্ঘশ্বাস তার জন্য ফরজ তুল্য, নয়তো যে সাক্ষাৎ প্রার্থীর দাবিতে মিথ্যুক। এত ইচ্ছা করলেই হয় না। উদ্যোগ থাকা চাই। তবেই তওফিক বর্ষিত হবে। আমিন সুম্মা আমিন।

প্রেম দিয়ে করেছ আমায় পরিপূর্ণ।

তাই তো দিশাহারা হয়ে রই সম্পূর্ণ।

প্রেম সুধা পানে হয়ে থাকি নিমগ্ন।

ইয়া গাউসে পাক হৃদয়ের তড়পানি করো না বিচ্ছিন্ন।