কর্মবিরতি বন্ধ করে পোশাক শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান বিজিএমইএর
নিজেস্ব প্রতিনিধি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
গত ৮ ডিসেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও গাজীপুরে শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় একের পর এক পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে কর্মবিরতির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ঘটেছে ভাংচুর ও পুলিশের টিয়ার শেল ছোড়ার ঘটনাও। এ অবস্থায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল শ্রম পরিস্থিতি-বিষয়ক জরুরি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বিজিএমইএ সম্মেলন কক্ষে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি, সহসভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাছির, পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন, পরিচালক আনোয়ার হোসেন মানিক, পরিচালক আ ন ম সাইফউদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ প্রমুখ।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আপনারা অবগত আছেন যে কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের ফকির নিট নামের একটি ফ্যাক্টরি থেকে ঘটনার সূত্রপাত হয়, পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জের আরো দু-চারটি ফ্যাক্টরিতে প্রবলেম হয়। সে সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। তারপর গাজীপুরের কোনাবাড়িতে চার থেকে পাঁচটি ফ্যাক্টরিতে প্রবলেম হয়েছিল, সেগুলোও সমাধান হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে চার-পাঁচদিন আগে আশুলিয়ায় দু-একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এরপর আস্তে আস্তে আরো কিছু ফ্যাক্টরিতে কাজ বন্ধ হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম হয়তো এটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গতকালও আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল বিভিন্ন জায়গা থেকে যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু দেখা গেল শ্রমিকদের কর্মবিরতি বন্ধ না হয়ে আরো বাড়ছে। সে জন্যই আজকে আপনাদের কাছে আমাদের ব্যাখাটা দিচ্ছি। যেহেতু নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে আন্দোলনের কথাবার্তা চলছে। সেজন্য আমরা আমাদের নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে ব্যাখ্যাটা দিতে চাচ্ছি।
তিনি বলেন, আজকের (বুধবার) এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শ্রমিক ভাই-বোনদের উদ্দেশ করে বলছি, বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই আপনাদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, পাশাপাশি বিজিএমইএও শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই শত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও ২০১০ থেকে ২০১৮ সময়ে পোশাক শিল্পের মজুরি বৃদ্ধি করেছি ৩৮১ শতাংশ। আপনাদের আশ্বস্ত করছি নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করব। যদি কোনো শ্রমিক ভাই ও বোনের আপত্তি থাকে নতুন কাঠামোর বেতন নিয়ে, কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ সমাধান করতে না পারলে বিজিএমইএর কাছে আসবেন অথবা সরকারের কাছেও যেতে পারেন।
সরকার ঘোষিত মজুরি কাঠামো নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জাতীয় নির্বাচনের আগে আপনাদের উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপতত্পরতায় লিপ্ত হয়েছে, এমন মত প্রকাশ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই ২০১৩ সালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামো করা হয়েছে। নতুন কাঠামো নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে থাকেন তা উদ্দেশ্যমূলক। আপনারা আপনাদের কর্মস্থলে ফিরে যান, কাজ করুন। যদি কোনো সমস্যা থাকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে যখন আপনি নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বেতন পাবেন তখন আপনারা কারখানার সঙ্গে সমাধান করবেন, না পারলে বিজিএমইএতে আসবেন।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, নতুন কাঠামো ইমপ্লিমেন্ট হবে জানুয়ারিতে বেতনের সময়, তখন তারা বুঝতে পারবে তাদের কোন গ্রেডে বেতন ছিল কী হয়েছে। তাহলে আজকে ফ্যাক্টরি ভাংচুর করা হচ্ছে কেন? আজকে ফ্যাক্টরির কাজ বন্ধ হচ্ছে কেন? আমি মনে করি একটা দীর্ঘ দুরভিসন্ধি নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাচ্ছি যে সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য এ জিনিসটা করানো হচ্ছে। বেছে বেছে ভালো ভালো ফ্যাক্টরিতে এগুলো করা হচ্ছে।