ভালো নেই কমেডি অভিনেতারা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪৩ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০১৯ সোমবার
একটি সিনেমায় দর্শকদের হাসি আনন্দ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন কমেডিয়ানরা। চলতি বছরের গেল ৬ এপ্রিল না ফেরার দেশে পারি জমান কিংবদন্তি কমেডিয়ান টেলি সামাদ। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তার শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট মারা যান ফরিদ আলী। ২০০৩ মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত কমেডিয়ান দিলদার। বর্তমানে চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, নেই কমেডিয়ানরাও। দীর্ঘদিন ধরে আছে কমেডিয়ানের সংকটও রয়ে গেছে চলচ্চিত্রে।বর্তমানে যেজন কমেডিয়ান রয়েছে তাদের সম্পর্কে তুলেধরা হলো-
আফজাল শরীফ
জনপ্রিয় কমেডিয়ান আফজাল শরীফকে মঞ্চ, নাটক ও সিনেমায় দেখা গেছে । এখন পর্যন্ত অভিনয় করেছেন পাঁচ শতাধিক ছবিতে। অভিনয়ের সর্বোচ্চ স্বীকৃতিস্বরূপ বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন আফজাল শরীফ।বর্তমানে টুকটাক অভিনয় করে গেলেও নানা রকম শারীরীক সমস্যায় ভুগছেন তিনি।নিয়মিত থেরাপি নিতে হয় তাকে। শিগগিরই দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা নিতে যাবেন তিনি। তার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ২০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন আফজাল শরীফের হাতে। এরপর থেকে চিকিৎসার আর ত্রুটি হয়নি তার। বর্তমানে আফজাল শরীফ অভিনীত ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ‘মা আমার বেহেস্ত’ও ‘শ্বশুবাড়ি জিন্দাবাদ টু’।
সুরুজ বাঙালি
জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা সুরুজ বাঙালি ভালো নেই। হৃদরোগে ভোগার কারণে দীর্ঘদিন অভিনয় করতে পারছেন না তিনি। অর্থের অভাবে ওপেন হার্ট সার্জারি করাতে পারছেন না। চিকিৎসা দূরে থাক, অর্থের অভাবে পরিবার নিয়ে বেশিরভাগ সময় উপোস থাকতে হয় তাকে। ২০০৩ সালে হার্টে ব্লক ধরা পড়লে ওই বছরই ২টি এবং ২০১৫ সালে ১টি রিং পরানো হয়। এরপর আবারো হৃদরোগের সমস্যা শুরু হয় তার। দ্রুত ওপেন হার্ট সার্জারির পরামর্শ দিয়েছেন। এই ব্যয়বহুল চিকিৎসার সামর্থ্য তার নেই বলে তিনি এখন ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পীও তিনি। মঞ্চেও কাজ করেছেন প্রচুর। তার একমাত্র পুত্র প্লাটুন বাঙালি পড়াশোনা করেও বেকার। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন সুরুজ বাঙালি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বাঁচতে চান তিনি।
কাবিলা
ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা কাবিলা। ১৯৮৮ সালে ‘যন্ত্রণা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ২০০৩ সালে ‘অন্ধকার’ ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। প্রথম দিকে তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ বলে কমেডিয়ান হিসেবে আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কাবিলা। বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থতার কারণে চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন তিনি। কাবিলা দীর্ঘদিন ধরে কণ্ঠনালি সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকের পরামর্শমতো খুব বেশি জরুরি না হলে তিনি কথা বলতে পারেন না। কোনো সিনেমার ডাবিং করছেন না। এখন আরামবাগের বাসাতেই সময় কাটে কাবিলার।
কাজল
ঢাকাই সিনেমায় এক সময়ের দাপুটে কমেডিয়ান ছিলেন খান জয়নুল। তাকে দেখেই কাজল এসেছেন কৌতুকাভিনয়ে। নিজেও একজন জনপ্রিয় কমেডিয়ানে পরিণত হয়েছেন কাজল। বিটিভিতে প্রচারিত শহীদুল হক খানের ‘রংধনু’তে কাজল প্রথম পারফরমেন্স করেন কাজল। প্রায় সত্তরটি ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে তার। এহতেশাম পরিচালিত ‘চোখে চোখে’ ছবিতে কাজল প্রথম অভিনয় করেন। এরপর তিনি এহতেশামেরই ‘চাঁদনী রাতে’সহ ‘টাকার অহঙ্কার’, ‘এক পলকে’, ‘সেই তুফান’সহ আরো বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন। নব্বই দশকের শুরুর দিকে টিভিতে জনপ্রিয়তার সূত্র ধরে সিনেমায় যান। তরুণ বয়সের সেই ক্রেজ কাজলের এখন না থাকলেও স্টেজ শো করেই জীবন চলে তার।
চিকন আলী
এই সময়ের কমেডি অভিনেতা চিকন আলী। ২০০৬ সালে ‘রঙিন চশমা’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় চিকন আলীর। তারপর থেকে নিয়মিত অভিনয় করে কাবিলা, আফজাল শরীফের পর কমেডি অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন প্রায় এক ডজন ছবিতে। এর বাহিরে প্রথম বাংলাদেশি কমেডিয়ান ইউটিউবার হিসেবে ইউটিউব থেকে সিলভার বাটন স্বীকৃতি পেয়েছেন চিকন আলী। ইউটিউবে চিকন আলীর ‘সি এ কমেডি চ্যানেল’-এর বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২ লাখের উপরে।