রোববার   ১৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩১   ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সানি লিওনও চাননি তার এই জীবন!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

সানি লিওন। তাকে চেনেন না এমন মানুষ কমই আছেন। ছোট থেকে শুরু করে বুড়ো বয়সের সকলেই তাকে দেখেন খুব গোপনে। সকলেই জানেন তার মধ্যে একটা রহস্য আছে। কারণ, সবাই এটা জানেন যে, বলিউডের এই তারকা এক কালে ছিলেন নীল ছবির নায়িকা। আর সেই কারণে নায়িকা হওয়া সত্ত্বেও সানিকে বলিউডের এলিট ক্লাসের অবমাননার শিকার হতে হয় প্রায়ই। এখনো তার সঙ্গে অনায়াসে অভিনয় করতে চান না কেউই।

আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য থাকছে এই নীল ছবির নায়িকার জীবন বৃত্তান্ত। আজ জানানো হবে তার শুরুর গল্প; কীভাবে তিনি বলিউডে এলেন, আর কীভাবে প্রথম তিনি নীল ছবির নায়িকা হলেন?

চলুন প্রথমে শেষের গল্পটা জেনে নিই। কিভাবে সানি নীল দুনিয়ার নায়িকা হলেন? এই গল্পটা খুব কম লোকেরই জানা। তাই সেই অজানা অধ্যায়টাই আগে জানা যাক। সানি লিওন নয়, ওই গল্পটা মূলত করণজিৎ কউরের। পাঞ্জাবের মেয়ে ছিলেন তিনি। বাবা-মা চলে এসেছিলেন কানাডায়। 

তার শুরু: সানি ১৯৮১ সালের ১৩ মে কানাডার ওন্টারিওর শিখ পরিবারে জন্ম নেন। বাবার জন্ম হয় তিব্বতে, মা’র হিমাচল প্রদেশে। এরপর এক বিরল রোগে মারা যান তারা বাবা। মূলত ২০১০ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

সানি লিওনের পড়াশোনার অধ্যায় শুরু হয় কানাডাতেই। ওই সময় ক্লাসে খুব নম্র আর লাজুক বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। তবে নীল ছবিতে আসার নেপথ্য কাহিনী ছিল, সানির বয়স তখন সবে ১৯ বছর। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ডিভিডি এনে নীল ছবি দেখছিলেন তিনি। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হলেন সানি। তবে অনুপ্রাণিত হলেও তখনও এই রাস্তায় নামেননি তিনি। ওই সময় প্রথম সানি একটা জার্মান বেকারিতে চাকরি পান। পরে একটা ট্যাক্স অ্যান্ড রিটায়ারমেন্ট ফার্মে কাজ নেন। 

সানির জীবন পাল্টে যায় যখন তার পরিবার কানাডা ছেড়ে আমেরিকার চলে যায়। তবে ওই সময় সানি একাই কানাডায় অবস্থান করছিলেন। তার একটি কারণও ছিল, তিনি তখন অরেঞ্জ কাউন্টিকে পেডিয়াট্রিক নার্সিংয়ের ওপর পড়াশোনা করছেন। তবে ওই সময় তাকে নিজের খরচ নিজেরই চালাতে হত। যা আয় করতেন তা দিয়ে দারুণ কষ্ট হয়ে যেত।

যেভাবে সানি হলেন করণজিৎ: সানির এক বান্ধবী ছিলেন বার ড্যান্সার, যিনি রাতের বেলা বারে নাচ দেখাতেন। তার সূত্রে সানির পরিচয় হয় জন স্টিভেন্সের। তিনি হলেন মূলত একজন এজেন্ট। সেই এজেন্টের হাত ধরে সানির পরিচয় হয় জে অ্যালেনের সঙ্গে। যিনি হলেন পেন্টহাউজ ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফার। 

আরেকটা বিষয় পরিস্কার করে রাখি পাঠকদের, সানি ছিলেন করণজিতের ডাকনাম। আর এর সঙ্গে পেন্টহাউজের সাবেক মালিক বব গুচিওনে যোগ করেন লিওন। ব্যাস, এরপর করণজিৎ হয়ে গেলেন সানি লিওন। এরপর থেকে করণজিৎ-এর চেয়ে সানি লিওন নামটি বেশী জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর বারের থাকা মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর নীল ছবির প্রস্তাব পায় সানি। এরপর বেশ দ্বিধাদ্বন্দে ছিলেন তিনি। একদিকে অর্থকষ্ট অপরদিকে পুরো দুনিয়ার কাছে ইজ্জত দেখানো। দুটি বিষয় বেশ ভাবাচ্ছিল সানিকে। এছাড়াও তিনি পরিবারের অমতে কিছু করতে চাইতেন না। পরে পরিবারকে বিষয়টি জানালেন। তারাও বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যায়। এরপর সানির অন্ধকার জগতের ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০০১ সালে।

তবে ওই সময়ে সানি এতটা নির্লজ্জ ছিলেন না। মানসিকভাবেও তেমন শক্ত ছিলেন না। তবে পর্দায় একেকদিন একেকজন পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে হত। ব্যাপারটা সানির কাছে ততটা সাধারণ ছিল না। মানসিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ছিলেন তিনি। অত্যাচার আর বিভৎষ লাগতো তার কাছে এসব। যা তিনি নিজেই আলোকপাত করেছিলেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। 

ওই সময় তিনি ভালো অর্থ কামিয়েছেন, তবে শান্তি পাননি মোটেও। তবে সানির জীবন পাল্টে যায় মাত্র ১০ বছরে। ২০১১ সালে এসে তিনি ভারতের বিগ বসে নাম লেখান। তখনই সানির ওপর নজর পড়ে মহেশ ভাট কন্যা পূজা ভাটের। তিনি তাকে একটি প্রস্তাব দিয়ে বসেন, এমন প্রস্তাব যা সানি কোনদিন কল্পনা করেননি।

‘জিসম ২’ ছবির জন্য সানিকে প্রস্তাব দেন মহেশ ভাট কন্যা পূজা। অন্ধকার জগৎ থেকে ফিরে আসার এমন সুযোগ হাতছাড়া করেননি সানি। এরপর বলিউডে নাম লেখান তিনি। এদিকে, ‘জিসম ২’ ছবিটিতে অভিনয় করেন সানি। এরপর একে একে বলিউডের অনেক কাজে সরব হন সানি। এমনকি অনেক আইটেম গানেও অভিনয় করেছেন তিনি। আর এখন সময়ের সেরা আইটেম গার্লদের মধ্যে একজন হলেন এই সানি লিওন।

২০১১ সালে বলিউডে নাম লেখানোর পর সানি লিওন বিয়ে করেন ড্যানিয়েল ওয়েবারকে। যিনি তার সঙ্গে নীল ছবিতে কাজ করেছিলেন। তাদের জমজ ছেলে সন্তান আছে। এছাড়া ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মহারাষ্ট্রের লাথুর গ্রাম থেকে একটি ২১ মাসের মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন এই দম্পতি। তবে করনজিৎ কউর কিংবা সানি লিওন যাই বলি না কেন, বলিউডে আসার পর সানি পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। অন্ধকার জগত থেকে ফিরে বলিউডে সুনাম কুড়িয়েছেন, অর্থবিত্তও কম কামাননি তিনি। তবে, শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি যে, আগের জীবন ভুলটা আজীবনই তার নামের সঙ্গে লেগে থাকবে। কারণ অতীত তো অতীত, যা কখনো ভুলে যাওয়ার নয়।