শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মেহেদি রাসেলের কবিতা

নিউজ ডেস্ক :

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৪৪ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

আহবান

বাড়িয়ে দাও হাত দুখানি
হৃদয় মেলে ধরো
আমার বুকের বকুলতলায়
পুষ্প হয়ে ঝরো।

 

বসন্তকাল, ব্যাকুল বাতাস

রঙিন পাতা নাচে
পথের ধারে বৃক্ষসারি
মুগ্ধ হয়ে আছে।

 

পলাশ এবং শিমুল বনে
অযুত অগ্নিরেখা
অতিক্রান্ত ধুলোর মেঘে
আবার পত্রলেখা।

 

আবার সুললিত পাখি
কণ্ঠে তোলে গান
বুকের বকুলতলা আজও
পুষ্পবিহীন, ম্লান।

 

বধিরতা

কোনোকালে এই তামাশানগরে

ফের যদি আসি—তখনো কি এমন বধির

রয়ে যাবো প্রভু? শ্যামল চিলের চোখে

মাছের ঝিলিক আর জলের প্রবাহে

সময়ের নীল রেল শুধু চলে যায় দূরে—

 

মৃত প্রেমিকার নাভি তবু তো সবুজ চিরকাল

মর্মরিত পাতা ঝরে, রেল যায়, হাড়ের কোটরে যায়

ললিত লাবণ্য চোখের। তবু তার তনুর ধনুক

ধরে থাকে জীবনের সীমাহীন সম্ভাবনা—

বধিরতা ভেদ করে ঢুকে পড়ে মর্মের গভীরে,

শব্দ নয় কেবল কম্পন বুঝি তার।

 

বধিরতা কাকে বলে তবে? এরকম নির্বিকার

নির্লিপ্তির নীল নদী বয়ে যেতে দেয়া?

দৃশ্যের ভেতরে শুধু অনুষঙ্গের মতো থাকা?

 

বিস্মৃতির গাছে গাছে

তার নাম লিখে রাখা?

 

যাওয়া

কেন তুমি অমন করে দুহাত বাড়ালে
রাত্রিবেলা চাঁদ ডুবেছে মেঘের আড়ালে
মেঘ তো নেই, কেবল আকাশ, কেবল ঝরাপাতা
হাওয়ার ভেতর অভিসন্ধি, প্রাচীন লোকগাঁথা

 

কে গো তুমি, শ্যামল বরন শরত কালের বায়ু
একটু বসো ছায়ার তলে, একটু পরমায়ু—
অরূপ তুমি, অচিন আমি, অলীক গায়ে যাই
যাকে খুঁজছি পথে পথে রূপ তো জানি নাই

 

কতকালের আনন্দ আজ পথের বাঁকে বাঁকে
এমনি করে ধুলোর ভেতর একলা পড়ে থাকে

 

সন্ধ্যায়, তোমাকে

স্মৃতির ভেতরে ছাড়া তুমি আর কোথাও নেই

 

সন্ধ্যার পেয়ালা ছুঁয়ে বিতৃষ্ণা পেল ঠোঁট

কণ্ঠনালীতে তরল আগুন দাউ দাউ জ্বলে

মাংসের ঘ্রাণে ভরে ওঠে রেস্তোরাঁ

নরম জোছনা নামে কি বারান্দায়?

সবখানে সব আছে, কেবল তুমিই নেই চরাচরে

কেবল ধোয়ার ভেতর নিভে যায় নিদ্রার অবকাশ

শিশিরের ফোঁটা ঝরে নিরালা বাতাসে

তোমার স্মৃতি কেন অহেতুক মনে আসে আজকাল?

 

যেহেতু পৃথিবী প্লাবিত রগরগে যৌনতার গাঢ় রসে

অধিক সঙ্গমহেতু বিবমিষা পেলে

পাশ ফিরে শুয়ে শিশুর মতন ঘুমে

বৃথাই সন্ধান করি তোমার আঙুল

 

স্মৃতির বাইরে তুমি কোথাও থাকো না।

 

আরোগ্য

তোমার চোখের বিষণ্ণতার জল 
টুপ করে আজ ঝরে পড়বে নাকি?
দ্বিধান্বিত দুপুর বেলায় তুমি
কেন এমন আহত, একাকী!

 

তোমার সকল পথের ধারে ধারে
এত কান্না এত অভিমান!
অপ্রকাশের আড়াল থেকে তারা
গাইতে থাকে বিষাদ মাখা গান।

 

সন্ধ্যা যখন গভীর হয়ে আসে
ডাক পাঠিও পাখির কলতানে
উড়িয়ে দেব তোমার দুঃখবোধ
মর্মরিত পাতার অভিজ্ঞানে।