রোববার   ১৭ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শাহরুখ কি পারবেন নিজের জায়গা ফিরে পেতে?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। একদিনে কিন্তু এই জায়গায় আসেননি তিনি। যুগ যুগ ধরে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে এই আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন শাহরুখ। তবে এতদিনের সে সুনাম হয়ত তা আর ধরে রাখতে পারছেন না এই কিং খান। ধুলোয় মিশে যাচ্ছে তার সব উপাধি। বলিউডে বর্তমানে বেশ সমালোচনা চলছে তাকে নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘জাব হ্যারি মেট সেজাল’ ফ্লপ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রীতিমত তুলোধুনোর স্বীকার হতে হচ্ছে একসময়ের বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খানকে। এরপর থেকে অনেকেই তার ‘কিং খান’ উপাধি বাদ দিয়ে ‘ফ্লপ খান’ হিসেবে সম্বোধন করছেন। 

শাহরুখ খানের ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’-র পরে শেষ তিন বছরে তেমন কোনো হিট ছবি পাওয়া যায়নি, যা দিয়ে তিনি মানুষের সমালোচনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। মুক্ত করে নিতে পারবেন তার সব পুরনো অপবাদ। শেষমেশ শাহরুখ খান এখন অপারগ। তাই তাকে শুনতে হচ্ছে সবধরণের হেয়মূলক কথা। তবে এত বড় একজন বলিউড বাদশাহর এমন দশা কেন? কী এমন হয়েছে শাহরুখ দিনকে দিন নীচের দিকে নামছেন?

ভারতে শেষ তিন চার বছরে শাহরুখ খানের মোট ছবি মুক্তি পায় পাঁচটি। তার মধ্যে ২টি ছবি পুরাই ফ্লপ। যা থেকে মূল আয়’টিও আসেনি। কোনোরকমে কিছু আয় এসেছে, যা দিয়ে মানুষের সমালোচনা চাপিয়ে রাখার মত নয়। অথচ তার আগের ছবি থেকে যে পরিমাণ আয় আসতো, আর এই আয়ের পরিমাণ হিসেব করে কিন্তু তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে কিং খান হিসেবে গড়তে সক্ষম হয়েছেন। তার ২০০১-সালে রিলিজ পাওয়া সিনেমা ‘কাভি খুশি কাভি গাম’-এই পর্যন্ত ভারতে ব্যবসা করে চলেছে। এছাড়াও শাহরুখের আরো অনেক সিনেমা আছে যেগুলো এখনো হলে দর্শক টানছে। সবই কিন্তু তার পুরনো ছবি। এছাড়া ২০১৫-সালে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ এটিও ব্যবসা সফল। এরপর থেকে তিনি আর আলোর মুখ দেখেননি। শেষ তিন বছরের আগের ১৫ বছরে লিড রোলে রিলিজ পাওয়া ২২ টি মুভির মধ্যে তার ফ্লপ ছিল মাত্র তিনটি, বাকি বেশিরভাগই ব্লকবাস্টার সুপারহিট ছবি। সেই শাহরুখ খানের কিনা শেষ ৩ বছরে এই দশা? তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না কিং খান ভক্তরা। তারা এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন।

এছাড়া শাহরুখ খান ছাড়া বাকি খানদের অবস্থা এতটা খারাপ না যে, যতটা কিং খানের হয়েছে। যেখানে অন্য খানদের সিনেমা এখনো ২৫০ কোটির ক্লাবে পৌঁছাতে সময়ের ব্যাপার মাত্র, সেখানে শাহরুখ ১০০ কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তবে কিং খানের ক্ষেত্রে কেন এমনটা হচ্ছে। তিনিতো এমন ফ্লপ নায়ক ছিলেন না। চলুন অনুসন্ধান করে জেনে আসি। এর মূল কারণ-

শাহরুখের বয়স এখন ৫১ বছর। এটা সত্যি, সালমানেরও কিন্তু কম নয়। তবে শাহরুখের ক্ষেত্রে সে চাপটা বেশি বুঝা যায়, যেটা সালমানের যায় না। এমনকি ‘জাব হ্যারি মেট সেজাল’-এ তো রীতিমত তাকে অনেক ক্লান্ত দেখিয়েছে। অন্যদিকে সালমানকে এখনও ৩০ বছর বয়সি দেখায় স্ক্রিনে, আর আমির তার লুক নিয়ে এত বেশি এক্সপেরিমেন্ট করেন যে বুঝাই যায় না বয়স আসলে কত? বাকিদের কথা আর নাই বলি। আর অক্ষয় কুমারও নিজের বয়স বেশ ভালোভাবে ধরে রেখেছেন।

আপনারা আরেকটু ভালভাবে খেয়াল করলে দেখবেন ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’এ কিং খানকে দেখতে অনেকটা ঠিক লেগেছিল কিন্তু তার পরের মুভিগুলোতে শাহরুখ হালকা চাপদাড়ি রেখে তার চেহারার বয়স্কভাব লুকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসলে এই দাড়িতেও লুকে তেমন সফল কিছু আসছে না। কারণ বলিউড এখনো লুককে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। অমিতাভও তার নায়কজীবনের শেষ মুভিগুলোয় দাড়ি রেখে বয়স ঢাকার চেষ্টা করেছিলেন, তেমন সফল হননি। পরে ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি রেখে নায়ক ভুমিকা ছেড়ে সাইড এক্টর হয়ে যান এবং সফলতা পান। শাহরুখেরও কিন্তু সেই দিন চলে এসেছে।

আরেকটি চিরচায়িত সত্য কথা শাহরুখ খান কিন্তু রোমান্টিক হিরো হিসেবে বেশ সফল ছিলেন, তার ব্লকবাস্টার সব সিনেমাই কিন্তু বেশিরভাগ এই ধরণের সিনেমা। কিন্তু এখন যেহেতু এখন আর রোমান্স করার মত বয়স নেই, তাই ‘দিলওয়ালে’ বা ‘জাব হ্যারি মেট সেজাল’ টাইপের রোমান্টিক মুভিতে তাকে মানায় না। সালমান যেমন আগেই রোমান্টিক জোন ছেড়ে অ্যাকশন বা ‘ভাইজান’ ইমেজসমৃদ্ধ মুভিতে চলে গেছেন আর আমির-অক্ষয় কনটেন্টনির্ভর মুভিতে ‘অ্যাক্টর’ হিসেবে অভিনয় করছেন তবে শাহরুখ কেন সেই ইমেজে পরিবর্তন আনছেন না, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তার মত এত বড় সুপারস্টারের এটা বুঝা উচিত যে, কিসে তাকে ভালো দেখাবে আর কিসে নয়।

মূলত এখন শাহরুখ ‘ফ্যান’ বা ‘রাইস’ টাইপের নন-রোমান্টিক বা লেস-রোমান্টিক মুভি করলেও দূর্বল কন্টেন্টের কারণে তা মার খেয়ে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, শাহরুখকে এখন রোমান্টিক হিরো থেকে বের হতে হবে, সে সঙ্গে কন্টেন্টে বেশ মনোযোগী হতে হবে নতুন অমিতাভের মত সাইট ক্যারেক্টারে কাজ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হবে। কারণ তাকে এখন নায়ক হিসেবে মানায় না, সেটা বুঝতে হবে।

আরেকটা ব্যাপার ইদানিং লক্ষ্য করবেন, সেটি হলো শাহরুখের বর্তমান কোনো ছবিতে তেমন কোন চরিত্র নেই। তার ছবিতে আগের মতো তেমন কোনো জৌলশ নেই। তাছাড়া সমসাময়িক সব সিনেমাগুলোর চরিত্রই প্রায় একই রকম। এরোগেন্ট টাইপের। জব হ্যারি মেট সেজল-এ এরোগেন্ট টুরিস্ট গাইড, রাইসে এরোগেন্ট গ্যাংস্টার, ফ্যানে এরোগেন্ট সুপারস্টার, দিলওয়ালেতে এরোগেন্ট প্রেমিক। এইভাবে বিভিন্ন ছবিতে বর্তমানে হাজির হচ্ছেন বলিউড বাদশাহ। শাহরুখ আগে ভিন্নধর্মী সব রোল করতেন। কিন্তু এখন হয়ত তেমন চরিত্র পান না। তাই কিং খানের ফ্যানরা আসলে আগের শাহরুখের সঙ্গে বর্তমানকে মেলাতে পারছেন না।

এছাড়া গেলো ১০ থেকে ১২ বছরে বলিউডে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে শাহরুখের মধ্যে তার লেজ মাত্র নেই। তাদের গল্প এবং সিনেমেটোগ্রাফিতে পরিবর্তন এসেছে। বলিউড অভিনেতা এবং পরিচালকদের নতুন জাত পেয়েছে। এটি এমন একটি যুগ যেখানে ইরফান খান এবং নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর মতো অভিনেতারা তাদের নিজস্ব ডানায় ভর করে সুপারস্টার হতে পেরেছেন। যেখানে নতুন পরিচালকরা সত্যিই ভিন্ন-ভিন্ন জিনিস সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

সালমান একমাত্র সুপারস্টার যিনি এই নতুন যুগে তার পুরাতন ব্যক্তিত্বকে ধরে রেখে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে শাহরুখ কিং খান হয়েও তেমন কিছুই আজো দেখাতে পারেননি। আমির ও অক্ষয় নিজেদেরকে ভেঙ্গে পুনরায় নতুন রূপে গড়েছেন এবং বাজার ধরে রেখেছেন। শাহরুখ নব্বইয়ের দশকে ওভারসিজ বাজার তৈরি করে এবং এখনো বাকিরা সেই বাজারের ওপরেই নির্ভরশীল। তবে দাঙ্গাল চীনে নতুন বাজার তৈরি করেছে যেখান থেকে মুভিটি ১২০০ কোটি টাকা তুলে এনেছে! শাহরুখের সিনেমাগুলো এই নতুন বলিউডের মধ্যে খাপ খাচ্ছে না ঠিকভাবে। হয়ত এখনো তিনি নিজে বুঝে উঠতে পারছেন না, নতুনদের মধ্যে নিজেকে কিভাবে সাজাবেন। অদূর ভবিষ্যতে শাহরুখ কি পারবেন নিজের জায়গা ধরে রাখতে? তা এখন সকলের জানার আগ্রহ।