গ্যারান্টি দিচ্ছি সেই পুলিশ নারায়ণগঞ্জে থাকবেনা : এসপি হারুন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৪৮ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৯ মঙ্গলবার
সাধারণ মানুষ ও সাধারণ ব্যবসায়িকে হয়রানি কিংবা চাঁদা দাবি করা কোন পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জে থাকতে পারবেননা বলে গ্যারান্টি দিয়েছে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্যারান্টি দিতে চাই কোন সাধারণ ব্যবসায়ীকে, সাধারণ মানুষকে পুলিশ সদস্যরা কোন ধরণের হয়রানি করবেনা। যদি হয়রানি করে তবে সেই পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জে থাকবেনা।
গত পাঁচমাসে কোন ব্যবসায়ীকে কোন পুলিশ সদস্য হয়রানি করার সংবাদ আমি পাইনি। এই সময়ের মধ্যে কোন পুলিশ সদস্য কারো কাছ থেকে কোন চাঁদাও নিয়েছে এই রেকর্ডও আমি পাইনি। আপনারা পেলে আমাকে বলবেন। এই নারায়ণগঞ্জ যেভাবে স্বস্তিতে আছে রমজানেও মানুষ এভাবে স্বস্তিতেই থাকবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।’
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নগরীর বিএসবিএল কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আসন্ন মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জঙ্গীবাদ ও নাশকতা প্রতিরোধে জাতীয় ও জেলা ভিত্তিক ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে এই মতবিনিময় সভা আয়োজন করেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টিজ।
এসপি হারুন আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আমাদের বিভিন্ন সময় নানা কাজে সাহায্যে করছেন। সাধারণ মানুষও স্বস্তিতে রয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা কখনোই ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা। অনেকে গুজব ছড়াতে পারে এসব গুজবে কান দিবেননা। আমার দরজা খোলা আছে আমাকে বলবেন। কোন পুলিশ সদস্য যদি কোন ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে, মাদকের সাথে যুক্ত থাকে তাহলে সে পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জে থাকতে পারবেনা। অনেক পুলিশ সদস্য যাদেরকে আপনারা দেখেছেন ঘুরেফিরে নারায়ণগঞ্জে ছিলো আজ কিন্ত তারা নারায়ণগঞ্জে নেই। আস্তে আস্তে সব চলে যাবে।
তিনি বলেন, আমি সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমি কোন সন্ত্রাসীকে ছাড় দিচ্ছিনা। আপনি দলের সাথে জড়িত হয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখল করবেন, মাদক ব্যবসা করবেন, ইয়াবা দিয়ে সাধারণ মানুসকে ঢুকিয়ে দিবেন এটা হতে দেবনা। তারা আপনার, সমাজের, দলের কলঙ্ক। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে যারা ব্যবসায়ের নাম করে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এরা কোন ব্যবসায়ী না। পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য দায়িত্ব নিয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখার। নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা প্রতিজ্ঞা করেছে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে কাউকে চাঁদা দিবেনা। সেটি পুলিশ হোক আর সন্ত্রাসী হোক কাউকে আমরা চাঁদা দিবোনা। চাঁদাবাজ যে দলেরই হোক তাকে আপনারা তাকে পাত্তা দিবেননা।
যানজট নিরসনে এসপি হারুন বলেন, আপনারা লক্ষ্যে করেছেন চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ডে ছেচল্লিশটি ডিভাইডার করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে আমরা বহুবার সড়ক ও জনপথকে অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা আমলে নেয় নি। তাই আমরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে এই ৪৬টি ডিভাইডারের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ডিভাইডার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার একটাই কারণ এ রমজান মাসে সাধারণ মানুষ যানজটে ভুগতে না হয়।
তিনি বলেন, বড়বড় দেশগুলোতে প্রতিটি সড়কে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মাইল ঘুরে রাস্তা পারাপার হতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষেরা একটু সুবিধার জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামনে,বাসাবাড়ির সামনে নিজেদেও মত কওে ডিভাইডার রেখে দেন। ফুটপাতের মধ্যে মানুষের চলাচলের পথ আটকে বাস পার্কিং করে রেখে দেয়া হয়। আমরা ফুটপাত হকারমুক্ত,অবৈধ পার্কিং মুক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষে এ কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয় এর জন্য সকলের সম্মেলিত উদ্যোগ ও সহযোগীতা প্রয়োজন।
পুলিশ সুপার বলেন, রমজান মাস অন্য সকল মাসের চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেমূল্যের দাম, রাস্তাঘাট,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সকল কিছুই আমাদের নজরদারীতে রাখা অত্যন্ত জরুরী। এছাড়া এ মাসেই ব্যবসায়ীরা নির্যাতন ও চাঁদাবাজির শিকার হয়, মাদক ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে।
এসপি হারুন বলেন, নারায়ণগঞ্জকে অন্যসব জেলার সাথে তুলনা করলে চলবে না। নারায়ণগঞ্জ একসময় প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে খ্যাত ছিলো। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার এই নারায়ণগঞ্জ। এ এলাকার দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত বোধ করছি।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত। এ নারায়ণগঞ্জে কল-কারাখানার সংখ্যা অধিক। আপনারা লক্ষ্যে করে দেখবেন গত ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকরা মিছিল মিটিং করে আসছিলো। কিন্তু আমাদের নারায়ণগঞ্জে একদুদিনের শ্রমিক অসন্তোষের প্রভাব খুব কম হয়ে পড়ে। তার কারণ নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা যেমন ব্যবসা করে ঠিক তেমনি তারা শ্রমিকদের স্বার্থটা রক্ষা করে ব্যবসা করে বলেই নারায়ণগঞ্জে এ ধরণের ঘটনা কম ঘটে। আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে কাজ করছি তারা নারায়ণগঞ্জের মানুষকে স্বস্তি দেয়ার জন্যই কাজ করছি। আমরা সাধারণ মানুষকে শান্তিতে এবং নির্বিঘেœ জীবনযাপনের করতে দিতে চাই। তাই আপনাদেও কাছে বিনীত অনুরোধ করবো আপনারাও আমাদের সাহায্যে করবেন।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্টিজের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান। এছাড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সেলিম রেজা, সাবেক সংরক্ষিত এমপি হোসনে আরা বাবলী, বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মনসুর আহমেদ, ইয়ান মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এম সোলায়মান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।