শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মিলাকে হত্যার হুমকি!

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ৫ মে ২০১৯ রোববার

জনপ্রিয় পপ গায়িকা মিলা ইসলামের ব্যক্তিগত জীবন কাটছে পারিবারিক সংকটে। গত  ২৪ এপ্রিল  ঢাকার বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদকর্মীদের কাছে সাবেক স্বামী পারভেজ সানজারী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন মিলা। সেই সঙ্গে অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নওশীনের সঙ্গে তার স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের কথাও জানান।

এরপর থেকেই মিলার প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ সরগরম শোবিজ অঙ্গন। তবে সেসব পোস্টের বিপরীতে পারভেজ সানজারী গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে মিলার সঙ্গে তার বিচ্ছেদের কারণসহ অনেক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। এরপর  আজ শনিবার নতুন করে আবারো স্বামী পারভেজের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেন মিলা। যেখানে তাকে (মিলা) তার স্বামী পারভেজ বিভিন্ন মাধ্যমে হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন।

মিলার সেই স্ট্যাটাসটি নিচে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-  বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক মিডিয়া’র সন্মানিত সদস্যবৃন্দ, সঙ্গীতাঙ্গনের সদস্য, সঙ্গীতপ্রেমী বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমার কিছু কথা: একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে আইনের উর্ধে ভেবে সীমাহীন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, যখন তাকেই অনৈতিকভাবে আশকারা দিতে থাকে কিছু মহল, তখন নিশ্চয়ই বিবেকবান যে কেউ প্রতিবাদী হবেই। প্রতিটি সমাজেই একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি আছে। আধুনিকতা মানুষকে শুধু অগ্রসারয়মান হতেই শেখায় না, আধুনিকতা মানুষকে শিষ্ঠাচারী হতেও সাহায্য করে। ইংরেজিতে ‘ফ্যামিলী ভেল্যুজ’ বলে একটা শব্দ আছে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় পারিবারিক মূল্যবোধ। আমাদের সমাজে পারিবারিক মূল্যবোধ বিরাজমান বলেই আমরা একটি নির্দিষ্ট প্রথার ভেতর বসবাস করি। আর একারণেই সমাজ অজস্র মন্দ বিষয় থেকে মুক্ত থাকে।

প্রতিটি বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে একে-অপরের প্রতি বিশ্বস্ত হওয়া একান্তই আবশ্যিক। এটা না থাকলে পারিবারিক মূল্যবোধ ভেঙ্গে পড়বে – ধ্বংস হয়ে যাবে সমাজ। আর এর ফলে আক্রান্ত হবে গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা। বিয়ে মানেই হচ্ছে একটি এমন অঙ্গীকার যা আজীবন স্বামীস্ত্রী রক্ষা করেন যে কোনও কিছুর বিনিময়ে। আমাদের মতো পুরুষ শাসিত সমাজে সবামী-স্ত্রী’র মাঝে দাম্পত্য বোঝাপড়া এবং সুখ বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুরুষ বা স্বামীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। কোনো কারণে যদি ওই স্বামীই হয়ে ওঠে দূরাচারী, সে যদি নিজের স্ত্রীর মর্যাদাকে তুচ্ছজ্ঞান করে ক্রমাগতভাবে প্রিয়তমা স্ত্রীকেই প্রবঞ্চিত করতে থাকে, যদি স্ত্রীর অজ্ঞাতে জড়াতে থাকে একের-পর-এক পরকীয়ায়, তাহলে ওই দম্পতির, বিশেষ করে স্ত্রী’র মানসিক অবস্থাটা কেমন হয়, সেটা আপনারা সবাই জানেন এবং বোঝেন। আমাদের এই দেশে প্রতিনিয়ত স্বামীদের এ ধরণের অন্যায় আচরনের শিকার হচ্ছেন নারীরা। এসিডে ঝলসে দেয়া হচ্ছে প্রবঞ্চিতা স্ত্রীদের – নারীদের। সভ্যতার এই সময়ে এসে এমন জঘন্য পরিস্থিতির কষ্ট শুধু ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন।

আপনারা জানেন, আমি এস এম পারভেজ সানজারী ওরফে লেলিন-কে ২০১৭ সালে বিয়ে করি। কিন্তু আমি হতবাক হয়ে লক্ষ করি, সানজারী বিয়ের পর থেকেই কেমন যেনো অচেনা আচরণ করতে থাকে। সে প্রায়ই বিভিন্ন লোকের সাথে লুকিয়ে-লুকিয়ে ফোনে কথা বলতো। আমি জানতে চাইলে সে শুধু মারমুখীই হতোনা বরং নিয়মিতভাবেই আমার ওপর চালাতো অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

সানজারী বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার পর ইউএস বাংলা এয়ার নামীয় একটি বেসরকারী বিমান সংস্থায় পাইলট হিসেবে কর্মরত আছে। এই সুযোগে সে নিয়মিতভাবেই এয়ারলাইন্সের নারী ষ্টাফ এমনকি বিমানবালাদের শয্যাসঙ্গিনী হতে বাধ্য করতো কিংবা ওদের সঙ্গে প্রেমের ভান করে শয্যাসঙ্গিনী করতো, যা এখনও থেমে যায়নি। সানজারী’র নষ্ট লালসা থেকে ইউএস বাংলা’র কোনো নারী সদস্যই রেহাই পাননি। আমার কাছেই এধরণের অজস্র প্রমাণ আছে, যা প্রবঞ্চিত-প্রতারিতরাই বিভিন্ন সময়ে পাঠিয়েছেন।

এখানেই শেষ নয়। সানজারী মিডিয়ার অনেক অভিনেত্রী ও কন্ঠশিল্পীদেরও মিথ্যে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নষ্ট করেছে এবং এখনো করছে। আবার এমন কিছু বিতর্কিত অভিনেত্রীও আছে, যারা টাকা কিংবা অন্য কিছুর লোভে ইচ্ছে করেই সানজারী’র সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছে – দৈহিক মেলামেশাও করেছে এবং এখনো করছে। আমি জানিনা, ওইসব অভিনেত্রীদের স্বামীরা ঠিক কোন পর্যায়ের নির্লজ্জ। নাকি ওনারা অসহায় সেটাও জানিনা। তা না হলে, নিজের স্ত্রীকে অন্য পুরুষের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ার কথা এমনকি ওই পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার ঘটনা জানার পরও ওরা কেনো নিশ্চুপ আছেন আমি বুঝিনা। কখন-কখনো আমার এমনটাও সন্দেহ হয়, ওইসব স্বামী নামধারী কূলাঙ্গারগুলো হয়তো ওদের অভিনেত্রী স্ত্রীদের বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবেই ব্যবহার করছেন। হয়তো আমার অনুমান ভুল নয়।

সানজারী’র সব অপকর্ম, এমনকি দেশের নিরাপত্তার জন্যে হুমকিস্বরূপ নানা কার্যকলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে আমার সম্পর্কে নানা বানোয়াট কথাবার্তা বলে মিডিয়াকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সে বলে বেড়াচ্ছে আমি নাকি তাকে তার বাবা-মা-কে ত্যাগ করার শর্ত দিয়েছি। কি জঘন্য মিথ্যাচার! আমার কাছে প্রমাণ আছে সানজারী’র মায়ের সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো এবং তিনি বহুবার আমায় বলেছেন ওনার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো পর্যায়ে গেলে একজন তার নিজের সন্তান সম্পর্কে এমন কথা বলতে বাধ্য হন সেটা বিবেচনার ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিচ্ছি।

 

 

সানজারী আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে ক্রমাগত কূটসা রটাচ্ছে এবং আমার পরিবারের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা দেশের প্রচলিত আইনেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমি বিশ্বাস করি দেশের বিবেকসম্পন্ন সাংবাদিক বন্ধুরা এসব মিথ্যাচারে কান দেবেন না।

এস এম পারভেজ সানজারী ওরফে লেলিন-এর অর্থ লিপ্সা সম্পর্কে আমি আগেই বলেছি। তার বাধহীন নৈতিক চরিত্র সম্পর্কেও অনেক কথাই আগে বলেছি, যদিও আমার কাছে বলার মতো আরো অজস্র প্রমাণ আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের প্রতি আপনাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। একজন ক্যাপ্টেন এবং বিমান বাহিনী’র সাবেক অফিসার হওয়ার সুবাদে সানজারী’র বিমান বন্দরের অতি স্পর্শকাতর এলাকাসহ সেনানিবাস এলাকায় অবাধ বিচরণ আছে। সে কিছু সেনা অফিসারের স্ত্রী’র সঙ্গেও অনৈতিক কার্যকলাপ করেছে বলে ভূক্তভোগীদের কেউ কেউ আমাকেই জানিয়েছেন। এমন একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র সেনানিবাস গুলোয় বসবাসরত পরিবারগুলোর জন্যেই ক্ষতিকর নয় বরং এমন অর্থলোভী নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তিকে দিয়ে যেকোনো ধরণের ভয়ঙ্কর কাজ করানোও অসম্ভব নয়। সে এমনকি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাসহ খোদ ভিভিআইপিদের জন্যেও যেকোনো সময় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়টি এরই মাঝে আমি সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। এখন এটা আর কেবলমাত্র আমার ব্যক্তিগত ইস্যু নয় – বরং নিঃসন্দেহে এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়।

আমার নিজের জীবনের ওপর হুমকি আছে। সানজেরী নিজেই মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আমায় হুঁশিয়ার করেছে সে তার নিজের অস্ত্র দিয়ে যখন তখন আমায় হত্যা করবে। একথাটা সে আমার সাবেক সেনা অফিসার বাবাকেও জানাতে দ্বিধা করেনি।

এতো কিছুর পরও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্যায় হুমকির কাছে মাথা নত করবো না। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। পাশাপাশি আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আবারো সঙ্গীতের প্রতি মনোযোগী হবো। খুব শিগগিরই আপনারা আপনাদের প্রিয় মিলা’র নতুন গান শুনবেন। আমার পথচলায় আমি ঠিক যেভাবে আপনাদের সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছি তা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন। আমারো আমার পরিবারের জন্যে দোয়া করবেন। আপনাদের সবার প্রতি পবিত্র রমজানের আগাম শুভেচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১০ বছর  প্রেমের পর ২০১৭ সালের মে মাসে পাইলট পারভেজ সানজারীকে  বিয়ে করেন মিলা। অথচ বিয়ের মাত্র ১৩ দিন পরেই তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এরপর বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাদের।