শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিষাদময় জীবন, অকালেই না ফেরার দেশে অনেক রকস্টার

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৪৭ পিএম, ৬ মে ২০১৯ সোমবার

প্রচলিত আছে ‘বুকের ভেতরে কষ্ট না থাকলে রকস্টার হওয়া যায় না!’। সত্যি বলতে আমার আলোচনার এই রকস্টাররা তারই প্রমাণ দিয়ে চলে গেছেন। শোনা গেছে, মৃত্যুর আগে তারা বিভিন্ন হতাশায় ভুগছিলেন। ক্যারিয়ারের প্রতিটা মুহূর্ত অতি বিষাদময় হয়ে উঠলে, পরে না ফেরার দেশে চলে যান এই শিল্পীরা। 

 

আজ  এমনই কিছু রকস্টারের গল্প আলোকপাত করব, যারা প্রত্যেকে একেকজন বড় বড় স্টার ছিলেন; তবে জীবনটা তাদের বিষময় হয়ে উঠেছিল। তাই এক সময় মৃত্যুর পথ বেছে নেন তারা। তবে এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু ছিল একেবারে স্বাভাবিক। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাকি কয়েকজনের খবর মিলেছে আত্মহত্যার। 

চলুন দেখে নেয়া যাক, এসব রকস্টারদের মধ্যে কারা আছেন আজকের তালিকায়

চেস্টার বেনিংটন

হলিউড রকস্টার চেস্টার বেনিংটন। তাকে চেনেন না এমন গান ভক্ত খুব কম পাওয়া যাবে। কারণ তিনি ছিলেন হলিউডের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল লিন্‌কিন পার্কের ভোকাল। এই চেস্টার বেনিংটন খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০১৭ সালের জুলাইয়ে পুরো মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে ছেড়ে ওপারে যাওয়ার পথ বেছে নিয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে ওই সময় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো সংগীত ভুবন। আর শোকের সাগরে ভেসেছিলেন তার ভক্তরা। চেস্টার বেনিংটন সেই শোকের রেশ এখনো আছে সংগীত প্রেমিদের অন্তরে। তবে মাত্র ৪১ বছর বয়সী এই তারকা তীব্র ডিপ্রেশন থেকে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে শোনা গেছে। চেস্টার বেনিংটন এত বড় মাপের ভোকাল ছিলেন যে, তার মৃত্যুতে পৃথিবীর অনেক বড় বড় স্টাররাও কেঁদেছিল।

জিম মরিসন

জিম মরিসন। তাকে হয়ত অনেকেই চিনবেন না। কারণ তিনি ছিলেন ষাটের দশকের বিখ্যাত ক্লাসিক রক ব্যান্ড দ্য ডোরস-এর ভোকাল। তার সবচেয়ে বাজে অভ্যাস ছিল, তিনি মাদকাসক্ত আর মদ্যপানে ডুবেই থাকতেন। আর এই নেশায় তার কাল হয়েছিল। একসময় তিনিও মারা যান। তবে অনেকেই ধারণা করেন, তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। 

তবে শেষমেশ সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, ১৯৭১ সালে হেরোইনের ওভারডোজের ফলে তার মৃত্যু ঘটেছে। তবে এখনো তার মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্কের আগুন নেভানো যায়নি। কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা সেই সুরাহাও আসেনি।

বব মার্লে

ভুবনজয়ী গানের জনক বব মার্লে। তিনি জীবনে অনেক বিখ্যাত গান গেয়ে গেছেন। যার কারণে এই শিল্পীর মৃত্যুও এখনো অনেকেই মানতে পারেননি। ‘বাফেলো সোলজার’, ‘নো ওম্যান, নো ক্রাই’, ‘গেট আপ স্ট্যান্ড আপ’ কিংবা ‘ব্ল্যাক প্রগ্রেস’-এর মতো অনেক পরিচিত গানের স্রষ্টা তিনি। 

বব মার্লে আরো সুপরিচিত ছিলেন তার জীবনদর্শনের জন্য। নিপীড়িত মানুষের মনের কথা গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলে অল্পদিনেই খ্যাতির চুড়ায় উঠে আসেন এই শিল্পী। তবে তিনিও বেশিদিন বাঁচেননি। মৃত্যুর আগে তার শরীরে মরণ রোগ বাসা বেঁধেছিল। মূলত  ফুসফুস ও মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। 

এই শিল্পী গানের ভুবনে মাত্র ১৮ বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মূলত ১৯৮১ সালের ১১ মে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়।

পল গ্রে

পল গ্রে। তিনি আমেরিকান হেভি মেটাল ব্যান্ড স্লিপনটের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। এই ব্যান্ডের বেজ সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তবে এই শিল্পীরও নেশার অভ্যাস ছিল প্রবল। ড্রাগ নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি ইতিহাসে সেরাদের সেরা ছিলেন। 

এদিকে, ২০০৩ সালে একবার অতিরিক্ত কোকেইন সেবন করে গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছিলেন পল গ্রে। এই কারণে তাকে হাজতবাসও করতে হয়। পরে অবশ্য ছাড়া পেয়ে যান তিনি। পরে নেশায় বিভোর হয়ে ২০১০ সালের মে মাসে এক হোটেল থেকে তাকে মৃত উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসে মরফিন আর ফেটানাইল ওভারডোজেই মৃত্যু হয়েছে এই শিল্পীর।

কার্ট কোবেইন

কার্ট কোবেইন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত আমেরিকান রক ব্যান্ড ‘নির্ভানা’র প্রধান ভোকাল আর গিটারিস্ট। যার কারণে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন এই রকস্টার। আর তারই হাত ধরে শুরু হয়েছিল নির্ভানার পথচলা। 

তবে দুঃখের বিষয় হলো, জনপ্রিয় এই রকস্টারও অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। ১৯৯৪ সালের পাঁচ এপ্রিল কোবেইন আত্মহত্যা করেছিলেন। মৃত্যুর তিন দিন পর তার লাশ লেক ওয়াশিংটন বুলেভার্দের বাড়িতে পাওয়া যায়।

ক্রিস কর্নেল

ক্রিস কর্নেল। এই সময়ের রকস্টার ছিলেন তিনি। খুব বেশিদিন নয়, ২০১৭ সালের ১৮ মে যুক্তরাষ্ট্র সময় রাত সোয়া ১২টায় ডেট্রয়েটের একটি হোটেলের রুম থেকে তার দেহরক্ষী গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় উদ্ধার করেন।
 
এরআগে, আমেরিকান রক ব্যান্ড ‘সাউন্ডগার্ডেন’ আর ‘অডিওস্লেভ’-এর প্রধান ভোকাল হিসেবে কাজ করে দুনিয়া জুড়ে খ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন ক্রিস কর্নেল। তিনি অ্যালবামের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন একক গানে। তার এই একক গান শ্রোতাদের কণ্ঠে এখনো বাজে। তিনিও ডিপ্রেশনে ভুগে অকালে মারা যান।