শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাদামাটা এক ছেলের সুপারস্টার হয়ে ওঠার গল্প

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ৬ মে ২০১৯ সোমবার

ডোয়াইন জনসন। যাকে আমরা রক নামেই চিনি। তিনি খুব সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এতটাই সাধারণ ছিল যে, দু’মুঠো খাবারের টেনশনও করতে হতো তার পরিবারের। এমনই এক ঘটনা ঘটেছিল একদিন। সেদিন ছিল, খ্রিস্টানদের এক থ্যাঙসগিভিং অনুষ্ঠানের দিন। অথচ, তার বাড়িতে ডিনারের জন্য কিছুই ছিল না বললেই চলে। পরিবারটা তখন মনেপ্রাণে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকল, অন্তত থ্যাঙসগিভিং উপলক্ষে এই রাতে যেন ডিনারের ব্যবস্থা করে দেয়। মূলত এমনই পরিবার ছিল রকের।

ডোয়াইন জনসন ১৯৭২ সালের দুই মে ক্যালিফোর্নিয়ার হ্যাওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর তিনি মায়ের পরিবারের সঙ্গে অর্থাৎ নানুর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন। তার মায়ের পরিবার ছিল নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আগে তার প্রাথমিক শিক্ষা হয় রিচমন্ড রোড প্রাইমারি স্কুলে। পরে সপরিবারে তারা চলে আসেন আমেরিকায়। এরপর ক্লাস টেন অবধি পড়াশোনা করেন হাওয়াইয়ের হনোলুলুতে। বাবার চাকরির সুবাদে পরে তাদের যেতে হয় পেনিসিলভানিয়াতে।

ডোয়াইন জনসন জীবনে চেয়েছিলেন একজন ভালো ফুটবলার হতে। সে অনুযায়ী, স্কুলে থাকতে তিনি ভীষণ খেলতেন। তাছাড়া ফুটবলে ভালোই ছিলেন তিনি। ওই সময় স্থানীয় লিগ থেকে প্রস্তাবও পেয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবল নিয়ে বেশি দূর আগা হয়নি তার। মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পেয়ে যান ডোয়াইন জনসন। 

এদিকে, ১৯৯৩ সালে তিনি অবশ্য মিয়ামি হারিকেন্স ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন। সে সময় ওই স্বপ্নকে নিয়ে আগাতেও চেয়েছিলেন। পরে ১৯৯৫ সালে তিনি ক্রিমিনোলজি ও ফিজিওলজি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর কানাডিয়ান ফুটবল লিগের একটা ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন ডোয়াইন জনসন। কিন্তু, তখনই ফুটবল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। মাত্র দু’মাস পরই বাদ পড়েন তিনি।


 

 

মূলত আয় না থাকায় সে পরিণতি হয়েছিল জনসনের। ওই সময়টায় কোনো কিছুই করতেন না তিনি। তাছাড়া পরিবারের কথাতো আপনারা জানেনই। সবমিলিয়ে একদমই ভেঙে পড়েছিলেন জনসন। খেলা থেকে বাদ পড়া অবস্থায় তার পকেটে সম্বল ছিল মোট সাত ডলার। তখনই জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা পার করছিলেন তিনি। পরে মায়ের কাছে গেলেন, অনেক কান্নাকাটি করলেন, তবে কোনো লাভ হয়নি। পরে ভবিষ্যতে কি হবেন তিনি? এই ভেবে নিজেকে অসহায় ভাবতে শুরু করেছিলেন ডোয়াইন জনসন।

ওই সময় তিনি যতটা ভেঙে পড়েছিলেন, ঠিক ততটাই মনোবল অর্জন করেছিলেন। কারণ তার শরীরে ছিল লড়াকুর রক্ত। জনসনের বাবা ছিলেন পেশাদার রেসলার, দাদাও তাই ছিলেন। সব মিলিয়ে নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। তবে তার বাবার রেসলিংয়ে তেমন পয়সাকড়ি ছিল না বললেই চলে। পরে জনসন একদিন বাড়ি ফিরে দেখেন দরজায় তালা। সেখানে ঝুলতে উচ্ছেদের নোটিশ। মা চিৎকার করে বললেন, এখন আমরা কোথায় যাবো? এতটাই অসহায় ছিল তার পরিবার যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। ওই সময় অভাব অনটনে বাবা-মার ছাড়াছাড়ি পর্যন্ত হয়ে যায়।

এদিকে, বাবা-দাদাকে দেখে রেসলার হতে চাইতেন না ডোয়াইন জনসন। কারণ তিনি নিজের চোখে শুধু বাবা-দাদার অভাব দেখেছেন। তাই তার ইচ্ছা ছিল অন্য ভালো কিছু হওয়ার। পরে উপায়ান্তর না পেয়ে অর্থাভাবে সেই পথেই হাঁটা শুরু করলেন জনসন। এই ইচ্ছাকে ভর করে জনসন প্রথমে বাবার কাছে গেলেন। কিন্তু বাবাও ছেলের রেসলার হওয়ার ইচ্ছায় সায় দেননি। কারণ তিনিও জানতেন, এই রাস্তায় সুখ নেই।

পরে অনেক কষ্টে বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হলেন জনসন। আর ছেলের আগ্রহ দেখে শেষমেশ রাজি হয়েছিলেন বাবাও। পরে তার কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করলেন জনসন। এদিকে, তার বাবার নাম ছিল রকি জনসন, সেখান থেকে রেস্লিং-এ এসে তিনি নিজের নাম দেন রক নামে। এরপরও অনেক বাঁধা এসেছে তার জীবনে। রেসলিংয়ের সরঞ্জাম কেনার জন্যও অর্থ ছিল না রকের হাতে। বাধ্য হয়ে ভলিভলের নি-প্যাড কিনলেন, আর খেলার আগে এক চাচার কাছ থেকে শর্টস ধার করলেন। 

এদিকে, রেসলিংয়ে নিজের অভিষেকের দিন প্রায় এক হাজার মাইল গাড়ি চালিয়ে আসেন রক। পরে সেখানে পৌঁছানো মাত্রই সঞ্চালক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আগে কখনো রেসলিং করেছো?’ রক প্রতিউত্তরে বললেন, ‘রেসলিংটা আমার রক্তেই আছে।’ ঠিক, এরপরই রেসলিংয়ের সাতটি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন দ্য রক। সেদিন থেকে আর অভাব তাড়া করেনি তাকে। আসতে আসতে ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে রকের।

পরে রেসলিংয়ে যখন ভালো সময় কাটছিল তার, ঠিক তখনই ক্যারিয়ারে নাটকীয় এক মোড় আসলো রকের। তিনি নাম লেখালেন সিনেমায়, কাজ করা শুরু করলেন হলিউডের পর্দায়। তবে সিনেমায় তার শুরুটা হয় ২০০২ সালে। ওই সময় তিনি ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’ ছবিটিতে অভিনয় করেন। সেই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন ডলার। 

যা গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডের ওই সময়কার রেকর্ড বলা যায়। কারণ রকের আগে আর কোনো অভিনেতা নিজের অভিষেক সিনেমার জন্য এত পারিশ্রমিক নেননি। এরপর রকের জীবন পুরোই পাল্টে যায়। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত তিনি একের পর এক ছবি করেই চলেছেন। জিতেছেন একগাদা পুরস্কারও। 

তার জনপ্রিয়তায় বর্তমানে এও শোনা যাচ্ছে যে, তিনি একটা সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও করবেন। নিজের ক্যারিয়ারের সাফল্য নিয়ে জনসনের মূল্যায়ন খুব সাদামাটা। তিনি সবসময় বলেন, ‘সাফল্যকে গ্রেটনেস দিয়ে মাপা যায় না। এটা ধারাবাহিক একটা ব্যাপার। আর ধারাবাহিকভাবে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে, একদিন গ্রেটনেস আসবেই।’ তিনি আরো বলেন, স্বপ্ন দেখতে থাকুন, সত্যি একদিন হবেই।