রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুমিন ও কাফের

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৫৩ পিএম, ৬ মে ২০১৯ সোমবার

আল্লাহ বলেন, 

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ فَمِنكُمْ كَافِرٌ وَمِنكُم مُّؤْمِنٌ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

‘তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ কাফের এবং কেউ মুমিন। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।’(তাগাবুন ৬৪/২)।

ফাসেকদের অবস্থান: আল্লাহ এখানে কেবল কাফের ও মুমিন বলেছেন, কিন্তু ফাসেক বলেননি। কারণ ফাসেকদের বিষয়টি উক্ত বক্তব্যের মধ্যেই বুঝা যায়। আল্লাহ মুমিন ও কাফের বলে ঈমান ও কুফরের দুই প্রান্তসীমাকে বুঝিয়েছেন। মধ্যবর্তী ফাসেকী অবস্থাকে উহ্য রেখেছেন (কুরতুবী)। 

ফাসেকরা ছগীরা অথবা কবীরা গোনাহগার হবে। মুমিনরাও তেমনি নিম্নস্তরের ও উঁচু স্তরের হবে। ত্রুটিপূর্ণ মুমিনগণ ‘ফাসেক’। কিন্ত ‘কাফের’ বা ইসলাম থেকে খারিজ ও ‘মুরতাদ’ নয়। যেমন বনু মুছত্বালিকেদের নিকট থেকে ‘জাকাত’ সংগ্রহের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) অলীদ বিন ওক্ববা বিন আবু মু‘আইতকে প্রেরণ করেন। কিন্তু মাঝপথ থেকে ফিরে এসে বলেন যে, তারা ‘মুরতাদ’ হয়ে গিয়েছে এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন রাসূল (সা.) খালেদ বিন অলীদকে পাঠিয়ে জানতে পারেন যে, তারা আদৌ মুরতাদ হয়নি। বরং মুমিন ও পূর্ণ আনুগত্যশীল রয়েছে। ফলে রাসূল (সা.) তাদের দমনে সৈন্য পাঠানো থেকে বিরত হন। উক্ত ঘটনা উপলক্ষ্যে নাযিল হয়, 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।’(হুজুরাত
৪৯/৬)। 

ভুল তথ্য প্রদানের জন্য ওই ব্যক্তিকে কোরআনে ‘ফাসেক’ বলা হয়েছে। কিন্তু তাকে কাফের বা ‘মুরতাদ’ বলা হয়নি। রাসূল (সা.) তাকে হত্যাও করেননি। একইভাবে মক্কা বিজয়ের অভিযানের খবর ফাঁস করে কুরায়েশ নেতাদের নিকট গোপনে পত্র প্রেরণকারী সাহাবী হাতেব বিন আবু বালতা‘আহকে রাসূল (ছাঃ) ‘কাফের’ বলেননি বা তাকে হত্যা করেননি। বরং কৈফিয়ত নিয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।
  
পাপ ও পুণ্যের স্তর বিন্যাস : বস্তুতঃ ঈমান ও কুফরের স্তর- বিন্যাস পাপ ও পুন্যের কম-বেশির কারণে হয়ে থাকে। এর আলোকেই সগীরা ও কবীরা গুনাহ সাব্যস্ত হয়। যা তওবার মাধ্যমে মাফ হয়। যেমন: আল্লাহ বলেন,  

الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنشَأَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَى

‘যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীলকার্য থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাট অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত। তিনি তোমাদের সম্পর্কে ভালো জানেন, যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে কচি শিশু ছিলে। অতএব তোমরা আত্নপ্রশংসা করো না। তিনি ভালো জানেন কে সংযমী।’ (নাজম ৫৩/৩২)।