শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নায়ক না ভিলেনে সফল ওমর সানী?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৫১ এএম, ৭ মে ২০১৯ মঙ্গলবার

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের সুপারহিট নায়ক ও সবার পরিচিত মুখ ওমর সানী। ‘আকাশেতে লক্ষ তারা, চাঁদ কিন্তু একটারে’ গানের ঠিক এই পংক্তির মতো আবির্ভাব ঘটেছিল তার। অল্পদিনে পেয়েও যান জনপ্রিয়তা।

মূলত ওমর সানী হলেন একজন বাংলাদেশি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে চাঁদের আলো, কুলি, দোলা ইত্যাদি। বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি এসেছিলেন ঘাড় সমান চুল নিয়ে, যা দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে।

তারকা পরিবার থেকে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ওমর সানী। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা তিন নায়িকা সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা সম্পর্কে তার ফুপু হন। সে হিসেবে চলচ্চিত্র পাড়ার সবকিছু তার চেনা-পরিচিত ছিল। তবে সিনেমায় এসে এই নায়ক দ্রুতই প্রতিফলিত হয়েছিলেন প্রিয়দর্শিনী খ্যাত নায়িকা মৌসুমীর স্পর্শে। কারণ, তিনি যে ‘দোলা’র ‘প্রথম প্রেম’। 

নব্বই দশকের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী কারো চোখে ছিলেন সুপারস্টার, কারো চোখে নায়ক, তবে অনেকের চোখে তার প্রতি ছিল আক্ষেপও। কারণ তিনি সবার ফেভারিট তারকা মৌসুমীকে সঙ্গী বানিয়েছিলেন। তবে যে যাই বলুক, ওই যুগে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ওমর সানী বাংলা সিনেমায় একটা ‘চরিত্রই’ ছিলেন।


 

 

এদিকে, ক্যারিয়ার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় সানী বিয়েও সেরে ফেলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রিয়দর্শিনীকে নিজের ঘরে তুলে নেন। ওই সময় নিজেকে দাবিও করতেন, নব্বইয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক তিনি। তবে পরবর্তীতে সেই ওমর সানিই পর্দায় হাজির হলেন ভিলেন রূপে। নায়ক হয়ে যিনি কিনা নায়িকাদের সম্ভ্রম বাঁচাতেন এরপর কালের প্রবাহে তিনিই একের পর এক নারীদের সম্ভ্রম কেড়ে নিতে শুরু করেন। 

কিন্তু, সম্ভ্রম বাঁচানো, বা সম্ভ্রম কাড়া– কোনোটাতেই ওমর সানী ‘সুপারস্টার’ খেতাব অর্জন করতে পারেননি। অর্থাৎ নায়ক বা ভিলেন কোনো রূপেই তেমন ভালো কিছু করতে পারেননি। অমিতাভের ছেলের মতো ওমর সানীর ক্ষেত্রেও অনেক সময় শোনা যায়, মৌসুমীর কারণে নব্বই দশকে কাঁপিয়েছিলেন তিনি। তবে যে যাই বলুক, অনেকে আবার এটাও বলে, প্রেম করতে করতে ক্যারিয়ার হারিয়েছিলেন এই নায়ক।

নায়ক হিসেবে ওমর সানী প্রশংসনীয় প্রচুর সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় না করলেও কয়েকটির কথা না বললেই নয়। তিনি চাঁদের আলো (১৯৯২), মহৎ (১৯৯৩), প্রেমগীত (১৯৯৩), মুক্তির সংগ্রাম (১৯৯৫),হারানো প্রেম (১৯৯৬), কে অপরাধী (১৯৯৭), কুলি (১৯৯৭), বাপের টাকা (১৯৯৮), অধিকার চাই (১৯৯৮), মধুর মিলন (১৯৯৮) ইত্যাদি ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। এর মধ্যে অধিকাংশ ছবিতে নায়িকা হসেবে ছিলেন মৌসুমী।

আপনাদের কী মনে আছে তার হারানো প্রেম ছবিটির কথা? এই ছবিটি মৌসুমী ও সানী ভক্তরা এখনো দেখে। মূলত প্রেমের জন্য বাপ্পারাজের হাতে অনেক মার খেয়েছিলেন ওমর সানী। বলতে গেলে ছবিটি মার খেতে খেতে হিট হয়। 

ওমর সানী ক্যারিয়ার জীবনে বিস্তর সুবিধা পেয়েছিলেন। তবে সেরকম ভালো কিছু দিতে পারেননি। অভিনয়টা গুরুত্ব সহকারে করলে হয়ত তিনি কিংবদন্তিদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতেন। তবে অনেকেই বলে, তিনি অভিনয়ই জানেন না। আবার অনেকেই মনে করে, বয়সটা ৩৫ পার হওয়ার পর আর তালই মেলাতে পারেননি সানী। ওই সময় রিয়াজ, ফেরদৌস, শাকিল খান, আমিন খানরা চলে এসেছেন।

তবে ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে তিনি অধিক মেদ জমিয়ে ফেলেছিলেন, যার থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি তার। সেটাও একটা বড় বাধা হতে পারে ওমর সানীর। তবে যে যাই বলুক, ওরা দালাল চলচ্চিত্রে তিনি ফাটিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি নায়ক নয় খলনায়ক হিসেবে হাজির হয়েছিলেন। 

এদিকে অনেকে মনে করেন, নায়কের থেকে খলনায়ক হিসেবে ওমর সানী বেশি সফলতা পান। তবে, ওমর সানী আবারো নতুন করে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে ফিরতে আগ্রহী হয়েছেন। শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে তিনি নায়ক হিসেবে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করবেন বলে জানা গেছে। তার দর্শকরাও এখন সেই অপেক্ষায় তাকিয়ে রয়েছেন।