ইফতারের ফজিলত ও তাৎপর্য
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১১:২৬ এএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার
ইফতার রমজানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে। মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি এক বিশেষ নিয়ামত।
এটি পালন শুধু কর্তব্য নয়, আনন্দও বটে। এতে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দুটি সময় আনন্দের- এক ইফতারের সময়, দ্বিতীয় আল্লাহ সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময়।
তাছাড়াও ইফতারের সময় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, সুবহে সাদিক হতে রাত অবধি রোজা পূর্ণ করো। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৭) অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোজা শেষ করে ইফতার করা। চলুন ইফতারের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
‘ইফতার’ আরবি শব্দ, যার অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা। ইফতার রোজাদারদের জন্য একটি আনন্দময় সময়। ইসলামি পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মোস্তাহাব।
সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘মানুষ কল্যাণের সঙ্গে থাকবে তত কাল, যত কাল তারা শিগগির ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
রাসূল (সা.) আরো ফরমান, ‘দ্বীন জয়ী থাকবে তত দিন, যত দিন লোক শিগগির ইফতার করবে। কেননা ইহুদি খ্রিষ্টানরা ইফতার করে দেরিতে।’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজা শরিফ)
ইফতার সম্পর্কে রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে।’ (তিরমিজি শরিফ)
হজরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন তার খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করা উচিত। তবে যদি সে খুরমা খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
রোজাদারদের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য তিনি দেরি করে সেহরি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করার নির্দেশ করেছেন। ইফতারের এ বিধান ইসলাম ধর্মেরই অনন্য বৈশিষ্ট্য। ইফতারে ভ্রাতৃত্ববোধ, অন্তর নিঃসৃত ভালোবাসার ছোঁয়া এবং আধ্যাত্মিক ভাবের যে প্রতিফলন ঘটে, তা সত্যিই অতুলনীয়।
ইফতার করার মুস্তাহাব নিয়ম:
সূর্যাস্তের পর ইফতারে বিলম্ব করা উচিত নয়। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সাবধানতার জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা উত্তম। খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। তা না হলে অন্য কোনো মিষ্টিদ্রব্য বা শুধু পানি দ্বারা ইফতার করবেন। আগুনে পাকানো খাদ্য, রুটি, ভাত, শিরনি ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করা দোষের নয়। কিন্তু ফল দ্বারা ইফতার করাই উত্তম।
ইফতারের দোয়া:
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن
‘আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু আ'লা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বি রাহমাতিকা ইয়া আর্ হামার রা-হিমীন।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।’
ইফতারের বাংলা দোয়া:
হে আল্লাহ তায়ালা আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমাজানের ফরয রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনেই রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার আরম্ভ করছি। তারপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়া'আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার করা।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সমপরিমাণ সওয়াব ওই ব্যক্তিকে প্রদান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে সামান্য দুধ দিয়ে কিংবা খেজুর দিয়ে কিংবা পানির শরবত দিয়ে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে পেট পুরে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন। এ পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করার আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (মিশকাত শরিফ)
অন্য একটি হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি হালাল রুজি দ্বারা কাউকে ইফতার করাবে, ফেরেশতাগণ রমজানের প্রতিটি রাত্রে তার প্রতি রহমত পাঠান। শবে কদরে স্বয়ং জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে মোসাফাহা করেন। যার সঙ্গে জিবরাইল (আ.) মোসাফাহা করেন, তার অন্তর কোমল হয় ও চক্ষু হতে অশ্রু ধারা প্রবাহিত হয়।
দোয়া কবুলের উত্তম সময় ইফতার: রমজান মাসে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অধিক দোয়া, আহাজারি ও কান্নাকাটি করা উচিত। এ মাসে রহমতের দ্বার উন্মুক্ত থাকে, রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হয়। ক্ষমা ও মাগফিরাতের উত্তম সময়।
আল্লাহ তো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ‘ইফতারের সময় তোমরা আমার কাছ থেকে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। রাতের আঁধারে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো। শেষ রাতে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয়ে যায় না।
১. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া।
২. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া।
৩. মজলুমের দোয়া। (আহমদ)