শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অক্ষয়ের পছন্দ-অপছন্দ

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:০০ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার

বলিউড নায়ক অক্ষয় কুমার। তিনি ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ওই সময় তার ধারণায় ছিল না আজকের এই অবস্থানে আসবেন, কখনো ভাবেননি নায়ক হবেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি একজন ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র অভিনেতা। তবে অক্ষয়কে আমরা এই নামে চিনলেও মোটেও এটি তার নাম নয়। অক্ষয়ের মূল নাম রাজিব হরি ওম ভাটিয়া।

অক্ষয় নব্বই এর দশকে মূলত অ্যাকশন হিরো হিসেবে বলিউডের পর্দায় পরিচিত পান। ২০০২ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ খল-নায়ক পুরস্কার পান। তিনি বর্তমানে কমেডি, রম্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি রাজেশ খান্নার জামাতা।

অক্ষয় কুমারের জন্ম পাঞ্জাবের অমৃতসরে৷ বাবা সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। তার মায়ের নাম আরুনা ভাটিয়া। অক্ষয় মুম্বাইয়ে স্থানান্তর হওয়ার পূর্বে তিনি দিল্লির চাঁদনি চকে থাকতেন। মুম্বাই এসে তিনি কলিওরাতে থাকতেন। সেখানকার অধিকাংশ মানুষ ছিল পাঞ্জাবী। তিনি মুম্বাইয়ের ডন বসকো স্কুলে পড়েন এবং পরে তিনি সেখানকার গুরু নানক খালসা কলেজে পড়াশোনা করেন। তার বোনের নাম ছিল আল্কা ভাটিয়া। ওই সময় তিনি মার্শাল আর্ট শিখতেন।

এদিকে, তায়কোয়ান্দোতে ব্লাক বেল্ট পাওয়ার পর তিনি মার্শাল আর্ট-এ আরো পারদর্শী হওয়ার জন্য ব্যাংককে যান। পরে থাইল্যান্ড এ তিনি মুই থাই শিখার পর প্রধান ওয়েটার এর কাজ করেন, পরে কিছুদিন বাংলাদেশেও কাজ করেছিলেন। যখন তিনি মুম্বাই এ ফিরে আসেন, তখন তিনি মার্শাল আর্ট শেখানো শুরু করেন। তার এক ছাত্র ফটোগ্রাফার, তিনি অক্ষয়কে মডেলিং করার জন্য পরামর্শ দেয়, যা তার চলচ্চিত্রে অভিষেকের প্রথম সোপানটি তৈরি করে দেয়।


 

 

অক্ষয় গেল বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ৪৯ বছরে পা দিয়েছেন আর চার মাস পর তিনি ৫০-এ উপনীত হবেন। আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য থাকছে এই সুপারহিট নায়কের কিছু অজানা তথ্য, যা অক্ষয় করে থাকেন অথচ আমরা অনেকেই জানি না।

চলুন দেখে নেয়া যাক

রাজীব হরি ওম ভাটিয়া থেকে তিনি অক্ষয় কুমার। তাকে বক্স অফিস কিংও বলা হয়। তার জাদুকরি অভিনয়ের ছোঁয়া বক্স অফিসে ঝড় তুলে অবিরাম। 

অক্ষয় ক্যারিয়ারের শুরুতে টুইংকেল খান্নার সঙ্গে এক ম্যাগাজিনের ফটোশুটে প্রথম সাক্ষাৎ করেছিলেন। এরপর থেকেই তার প্রেম, সেখান থেকেই পরিণয়। বর্তমানে তারা বলিউডের সবচেয়ে ব্যক্তিত্বশীল দম্পতিদের মধ্যে অন্যতম।

টুইংকেল সপ্তাহে একদিন সুস্বাদু চকলেট কেক তৈরি করেন আর অক্ষয় তা খুব মজা করে খান। সপ্তাহে একদিন তিনি তাই কোনো কাজই রাখেন না।

জুতার প্রতি অক্ষয়ের বিশেষ মোহ রয়েছে। তাই তিনি জুতা কিনতে ভীষণ ভালোবাসেন।

প্রতি রোববার অক্ষয়ের থাকে ছুটি। তিনি এই দিন কোনো কাজ রাখেন না। তাই এই দিন এ দম্পত্তি সিফুড রেস্টুরেন্টে গিয়ে গাজালি (এক ধরনের ডিশের নাম) দিয়ে ডিনার সারেন। তবে বিল কখনো ৬০০ রুপির বেশি হয়নি।


 

 

এই অভিনেতার মন যত বিশাল উচ্চতাও তেমন। অক্ষয় ৬.১ ফুট লম্বা ও সুঠাম দেহের অধিকারী।

অক্ষয় এক সময় ব্যাংককের মেট্রো গেস্ট হাউজ নামের একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে কাজ করার আগে। আর সেটা সংবাদ মাধ্যমে তিনিই স্বীকার করেছেন।

থাই ছাড়াও জাপানি খাবার পছন্দ করেন অক্ষয়। তার পছন্দের খাবারের মধ্যে রয়েছে- মিসো সুপ, সালাদ, সুসি অ্যান্ড সাসমি ও ওরেঞ্জ জুস।

অক্ষয় জীবনের প্রথম সব বিষয় নিয়ে খুব ইমোশনাল। তাইতো তার প্রথম বাড়ি, গাড়ি, মোটরসাইকেল এখনো খুব যত্নে রেখেছেন। তবে প্রথম প্রেমকে টুইংকেলের জন্য ছুড়ে ফেলেছেন।

বিশ্বব্যাপী অক্ষয়ের অসংখ্য ভক্ত ও অনুসারী থাকা সত্ত্বেও তিনি গুরু মানেন অনেককে। তিনি হলিউডের জেকি চেন, বলিউডের ডেনি দেনজোনপা ও অমিতাভ বচ্চনকে গুরু মানেন।


 

 

অক্ষয় নিজের গাওয়া একটি পাঞ্জাবি ভক্তিমূলক গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছিলেন। আর সে ভিডিও থেকে আয় করা টাকা ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ে ট্রেনে বোমা হামালায় হতাহতদের দান করেছিলেন। শুধু এটাই নয় তিনি অসাহায়দের নিত্যদিন দান করেন।

অক্ষয় ‘সেভেন ডেডলি আর্টস উইথ অক্ষয় কুমার’ নামের একটি মার্শাল আর্ট তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। যা পরবর্তীতে একটি চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়। মূলত তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাকবেল্টধারী একমাত্র বলিউড অভিনেতা তিনি।

অক্ষয় তার এক সাক্ষাৎকারে চাঁদনি চক থেকে ঘড়ি চুরির কথা স্বীকার করেছিলেন। যা তিনি নিজের মুখেই বলেছিলেন।

মার্শাল আর্ট শিখতে ব্যাংককে যাওয়ার পর তিনি মুয়ে থাই ভাষা শেখেন। মূলত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আসার আগেই তিনি মুয়ে থাই রপ্ত করেছিলেন।


 

 

অক্ষয় কুমার খুব নিয়ন্ত্রিত সাদামাটা জীবন যাপন করেন। প্রতিদিন ভোর ৫টায় তার সকাল শুরু হয়। আর শুটিং শিডিউল দেয়া থাকে ৬টা থেকে।

ভারতীয় সিনেমায় অসামান্য অবদানের জন্য বিশেষ করে ‘ল’ নিয়ে সিনেমা করার জন্য তাকে ইউনির্ভাসিটি অব উইন্ডসর সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি (ডক্টরেট অব ল) দেয়া হয়।

অক্ষয় কুমার বড় একটি রেকর্ড অর্জন করেছিলেন। তার অভিনীত ‘বস’ সিনেমার পোস্টার মাইকেল জেকসনের রেকর্ড ভেঙে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোস্টারের’ জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লেখায়। পরে অবশ্য ‘বাহুবলি’র পোস্টার এই রেকর্ড ভেঙে দেয়।

অক্ষয় বলিউডে পা রাখার আগেই ১৯৮৭ সালে বিখ্যাত পরিচালক মহেশ ভাটের ‘আজ’ সিনেমায় একজন মার্শাল আর্টের শিক্ষক হিসেবে অভিনয় করেছিলেন, অবশ্য তখন তাকে কেউই চিনতেন না।

অক্ষয় কুমারকে অনেকেই খিলাড়ি বলে চেনেন। তবে এই উপাধিটি তিনি একাধিক প্রেমের কারণে পাননি, এটি পেয়েছেন খিলাড়ি সিরিজের ৮টি মুভিতে অভিনয় করতে গিয়ে।

অক্ষয় নায়ক হওয়ার আগে চাঁদনি চকে থাকতেন। নায়ক হওয়ার পরও সেখানকার গুরুদুয়ারার সিসাঙ্গি খেতে পছন্দ করেন তিনি।

এছাড়াও চাঁদনি চকের গিয়ানি আইসক্রিমের প্রতি তার আলাদা নজর রয়েছে।

অক্ষয় কুমার ফিটনেসে এতটা মনযোগী যে, তিনি সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো খাবার খান না।

অক্ষয় কুমার দারুণ মা ভক্ত। তাই মায়ের দেয়া যে কোনো খাবার অনায়াসে গ্রহণ করেন এই সুপারস্টার।

অক্ষয় কুমার খুব স্বাস্থ্য সচেতন। তাইতো ৫০ বছরে পা রেখেও তাকে দেখায় তরুণের মতো।

অক্ষয়ের সালমানের মতো বডিগার্ড নেই। তবে তার একজন বডিগার্ড, যার নাম শ্রী তেলে। সার্বক্ষণিক অক্ষয়ের সঙ্গেই থাকেন তিনি।

অক্ষয় বর্তমানে প্রতি সিনেমার জন্য ৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার নেন। আর তিনিই এখন বিশ্বের নবম সর্বোচ্চ সম্মানীপ্রাপ্ত অভিনেতা তিনি। 

অক্ষয়ের ১৪ বছর বয়সী ছেলে আরাভ। তিনি এখন পড়াশোনা করছেন লন্ডনে। বর্তমানে সেখানে সে রান্না বিষয়ক একটি কোর্স করছে।

অক্ষয়ের একটি জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুর রয়েছে, যা তার মুম্বাইয়ের বাড়িতে থাকে এবং গোল্ডেন ল্যাব্রাডোর প্রজাতির একটি কুকুর রয়েছে। এই কুকুরটি তার গোয়ার ‘লিটল পর্তুগিজ’ বাড়িটি দেখাশোনা করে। মূলত তার এই দুইটি বাড়ি কুকুরই দেখাশোনা করে।

অক্ষয় তার সহশিল্পী অসিন ও রাহুল শর্মার বিয়ের ঘটক ছিলেন। তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে বিয়ের সব কিছুই তিনি করেছেন।

অক্ষয়ের পছন্দের হোন্ডা ব্ল্যাক সিআরভি। তিনি এটি চালাতে খুব পছন্দ করেন।

অক্ষয় কখনো সিনেমা পরিচালনা করবেন না। তিনি সবসময় অভিনয় করবেন। আর অভিনয়ের আয়ু শেষ হলে তিনি অন্য পেশায় সরব হবেন।

অক্ষয় নতুনদের গান বেশ পছন্দ করেন। আর তাই গাড়িতে থাকলে তিনি নতুনদের গানই শুনেন।

অক্ষয় বিশ্ববিখ্যাত ফটোগ্রাফার জে সিথের সঙ্গে কাজ করেছেন। 

একদা এই নায়ক ঢাকা-কলকাতা রুটে ট্রেনে ভ্রমণের সময় ডাকাতের কবলে পড়েছিলেন। তবে ওই সময় তার বগিতে থাকা সব যাত্রীর মালামাল লুট করে ডাকাতরা। তার কিছুই নেননি।

অক্ষরের পছন্দের পারফিউম ডেভিডফের কুল ওয়াটার। এটা তিনি সবসময়ই ব্যবহার করেন।

নায়ক অক্ষয়ের পছন্দের সিনেমা লাইফ ইজ বিউটিফুল। যেটার লেখক ও নায়ক ছিলেন রবের্তো বেনিইনি।

অক্ষয় রান্না করতে বেশ পছন্দ করেন। তিনি স্ত্রী টুইংকেলের জন্য ইতালিয়ান পাস্তা তৈরি করে পরিবেষণ করেন।

অক্ষয়ের প্রথম সাইন করা সিনেমা দিদার। এ সিনেমায় তার সহ-শিল্পী ছিলেন কারিশমা কাপুর। তবে অক্ষয় অভিনীত প্রথম রিলিজ পাওয়া সিনেমা সুগন্ধ্যা। যাতে তার সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন রাখী ও মুকেশ খান্না।


 

 


  
অক্ষয় যে কোনো খেলায় পারদর্শী। তিনি কোনো খেলাকে আলাদা চোখে দেখেন না। 

অক্ষয়ের প্রিয় অভিনেত্রীর নাম শুনলে চমকে যাবেন যে কেউই। তার প্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবী।

অক্ষয় কুমারের মেয়ের নাম নিতারা খান্না ভাটিয়া। আর ছেলের কথাতো আগেই বলেছি। মেয়ের জন্ম ২০১২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।

অক্ষয় প্রথম ‘জো জিতা ওহি সিকান্দার’ সিনেমার জন্য অডিশন দিয়েছিলেন। তবে চান্স পাননি! পরে অবশ্য অনেক সুপারহিট মুভি তার হাত দিয়ে এসেছে।

অক্ষয় নায়কের আগে সফল হয়েছিলেন খলনায়ক চরিত্রে। তিনি ১৯৯১ সালে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ২০০১ সালে আজনাবি সিনেমায় প্রথম খলচরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পুরস্কার পান।

অক্ষয় ভিন্নধারার চলচ্চিত্রকে প্রমোট করতে কাজ করে যাচ্ছেন। এমনকি এই ধরনের চলচ্চিত্র ও অঞ্চলভিত্তিক সিনেমার উন্নয়নে গ্রেজিং গোটস নামে একটি প্রোডাকশন কোম্পানিও গড়ে তুলেছেন তিনি।

অক্ষয়ের কাছে চাঁদনি চক এতই পছন্দ যে, তিনি একান্তে সময় কাটানোর জন্য এখনো চাঁদনি চকের এক রুমের ফ্ল্যাটে মাঝে মাঝে গিয়ে সময় কাটান।

অক্ষয় অবসর সময়ে অনেক দৌড়ান।

অক্ষয় অনেক মিতব্যয়ী। তিনি প্রতি মাসে মাত্র পাঁচ হাজার রুপি খরচ করেন।

সন্তানদের যাতায়াতেও অতিরিক্ত খরচ দেন না অক্ষয়। ছেলে আরাভ এখনো বিমানের ইকোনমি ক্লাসেই ভ্রমণ করে। আর মেয়েও মুম্বাইতে তেমন বিলাসিতা করতে পারে না। একেবারে সাদামাটা জীবন বলা যায় অক্ষয়ের।

অক্ষয় অলিম্পিকের মশাল বহনের আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন।

অক্ষয় বাচ্চাদের মতো দুষ্টুমি করতে পছন্দ করেন। তিনি পড়াশোনার চেয়ে খেলাধুলায় বেশি আগ্রহী ছিলেন।

অক্ষয় কুমার নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে শরীরে বিভিন্ন ট্যাটু (উল্কি) এঁকেছেন। যা তার পুরো শরীরে বিস্তৃত।