এসপি হারুনের কাছে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা!
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:৩৫ পিএম, ৮ মে ২০১৯ বুধবার
‘সিংহাম’ বলিউডের একটি জনপ্রিয় সিনেমা। যে ছবিতে নায়ককে দেখা গেছে একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায়। সেই ছবিতে জনপ্রতিনিধির তকমা গায়ে মেখে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে অপরাধের সা¤্রাজ্য গড়ে তোলা অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়েন নায়ক।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও সেই শক্তিশালী শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে দেখা যায় সেই ছবিতে। দেশ ও জনগণের সেবক একজন পুলিশ কর্মকর্তার একান্ত ইচ্ছাতেই যে বদলে যেতে পারে গোটা সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি এবং শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা পেতে পারে এমনটি মুখ্য হয়ে পরিস্ফুটিত হয় সিংহাম নামের সেই বলিউড মুভিতে।
অন্যায়ের সাথে লড়তে গিয়ে সেই সরকারী কর্মকর্তাকে বদলী, প্রাণনাশের হুমকি, প্রলোভনসহ আরো অনেকভাবে বিব্রত পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে হয়। শেষতক জয় হয় সেই সৎ পুলিশ কর্মকর্তারই।
এবার আসা যাক, নারায়ণগঞ্জের প্রসঙ্গে। নারায়ণগঞ্জ বিট্রিশ ঔপোনিবেষিক সময় থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। আর এটাকে পুঁজি করে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসীকে কব্জা করা একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। জনপ্রতিনিধিদের আশকারায় সেই সিন্ডিকেট সবকিছুকেই ধরাকে সরাজ্ঞান বলে মনে করতে থাকে। অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন ময়মনসিংহের ছেলে মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। এসেই বলেছিলেন শান্তিপূর্ণ ও বসবাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ সবাইকে উপহার দেবো। তবে সে কথা কানে নেয়নি কেউ।
সবাই ভেবেছিলো এমন আশ্বাসের ফুলঝড়ি নারায়ণগঞ্জে কাজ করতে যাওয়া অনেকেই দিয়েছেন। এসপি হারুনও নিজের কথার মান রাখতে ছিলেন অবিচল। নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জে যেখানেই বিশৃঙ্খলা হয়েছে, সাধারণ মানুষ কষ্ট পেয়েছে সবকিছুতেই ছিলো এসপি হারুনের বিচরণ। মাদক, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যূতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেন তিনি। পেয়ে যান সাফল্য।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলায় গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ওরফে ছোট নজরুলকে। বন্দর থানার ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি মামলায় ১৮ এপ্রিল দুপুর আড়াইটায় সদর উপজেলার পাইকপাড়া এলাকা থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিসবাবু।
২০ এপ্রিল ফতুল্লা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে র্যাব, পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুসহ ২৩ জন গ্রেপ্তার হয় ২২ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল জেলায় ২৪ ঘন্টার মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ২০ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী।
২০ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের পাগলার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মীর হোসেন মীরুকে গ্রেপ্তার, ৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি শাহ আলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে গ্রেপ্তার, নগরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিআইডাব্লিউটিএ এলাকায় জুয়ার বোর্ডে অভিযান চালিয়ে ৪১ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার এবং তাদের স্বীকারোক্তিতে জুয়াড়ি স্থানীয় জনৈক সাংবাদিক রাজু আহম্মেদের নাম আসা, ১১ মার্চ ফতুল্লার লঞ্চঘাট এলাকায় চোরাই জ্বালানি তেলের আস্তানায় পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানিসহ মূল হোতা ইকবাল হোসেন তিনজনকে গ্রেপ্তার, গত ২৭ মার্চ ফতুল্লার জামতলা এলাকায় জনৈক ভিকিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল গাফফার খানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজহারভুক্ত আসামি জাহিদুলকে গ্রেপ্তার এবং গত ১ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত মেরি অ্যান্ডারশনে ভাসমান জাহাজে পুলিশের অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার এবং সেখানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটুসহ লাগাতার জেলা পুলশের বিশেষ অভিযান এসপি হারুনের ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আশান্বিত করেছে।
নারায়ণগঞ্জবাসীর অনেকেই নিজের মনের আয়নায় ‘এসপি হারুনকে’ তুলনা করেন ‘সিংহাম’ মুভ্যির নায়কের ভূমিকায়। নারায়ণবাসীর আস্থার বিশাল অংশটুকু যে অর্জন করতে পেরেছেন জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তার চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে তাকে ‘বাংলার সিংহাম’ আখ্যায়িত করে একটি ব্যানার দেখা গেছে। যা সকলের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
চাষাঢ়া মোড় এলাকায় খাজা মার্কেটের বাইরে দোতলায় টানানো সেই ব্যানারে এসপি হারুনকে শুধু বাংলার সিংহাম উপাধিই দেয়া হয়নি। সাথে সিংহ পুরুষ এসপি হারুন উল্লেখ করে দীর্ঘজীবী হোন কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আসলে কারা কিংবা কাদের উদ্যেগে এমনটি করা হয়েছে সেটি জানা সম্ভবপর হয়নি।
তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা এসপি হারুনের কাছে, এপর্যন্ত যেসকল অপরাধী ধরা পড়েছে পুলিশের অভিযানে। তারা কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের অংশ মাত্র। তাদের ধরাতে সেসব সিন্ডিকেটের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে রয়েছে। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও নারায়ণগঞ্জে শান্তি বিরাজ করছে। তবে নারাণগঞ্জে শান্তির বীজ পাকাপোক্তভাবে বপণ করতে হলে অপরাধী চক্রের সেসব সিন্ডিকেট সমূলে উৎপাদন করতে হবে বলে মনে করে নারায়ণগঞ্জবাসী।
আর এব্যাপারে এসপি হারুনের উপর আস্থার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে বিধায়ই তাকে ‘সিংহাম’ হিসেবে দেখতে চায় নারায়ণগঞ্জবাসী। আর সেটি যদি সত্যিকার অর্থেই করতে পারেন এসপি হারুন তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে সবসময়ই চিরস্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন এমনটি মনে করেন বিশ্লেষকরা।