বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির পরিধি বাড়াতে আগ্রহী ইইউ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ১০ মে ২০১৯ শুক্রবার
বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির পরিধি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বিদ্যমান দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক পাল্টে এবার কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক তৈরির প্রস্তাব এসেছে ইউরোপীয় ২৯টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী এই জোটের কাছ থেকে।
বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কের বিষয়টি দেড় যুগ ধরে বিদ্যমান। এই জোটের সঙ্গে বাংলাদেশ সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে ২০০১ সালে। এ চুক্তির অধীনে দুইপক্ষের সম্পর্কের ব্যপ্তি ও আলোচনার পরিধিও নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তবে, গত ১৮ বছরে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ায় ইইউ এর পক্ষ থেকে এই সম্পর্কের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সেখান থেকে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে।
বিদ্যমান ২০০১ সালের সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অধীনে একটি জয়েন্ট কমিশনের নেতৃত্বে তিনটি সাব গ্রুপে সুশাসন ও মানবাধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, এবং উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হতো। সাব-গ্রুপের বৈঠক প্রতি বছর হলেও জয়েন্ট কমিশনের বৈঠক দুই বছরে একবার হয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এর নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
তবে এই চুক্তির কয়েকটি বিষয়ে অভিমত জানিয়ে নতুন যে প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ তাতে সব বৈঠক বার্ষিক ভিত্তিতে করার জন্য এবং জয়েন্ট কমিশনের নেতৃত্ব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবের বদলে পররাষ্ট্র সচিবকে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মাদ আলী হোসেন বলেন, ’পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদেরকে ইইউ এর নতুন প্রস্তাব বিষয়ে জানিয়েছে এবং আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে তাদেরকে আমাদের মতামত জানাবো।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মন্ত্রণালয় কী কাজ করবে সেটি রুলস অফ বিজনেসে বলা আছে এবং আমরা এর বাইরে যাবো না।’
অর্থনৈতিক সম্পর্কিত বিষয়গুলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অধীনেই থাকা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ’আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি এবং সরকার যেটা ভালো মনে করে সেটাই আমরা করবো।’
মোহাম্মাদ আলী হোসেন উল্লেখ করেন, অভিবাসন, রোহিঙ্গা, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং এর বাইরে যেকোনও রাজনৈতিক বিষয় অন্যরা আলোচনা করতে পারে কিন্তু অর্থনেতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের হাতে থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ব্রাসেলস থেকে বাংলাদেশকে জানানো হয় তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী এবং বর্তমান কাঠামোর পরিবর্তন চায়। এরপরই মন্ত্রণালয় গত সোমবার (৬ মে) সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বৈঠক করে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে লিখিত মতামত জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।
নতুন সম্পর্ক
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০১ সালের ইইউ দাতা এবং বাংলাদেশ গ্রহীতা – এই সম্পর্ক আর আমাদের মধ্যে নেই।’
তিনি জানান, নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা, এমনকি জিএসপি প্লাস দর কষাকষিকেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কারণে ইইউ চায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে। যেখানে তারা সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবে।
তিনি বলেন, ’বর্তমান কাঠামোয় নিরাপত্তা বা রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জয়েন্ট কমিশনে আলোচনার সুযোগ নেই। কারণ, এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার ম্যান্ডেট (এখতিয়ার) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের নেই।’
বর্তমানে ইইউ বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে বাংলাদেশের পণ্য এবং ২০২৪ সালের পরে এ সুবিধা অব্যাহত রাখতে হলে নতুন করে জিএসপি প্লাসের অধীনে দর কষাকষি করতে হবে। এটি অর্থনৈতিক বিষয় হলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি বা মিডিয়া ফ্রিডমের মতো রাজনৈতিক বিষয়গুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।
এসব কারণে একটি কাঠামোর অধীনে সব বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরির জন্য আমরা নতুন প্রস্তাব বিবেচনা করছি বলে তিনি জানান।