শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পারিবারিক কলহে হত্যাকান্ডের শিকার ১২ নারী

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:২৩ পিএম, ১০ মে ২০১৯ শুক্রবার

জানুয়ারী মাসে ১২, ফেব্রুয়ারী ও মার্চে ১৪ এবং  সর্বশেষ এপ্রিলে ৬টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। সব মিলিয়ে গত চার মাসে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন উপজেলায় হত্যাকান্ড ঘটে ৩০টি। 

 

এ সকল হত্যাকান্ড পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় এ সকল হত্যাকান্ডের অধিকাংশই হল নারী। প্রতিদিনই ঘটছে। শিরোনামে বড় বড় করে আসছে  যৌতুকের বলি গৃহবধূ.....! আগুনে পুড়িয়ে গৃহবধূকে হত্যা! একই ঘটনা, কিন্তু প্রতিদিনই যোগ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন নামে। অন্য কোনো জায়গায়। বিভিন্ন গণমাধ্যম হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত চার মাসে ৩০টি হত্যাকান্ডের মধ্যে ১২ জনই নারী। 


আর তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যৌতুক, পারিবারিক কলহ ও পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরে হত্যা। কখনও শ্বশুড় বাড়ির লোকজন কর্তৃক কখনও স্বামী কর্তৃক নির্মম নির্যাতনের বলি হচ্ছে তারা। 


গত ১৯ এপ্রিলের ঘটনা। বন্দরে স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু হয় গৃহবধূ মুক্তা‘র (২৪)। ১৭ এপ্রিল সোনারগাঁয়ে পারিবারিক কলহের জের ধরে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে মোসাম্মৎ ছালমা (২৯) নামে এক গৃহবধূকে।


১১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে প্রিয়া বিশ্বাস নামে গৃহবধূকে হত্যার পর স্বামী লাশ গুম করার চেষ্টা করে। ১২ এপ্রিল টানবাজার সাহাপাড়া এলাকায় বৃষ্টি চৌধুরী (২১) নামের গৃহবধূর হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়। 


মার্চে ২৯ মার্চ শহরের টানবাজারে মাদকের প্রতিবাদ করায় ৫ সন্তানের জননী আরজু বেগমকে (৪০) মারধর ও  বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে। ২৩ মার্চ আড়াইহাজার কলাগাছিয়া ঋষিপাড়ায় রূপা রাণী দাস (২০) নামে গৃহবধূকে শ্বাসরোধের হত্যার অভিযোগ উঠে। 


ফেব্রুয়ারীর ২৬ তারিখে ফতুল্লার ইদ্রাকপুর এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে রোজিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের পরিবারের অভিযোগ রোজিনাকে হত্যা করা হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জে নাঈমা আক্তার (২৩) নামে এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠে স্বামী শহিদুল ইসলাম (৩০) এর বিরুদ্ধে। 


বিয়ের দুই মাসের মাথায় ৩ ফেব্রুয়ারি আড়াইহাজারে রুমা নামে এক গৃহবধূকে পুলিশ শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠে স্বামীর বিরুদ্ধে। 
 
জানুয়ারীর ২১ তারিখে ফতুল্লায় জামাতের ছুরিকাঘাতে শ্বশুড় খুন। ১৯ জানুয়ারী বন্দরে নাঈমা রহমান (৩৭) নামে গৃহবধূকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নাঈমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দুর্বৃত্তরা। ৪ জানুয়ারী আড়াইহাজারে ফুসকার সঙ্গে কীটনাশক জাতীয় পর্দাথ মিশিয়ে উম্মেহানী (২৪) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
এ সকল তথ্যের বাইরেও রয়েছে এমন আরো অনেক ঘটনা। এর অধিকাংশই ঘটনাই হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে থেকে যায় সংশয়। পারিবারিক স্বতন্ত্রতায় কিছু ঘটনার সত্যতা বের হয়ে আসলেও অনেক ঘটনাই রয়ে যায় ঘটনার অন্তরালে।


কিন্তু যে সকল ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে হাতেগোনা কয়েকটা ছাড়া বেশিরভাগই সুষ্ঠু বিচারের অভাবে সময়ের সাথে সাথে বিলীন হয়ে যায়। আর আসামীরা ঘুরে বেড়ায় বীরদর্পে। 


উদাহরণ স্বরুপ এই মূহুর্তে একটি ঘটনায়ই মাথায় আসছে তা হল ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারীর মোনালিসা হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের সকল কিছু প্রমানিত হলে। আসামী পুলিশের হেফাযতে। কিন্তু গত ৪ এপ্রিল জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় এ হত্যাকান্ডের একমাত্র আসামী আবু সাঈদ। এই হল বর্তমান বিচার ব্যবস্থা।


সম্প্রতি বৃষ্টি হত্যাকান্ড আরেকটি উদাহরণ হিসেবে ধরা যেতে পারে। বৃষ্টির পরিবারের অভিযোগ ১০লাখ টাকা যৌতুকে দাবিতে হত্যা করা হয় বৃষ্টিকে হত্যার পর ঝুলিয়ে দেয়া ফ্যানে সাথে ময়নাতদন্ত রির্পোটে বৃষ্টিকে শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি প্রমানিত হয়েছে কিন্তু হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে খোদ সংশয়ে চিকিৎসক।


এদিকে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর অবস্থা আরো করুণ। সরকারী বেসরকারী এ ধরণের সংস্থাগুলো নামের ওপর হেলান দিয়ে গা ছাড়া ভাবে কাজ করছে। হাতে ব্যানার আর ফটোসেশনে নিজেদের প্রদর্শিত করা পর্যন্তই তাদের কাজ। 


সংশ্লিষ্টরা বলছে, এ সকল ঘটনা সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হলে প্রয়োজন আইনের সুষ্ঠ ব্যবহার ও নিজেদের সচেতন।