শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৫ ১৪৩১   ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নাগরিকদের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরাতে পথেই ইফতার তাদের

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:৫২ এএম, ১৩ মে ২০১৯ সোমবার

 সবকিছু ছাপিয়ে ঢাকা এখন যানজটের মহানগরী। বেশিরভাগ সময়ই নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কেই দীর্ঘ জটলায় ভোগান্তির শেষ নেই নগরবাসীর। রমজান এলে দীর্ঘ যানজট যেন পায় নতুন মাত্রা।

 

কাজ শেষ করে নগরবাসীর প্রায় সবাই সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরতে চান। প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে সবার তাড়ায় সড়কে বাড়তি চাপ পড়ে। গাড়ি সামলাতে সাধারণ সময়েই নাভিশ্বাস উঠে যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। আর ইফতারের আগমুহূর্তে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় তাদের।

এ সময়টাকে সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ইফতারের আগেই গাড়ির জটলা কমিয়ে আনতে সক্ষম হন। আর জনসাধারণকে ঘরে ইফতার করার সুযোগ দিতে এই কর্মকর্তাদের ইফতার সারতে হয় পথেই।

রোববার (১২ মে) ইফতারের আগমুহূর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সিগনালে দেখা গেছে ১৩ জন পুলিশ সদস্য রাস্তা সামলাচ্ছেন। এর মধ্যেই দুই-একজন ট্রাফিক বক্সে গিয়ে ইফতার প্রস্তুত করছিলেন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে, তবুও মনোযোগ রাস্তার এপার-ওপার দৌড়ে গাড়ি সামলানোতেই।

এর মধ্যেই কথা প্রসঙ্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. লিপটন সরকার জানান, প্রত্যেকের জন্য নিজ নিজ বিভাগ থেকে ইফতারের বক্স সরবরাহ করা হয়। যেখানে খেজুর, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি আর ছোট একটা পানির বোতল থাকে। ইফতারের সময় ট্রাফিক বক্সে সবগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে নিজেরা আরো কিছু যোগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ইফতার সারেন তারা। তবে কমপক্ষে একজন সদস্যকে সিগনালে দাঁড়িয়েই ইফতার করতে হয়।

তিনি বলেন, এখন রমজান শুরুর দিকে, এখন শুধু অফিস থেকে ঘরে ফেরার তাড়া। তাই ইফতারের পর তেমন গাড়ির চাপ থাকে না। কিন্তু ক’দিন পর শপিংমলগুলোতে যখন কেনা-কাটার ভিড় বাড়বে, তখন যানজট কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

রমজানে সবার কাজ কমে যায়, আর পুলিশের বেড়ে যায়। সবার মতো পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে ইচ্ছে হয় কি-না জানতে চাইলে লিপটন হাসিমুখে বলেন, আমাদের কাজটাই সেবামূলক। এতে আমাদের অভ্যস্ততা চলে এসেছে। আমি দায়িত্ব পালন করছি বলেই আর দশজন ইফতারের আগে বাসায় ফিরতে পারছেন, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারছেন। এটা ভাবলে খারাপ লাগে না।

রোকন নামে আরেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, শিফট হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে এখনো আমরা দুই-এক দিন পর পর বাসায় ইফতারের সুযোগ পাই। কিন্তু চাপ বেড়ে গেলে আমাদের ডিউটি বাড়বে, সেই সুযোগটা কমে আসবে।

ফার্মগেট এলাকায় দায়িত্বরত আরেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রাস্তা থেকে এক মিনিটের জন্য সরে গেলেই চারপাশের রাস্তাতেই সব গাড়ি প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। যতোক্ষণ গাড়ি থাকে ততোক্ষণ সিগনালেই থাকতে হয় আমাদের। ইফতারির সময় হয়ে গেলে পানি-খেজুর হাতে নিয়ে ইফতার সেরে নেই। তারপর আমরা পাল্টে-পাল্টে ট্রাফিক বক্সে গিয়ে খেয়ে আসি।

মুখে হাসি নিয়েই তিনি বলেন, চাকরির প্রথমে একটু খারাপ লাগতো, এখন বলতে পারেন অনেকটা অভ্যাস হয়ে গেছে। আমাদের কাজইতো রাস্তায়। আমরা রাস্তা ছেড়ে দিলে অনেককেই রাস্তায় ইফতার করতে হবে।

‌‘ইফতার হয়তো পরিবারের সঙ্গে করতে পারি না, কয়দিন পর ঈদ আসবে, তখন ছুটি পাবো কি-না জানি না’ বলতেই কণ্ঠ ভারি হয়ে আসে তার।

রমজান উপলক্ষে যেখানে প্রায় সব অফিসেই কর্মঘণ্টা কমে যায়, সেখানে পুলিশ সদস্যদের ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। সবাই যখন পরিবারের সঙ্গে ইফতারের জন্য ঘরে ছুটেন, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে হাত উঁচিয়ে সড়কের শৃঙ্খলা সামলে যান তারা।

পরিবারের সঙ্গেতো নয়ই, বেশিরভাগ সময়ই ইফতার করতে হয় পথে দাঁড়িয়েই। তবুও দায়িত্ব ভেবে হাসিমুখেই হাত উঁচিয়ে ইশারা দিয়েই চলেছেন। সামান্য কষ্ট থাকলেও মুখে আক্ষেপ নেই মহানগরীর মহা যানজট সামলানো এই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।