সাগরে ডুবল রঙিন স্বপ্ন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:০৩ এএম, ১৩ মে ২০১৯ সোমবার
পরিবারে স্বচ্ছলতা আনার পাশাপাশি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে যাত্রা করেছিল স্বপ্নের ঠিকানা ইউরোপের পথে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ডুবে গেল ভূমধ্যসাগরে। ইতালিতে যাওয়া হলো না সিলেটের ছয়জনের। এ নিয়ে বইছে শোকের মাতম।
শুক্রবার তিউনিসিয়া সমুদ্র উপকূলে নৌকা ডুবে মৃত্যু হয় তাদের। এদের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তিনজন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার দুজন ও মৌলভীবাজারের একজন।
তারা হলেন- ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সেনেরবাজার কটালপুর এলাকার মুহিদপুর গ্রামের মন্টু মিয়ার ছেলে আহমদ হোসেন, একই গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ, সিরাজ মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া, গোলাপগঞ্জের হাওরতলা গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে আফজল মাহমুদ, একই উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউপির কদুপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে কামরান আহমদ মারুফ ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউপির বাদেভুকশিমইল গ্রামের হাজী আব্দুল খালেকের ছেলে শামীম।
নিহত মারুফের ভাই মাসুদ আহমদ জানান, তিন মাস আগে মারুফ, তার বড় ভাই মাছুম আহমদ ও একই উপজেলার আফজল মাহমুদ অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার জন্য থেকে লিবিয়ায় যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লিবিয়ার যুয়ারা এলাকা থেকে নৌকা করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। শুক্রবার সকালে তিউনিসিয়া উপকূলের কাছাকাছি এলে সমুদ্রের ঢেউয়ের ধাক্কায় তাদের নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় মাছ ধরার একটি নৌকার জেলেরা তাৎক্ষণিকভাবে ১৬ জনকে উদ্ধার করে।
নিহত আজিজের বড় ভাই মফিজ আহমদ বলেন, নিহতদের মধ্যে লিটন আমার চাচাতো ভাই। আর আহমদ হোসেন ফুফাত ভাই। শনিবার বিকেলে তিউনিসিয়ায় সাগরে নৌকাডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া আমার চাচা বিলাল আহমদ বাকিদের মৃত্যুর খবর জানান। প্রায় ১১ ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর মাছ ধরার ট্রলারে থাকা জেলেরা তাদের কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে তিউনিসিয়া উপকূলে নিয়ে যায়। এভাবেই বেঁচে ফেরেন চাচা বিলাল। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর জিন্দাবাজার এলাকার ইয়াহিয়া ওভারসিজ ট্রাভেলসের মাধ্যমে জনপ্রতি সাত লাখ টাকায় তাদের ইতালি পাঠানোর চুক্তি হয়। কথা ছিল সরাসরি ফ্লাইট দেয়া হবে। কিন্তু তিন দেশ ঘুরিয়ে লিবিয়াতে নিয়ে তাদের রাখা হয় প্রায় পাঁচ মাস। এই সময়ে তিন থেকে চার দিন পরপর তাদের খেতে দেয়া হতো।
মফিজ বলেন, কদিন আগে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। না খেয়ে তাদের মুখের ভাষাও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। পরে ট্রাভেলসের মালিক এনাম আহমদের কাছে তাদের ফেরত চাইলে আরো তিন লাখ টাকা করে বাড়তি আদায় করেছেন তিনি। এখন আর কিছুরই প্রয়োজন নেই। কেবল ভাইদের মরদেহগুলো ফেরত চাই।