শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আড়াইহাজারে মুখোমুখি দুই নজরুল,এগিয়ে নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:০৩ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

 

একজন নজরুল ইসলাম বাবু; আওয়ামী লীগ থেকে টানা তৃতীয়বার মনোনীত হয়ে নৌকা নিয়ে নেমেছেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসন জয়ের লক্ষ্যে।

আরেকজন নজরুল ইসলাম আজাদ; প্রথমবার  টিকেট পেয়ে বিএনপির হারানো আসন পুনরুদ্ধারে ভোটের লড়াইয়ে আছেন ধানের শীষ নিয়ে।

দুইটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের আড়াইহাজার উপজেলা নিয়ে  দুই লাখ ৮৩ হাজার ৮৬৮ ভোটারের নারায়ণগঞ্জ-২ আসনটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।   

এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটি সর্বশেষ বিএনপির দখলে ছিল ২০০১ সালে। সেবার বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান খান আঙ্গুর ২৫ হাজার ২৭৫ ভোটের ব্যবধানে হারান আওয়ামী লীগের এমদাদুল হক ভূঁইয়াকে।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক লাখ ১৭ হাজার ৪৩৫ ভোট পেয়ে  প্রথমবার এই আসনে জয় পান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু। বিএনপির এএম বদরুজ্জামান খান পেয়েছিলেন ৭৮ হাজার ৬৭৫ ভোট।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ এই আসন ধরে রাখতে আশাবাদী হলেও বিএনপি নেতাকর্মীরাও হাল ছেড়ে দিচ্ছেন না।

বাবু ও আজাদ দুজনেরই বাড়ি দুপ্তারা ইউনিয়নে।

উন্নয়ন কাজ করার পাশাপাশি আড়াইহাজার আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল না থাকায় নির্বাচনে বাবু সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।


চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও এ আসনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নাসির উদ্দিন হাতপাখা এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মো. হাফিজুল ইসলাম কাস্তে প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

তবে আড়াইহাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাবুর নৌকা প্রতীকের পোস্টারই দেখা গেছে বেশি। প্রতিদিনই বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী সভাসমাবেশ করছেন বাবু। বাবুর পক্ষে তার নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।

মাহমুদপুর ইউনিয়নের শালমদীতে প্রচারণার সময় বাবু  বলেন, আড়াইহাজারের মানুষ তাকেই ভোট দেবে।

“এখানে আমার একটা ইউনিয়নের প্রোগ্রাম, কিন্তু দেখেন প্রায় সব লোক এখানে চলে এসেছে। কারণ হলো রাজনীতি পেশা, ব্যবসা না। রাজনীতি নৈতিকতা, অনৈতিকতা নয়, রাজনীতি কল্যাণমুখী, অকল্যাণমুখী নয়। রাজনীতি মানে হাতিয়ার নয়, এটা অস্ত্রহীন মানুষকে সেবা দেওয়া, শিক্ষাহীন মানুষকে শিক্ষা দেওয়া, অসহায়-দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সেই কাজগুলো আমি ভালোভাবে করেছি। এজন্যই মানুষ আমার সঙ্গে আছে।”

নির্বাচনী এলাকার অন্য ইউনিয়নগুলোয় ধানের শীষের প্রচারণা ও পোস্টার দেখা না গেলেও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের আজাদের নিজের এলাকা পাচরুখী, ছনপাড়া, পুরিন্দা, সাতগ্রামসহ কিছু এলাকায় তার পোস্টার দেখা গেছে।

ভোটারদের কথা

“বাবু ভাই প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়ার পর নতুন হিসেবে তিনি বেশি ভোট পান। সে সময় থেকে দলকে চাঙ্গা রাখতে নানা কর্মসূচি নিয়েছেন তিনি। দলকে সংগঠিত করেছেন। বর্তমানে আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগে দলীয় কোনো বিভেদ নেই।”


 
নৌকায় ভোট দেবেন বলে জানালেন মাহমুদপুর ইউনিয়নের খাসেরকান্দি গ্রামের বাবুল কসাই।

তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম বাবু অনেক উন্নয়ন করেছেন। এজন্য ভোট তার প্রাপ্য।

“আমরা ছুডুবেলাত্তেনে আওয়ামী লীগ কইরা আইছি। বাবু এমপি অওনের পরে আঙ্গো (আমাদের) এলাকায় অনেক উন্নতি অইছে। মসজিদ-ঈদগা করনের সমোয় সাহাইয্য করছে। গাঙ্গের পাড়ে গাট বানাইয়া দিছে গোছল করোনের লাইগা। অনে রাস্তাঘাটও অনেক বালা। বাবুই আমার বোট পাইব।”

ফতেহপুর ইউনিয়নের বগাদী কান্দাপাড়া কেন্দ্র থেকে সব সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন বলে জানান ওই গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক।

তিনি বলেন, এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবে।

“বাবু এমপি হওয়ার পরে অনেক উন্নয়ন করছে এলাকার। নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। হেরলাইগ্গা আমরা তারে বোট দিমু।”

বাবু সাংসদ হওয়ার পর হিন্দুদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার কম হয়েছে। এজন্য হিন্দুদের ভোট তিনি পাবেন বলে মনে করেন দুপ্তারা ইউনিয়নের গিরদা গ্রামের সাজু বর্মণ।

তিনি বলেন, এই আসনে ১০ হাজারের বেশি ভোট আছে যা নৌকা পাবে।

“এর কারণও আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তারা একটু নিশ্চিন্ত ফিল করে। আরে আগের সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় নানা ধরনের টর্চারিংয়ের শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সত্যি বলতে গত ১০ বছরে এ ধরনের ঘটনা নাই।”