শনিবার   ১৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১ ১৪৩১   ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শরীর ঢেকে রাখলে আপনারা বিনোদিত হবেন কী করে?: প্রিয়তী

নিউজ ডেস্ক:

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:১৮ পিএম, ১৫ মে ২০১৯ বুধবার

মিস আয়ারল্যান্ড খ্যাত মডেল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহসী মন্তব্য করে এর আগেও বহুবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। তবু রাখঢাক রেখে করা, বলা ও জীবনযাপনে কোনো সীমাবদ্ধতায় বিশ্বাসী নন এই দেশি মডেল।

তার পোস্টের মন্তব্যে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করে। সেসব মন্তব্যের জবাবও দেন প্রিয়তী। তবে অনেকেই তাকে এসব মন্তব্যের জবাব দিতে নিষেধ করেন। তবে রোববার (১২ মে) ব্যক্তিজীবনের নানা ভাবনা, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, নিজের অস্তিত্ব ও পোশাকআশাক নিয়ে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন প্রিয়তি। 

ডেইলি বাংলাদেশ-এর পাঠকের জন্য সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো: 

উত্তর দেন কেন?, শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায়ই আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করেন, জবাব দিতে মানা করেন। কিন্তু আমার তো মনে হয় জনে জনে ধরে আমি আমার কথা বলি, উত্তর দেই, আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জানান দিই। কিন্তু আমি থমকে দাঁড়াই একটা প্রশ্ন নিয়ে, আমি আসলে কাকে বোঝাতে যাচ্ছি বা চাচ্ছি? কারা ওরা? তাদের কি প্রভাব আছে আমার জীবনে?

এসব প্রশ্ন খোঁজার আগেই আমি ফিরে তাকাই আমার নিজের পায়ের মাটির নিচে, কোথা থেকে আমার উত্থান, কোথায় আমার জন্ম, আমার পরিবার? এই পরিবারের কথা যখন মাথায় আসল, তখন অঙ্ক কষি, এই পরিবারের সদস্যদের সবাইকে এক ছাতার নিচে আনা যায় না, তাহলে আমি এই সমাজের/পৃথিবীর মানুষদের আর কি জানাতে/ বোঝাতে যাব। রেখে দিই ওই আহাজারি, আচ্ছা, বলুন তো, কখনো কি আপনি/ আপনারা আমার পথে হেঁটেছেন? আমার জুতাগুলো পরেছেন? আপনার ঘাড়ে আমার ভারী মাথাটা রেখে দেখেছেন? সেই মাথাটা আমার বালিশে গিয়ে রেখেছেন? আমার হয়ে ঘুমিয়েছেন, দুঃস্বপ্নতে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়েছেন বা বোবা কান্নায় ভেসেছেন? আমার কোনো যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন বা হারানোর ব্যথায় দিশেহারা হয়েছেন?

আচ্ছা ওই সব কথা বাদ দিন বাস্তবতায় আসি, আমার বাসার কোনো বিল দিতে এসেছেন বা কোনো বাজার? আচ্ছা, সবচেয়ে সোজা কাজ বলি, আমার বাচ্চার চুল কাটাতে নিয়ে গিয়েছেন? বা আমার বাসার ময়লার ব্যাগটা ফেলতে গিয়েছেন? অথবা, রাত তিনটায় উঠে বাচ্চার বমি পরিষ্কার করেছেন, হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন? এমন হাজারো কাজের লিস্ট আমি দিতে পারব যা আপনাদের মধ্যে কেউ এসে করতে পারবেন না, ঠিক তেমনি আমিও পারব না আপনাদের জীবন আমি যাপন করতে বা বইতে। এখন কথা হচ্ছে, আমরা যেহেতু কেউ কারো জীবন যাপন করতে পারি না তাহলে কেন, আমি যখন কোনো ছবি বা কোনো লেখা পোস্ট দিই, তখন এক শ্রেণির মানুষ কেন আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন, আপনাদের ইচ্ছা, মতাদর্শ, বিশ্বাস আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য?

কোনো ধর্মের প্রতি তার কোনো নেতিবাচক মনোভাব নেই জানিয়ে প্রিয়তি বলেন, ভণিতা না করে একটু সরাসরি-ই বলি, যেকোনো পোস্ট বা ছবিতে কমেন্টের বাহার যদি আমি দেখি, তাহলে বেশির ভাগ মন্তব্যগুলো শুধুমাত্র ধর্মকেন্দ্রিক, আর সেই অনুযায়ী মন্তব্যগুলো এমন যে, ধর্মে নারীদের এইটা পড়তে নিষেধ করছে, নারীদের এইভাবে চলতে নিষেধ করছে, নারীদের এইভাবে কথা বলতে নিষেধ করছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ একজনও বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত করে না, নরদের কীভাবে চলতে বলা হয়েছে, কি তাদের বিধিনিষেধ। আরে ভাই, আমি কি জীবনে কোথাও উল্লেখ করে বলেছি যে, কোন ধর্ম ভালো না, ধর্মের বিধিনিষেধগুলোকে কি আমি অগ্রাহ্য করছি, কাউকে অনুসরণ করতে মানা করেছি বা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কাউকে উসকে দিচ্ছি বা প্রভাবিত করছি?

কিন্তু আপনি/আপনারা কে যে, আরেকজনের ওপর আপনার ব্যক্তিগত মতামত, বিশ্বাস, রুচি, মান, রীতিনীতি, ধরন, জীবন ভঙ্গি, চালচলন- ঢং চাপিয়ে দেবেন এবং আপনার পছন্দসই তা না মানলেই সেই ব্যক্তি পৃথিবীর নিকৃষ্ট জাতির প্রাণী!

নারীদের পোশাকের প্রসঙ্গ তুলে প্রিয়তি বলেন, আচ্ছা কিছু প্রশ্ন ছিল, আমি শরীর ঢেকে রাখলে ধর্ষণ কমে যাবে, নাকি বাংলাদেশের সব মডেল-সেলিব্রিটিদের শরীর ঢাকলে ধর্ষণ কমবে? আচ্ছা ধরুন আমরা সবাই মিলে শরীর ঢাকা শুরু করলাম, তখন আপনার ক্যাটরিনা-কারিনা-সানি লিওনির কি হবে, ওদের শরীর দেখে ধর্ষণ করতে ইচ্ছা হবে না তো? নাকি ওদেরও পর্দা করতে বলবেন? আচ্ছা ধরুন ওরাও পর্দা করা শুরু করল, তখন হলিউডের নারী স্টারদের কি বলবেন, পর্দা করতে? তখন আপনারা বিনোদিত হবেন কি করে?

ভিনদেশে নিজ জীবনের ঘটনা উল্লেখ করে প্রিয়তি বলেন, শেষ করি, নিজ জীবনের ছোট্ট অংশ নিয়ে। আমি আর আমার দুই বাচ্চাসহ যখন আমি রাস্তায়, ভাগ্য বা খারাপ সময় যেটাই বলি না কেন, যখন মাথার উপর থেকে ছাদ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, ভিনদেশে বাচ্চাদের কি খাওয়াব, কি পড়াব, সেই মা তখন অসহায়, ভয়ে-আতঙ্কে জর্জরিত। তখনই এই খ্রিষ্টান দেশের দাতব্য সংস্থা এসে সেই মায়ের দুধের বাচ্চাদের কনকনে শীতের রাতে ছাদ এর বন্দোবস্ত করেন, সঙ্গে অন্ন এবং বস্ত্রের। একবারের জন্য জিজ্ঞেস করেনি কেউ, আমি কোন ধর্মের বিশ্বাসী, অনুসারী। বিচার করতে আসেনি আমাদের।

তিনি আরো বলেন, এই খ্রিষ্টান দেশে থেকেই কাজ করে বা ওই দেশের সরকারি ফান্ড থেকে খেয়ে বসে পড়ে নিজ পরিবার সামলাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ, চলে বহু মসজিদ-মাদ্রাসা, অস্বীকার করতে পারবেন? আপনাদের মাঝে ৯৫% মানুষও ওই শহরেই সুযোগ পেলে চলে আসতে চাইবেন সুন্দর জীবনের আশায়, অস্বীকার করতে পারবেন? আচ্ছা মধ্যপ্রাচ্যে কেউ গিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার মতো Asylum Seek করতে পারে? বিষয়টি আমার জানা নেই, আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন। ওহ, আপনারা জানবেন কীভাবে, আপনারা তো ব্যস্ত আমি/আমরা কি পোশাক পড়েছি, শরীর ঢাকা আছে কি নেই। শরীর দেখাই আমি আয়ারল্যান্ডে কিন্তু ধর্ষণ এর পরিমাণ নাকি তার জন্য বাড়ে বাংলাদেশে। What a logic!

সর্বশেষ তিনি বলেন, চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ডের কল্পনা করুন তো, টিভি তে নাটক হচ্ছে বা বিজ্ঞাপন চলেছে, সিনেমা হলে মুভি চলছে, সব নারী কালো রঙের বোরকা পরা, শুধু চোখ দেখা যায়। সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে গিয়েছেন কিংবা শপিং সেন্টারে, রাস্তা-ঘাটে ঘরে-বাইরে সবাই কালো বোরকা পরা, কি সুন্দর পৃথিবী তাই না! চলুন আমরা আবার গালি দেয়া শুরু করি…..শরীর বিক্রেতা কারী… আর খদ্দেরগণ যেন কারা?