বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা পাচ্ছেন ২১ কোটি টাকার বিশেষ বোনাস
নিউজ ডেস্ক:
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:১৫ পিএম, ১৬ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার
বন্দর তহবিল থেকে ২১ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় করে চট্টগ্রাম বন্দরের ছয় হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। ঈদের আগ দিয়ে স্বাভাবিক বেতন-বোনাসের বাইরে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা করে ‘বিশেষ বোনাস’ হিসেবে এই টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
বন্দরের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন স্তরের কর্মচারী পর্যন্ত সকলেই এই বিশেষ উৎসাহ বোনাস পাচ্ছেন। একই সাথে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উপসচিব থেকে নিচের পদমর্যাদার কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকেও বন্দরের টাকায় এই বিশেষ বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। ১৫ মে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। এর আগে আরো দুই দফায় এই ধরনের বিশেষ বোনাস দেয়া হয়েছিল।
ঈদের আগ দিয়ে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা করে হাতে পাওয়ার খবরটি প্রচার হওয়ার সাথে সাথে বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে বন্দরে ছয় হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এদের প্রত্যেকের আন্তরিক কর্মকাণ্ডের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
২০১৮ সালে বন্দরে জাহাজ জট, পণ্য জট এবং জাহাজের অবস্থানকাল বহুলাংশে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে লয়েডস এর তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর কয়েক ধাপ এগিয়ে ৭০ তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছে। বিশ্বের একশটি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০তম স্থান অর্জনকে শ্রমিক কর্মচারীদের সমন্বিত এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার ফসল বলেও মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমিক কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সকলকেই এককালীন ৩৫ হাজার টাকা করে বন্দরের তহবিল থেকে উৎসাহ বোনাস প্রদান করা হবে।
এই উৎসাহ বোনাস দিতে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে স্মারক নম্বর-০৭.০০.০০০০.১২৬.০০.১৫.১২২ তারিখ-১৫-০৫-২০১৯ মূলে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব লিলি বেগম স্বাক্ষরিত এই নির্দেশনায় বলা আছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী বন্দরে কর্মরত ছিলেন কেবল তাঁরাই এই বোনাস পাবেন। বন্দরের নিজস্ব তহবিল থেকে এই ব্যয় মেটানো হবে। এতে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্রব থাকবে না।
অর্থবিভাগের প্রবিধি শাখা-৩ এর ২৯/০৮/২০০৭ তারিখের অম/(অবি)/প্রবি-৩/সম্মানি-০১/২০০৭/১৪১ নম্বর স্মারক মূলে উপসচিব তদনিম্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রযোজ্য হবে।
মন্ত্রণালয়ের ঠিক কতজন কর্মকর্তা কর্মচারী এই বোনাস পাবেন তা জানা যায়নি। প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যাংক হিসেবে ‘বিশেষ উৎসাহ বোনাস’ চলে যাবে। এর আগে ২০১৬ সালে প্রথম চট্টগ্রাম বন্দর বিশেষজ্ঞদের মতামত ভুল প্রমাণ করে ধারণাকৃত সময়ের এক বছর আগে ২০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করায় বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীদের প্রত্যোককে ৩৫ হাজার টাকা করে এই ধরনের বিশেষ উৎসাহ বোনাস দেয়া হয়েছিল। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষেও প্রত্যেককেই বিশ হাজার টাকা করে উৎসাহ বোনাস দেয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি বিশেষায়িত জায়গা। এখানের কাজ কর্মের সাথে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানের কাজকর্মের মিল পাওয়া কঠিন। অনেকটা সমন্বিতভাবে কাজ করতে হয়। রাতে দিনে কাজ করতে হয়। তাদেরকে উৎসাহ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিশেষ উৎসাহ বোনাস দেয়ার নিয়মটি চালু করেছিলেন। ওই নিয়মের ধারাবাহিকতায় এবারও বোনাস দেয়া হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বন্দরের সার্বিক উৎপাদনশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও এম এ লতিফ মনে করেন।
তিনি বলেন, বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রদানের এই দৃষ্টান্তটি উৎপাদনের সাথে জড়িত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও অনুসরণ করলে সুফল মিলবে। ঈদের আগ দিয়ে স্বাভাবিক বেতন বোনাসের বাইরে বিশেষ উৎসাহ বোনাস প্রদানের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) একজন নেতা বলেন, এটি আসলেই অনেক ভালো একটি সিদ্ধান্ত। আমরা পুরো বছর বহু কাজ করেছি। আমরা প্রত্যেকের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে চেয়েছিলাম। কিন্তু বোর্ড আগের মতো ৩৫ হাজার টাকা অনুমোদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়ে এসেছে।
এতে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী খুশী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বোনাস চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে সুফল নিয়ে আসবে। কাজের গতি বাড়বে।