মুসলিমদের বসে পানি পান করার কারণ
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:২৩ পিএম, ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার
আমেরিকার এক শহরে জনৈক পাকিস্তানি ট্যাক্সি চালক একটি কফি শপে ঢুকলেন। নিজে এক বোতল ঠান্ডা পানি নিয়ে এক পাশে গিয়ে বসে, প্রথমে ছোট ছোট তিন ঢোক তিন নিঃশ্বাসে পান করলেন।
এরপর লোকটি যখন বের হয়ে যাচ্ছেন, তখন আরেক ভদ্রলোক দৌঁড়ে এসে তার হাত ধরলেন। বললেন, এক্সকিউজ মি, আপনি কী আমাকে ৫ মিনিট সময় দেবেন? আমার কিছু কথা বলার ছিল। ড্রাইভার লোকটি বললেন, বসে বলব না চলতে চলতে বলব। পার্কিংয়ে আমার গাড়ি রাখা আছে। তখন ভদ্রলোক বললেন, চলুন আপনার সঙ্গে যেতে যেতেই কথাগুলো বলা যাক।
ভদ্রলোক যা বললেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। তিনি নিজের পরিচয় দিলেন, আমেরিকার প্রখ্যাত এক বিজ্ঞানী। ট্যাক্সিতে বসে তিনি পাকিস্তানি এই চালককে প্রশ্ন করলেন, আপনি একটু আগে যেভাবে পানি পান করলেন, এটা কী আপনার অভ্যাস না হঠাৎ করেই এমনটি হয়েছে। যেখানে আমেরিকায় আমরা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে শুধু পানি কেন পুরো লাঞ্চ বা ডিনার করে ফেলি, আপনি সেখানে এক বোতল পানি এক জায়গায় বসে থেমে থেমে নিঃশ্বাস নিয়ে পান করলেন, এর পেছনে কারণ কী?
বিজ্ঞান যেখানে বলে, পরিশ্রান্ত মানুষ দাঁড়িয়ে পানি পান করলে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। পানির প্রেসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তার হার্ট, কিডনি, লিভার ইত্যাদি। নিজের জীবনের দৈনন্দিন এ অভ্যাসটি এই বিজ্ঞানীর চোখে এত বিস্ময়কর কেন ঠেকলো তা এই ড্রাইভার বুঝতে পারছিলেন না। তিনি সরল ভাষায় উত্তর দিলেন, আমি একজন মুসলমান। আমাদের ধর্মে এভাবেই পানি খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। আমি ছেলে বেলা থেকে এভাবেই পানি পান করতে শিখেছি। আমার পরিবারের ছোট-বড় সকলেই এভাবে পানি পান করে।
বিজ্ঞানী তখন বললেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের পানি পানের সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছি। আমার জ্ঞানের সঙ্গে আপনার আজকের এ পানি পানের দৃশ্য এমনভাবে মিলে গেছে যে, আমি আপনাকে না ধরে পারলাম না। আপনি আমাকে একটু লম্বা সময় দিন। দূরে কোনোদিকে লংড্রাইভে চলুন। আমি আপনার পেমেন্ট দেব, কথা বলার জন্য আলাদা সম্মানিও দেব। তথাপি আমি চাই, আমার গবেষণার একজন রোলমডেলের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলোচনায় আমার গবেষণা পূর্ণতা লাভ করুক।
বিজ্ঞানী এরপর জানতে চাইলেন, এভাবে পানি পান করা আপনি শিখেছেন কার কাছে? এটি কী কোনো সংস্থা বা গবেষকের ফর্মুলা। তখন ড্রাইভার সহজ সরলভাবে জবাবে বললেন, এটি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নত। তার এ নির্দেশনা মত পৃথিবীর সব অনুগত মুসলমান পানি পান করে থাকেন। শুধু তাই না, আমাদের জীবনে প্রতিটি কাজের এমন একটি সুন্দর নকশা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এঁকে দিয়ে গেছেন। যাকে সুন্নত বলে, আমরা তারই অনুসরণ করি। তখন এ বিজ্ঞানী ট্যাক্সি চালককে তখনকার মতো বিদায় দিয়ে বললেন, আমাকে আরো সময় দিতে হবে। আপনার ঠিকানা ও যোগাযোগের সবকিছু আমাকে দিন। আপনাদের প্রফেটের সুন্নত সম্পর্কে যারা বেশি জানেন তেমন জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিন। সেদিনের মতো এভাবেই তারা দু’জন আলাদা হয়ে যান।
কয়েকটি সাক্ষাতের পর এই বিজ্ঞানী ইসলামিক সেন্টারের ইমাম সাহেবের হাতে ইসলামগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আলোচিত ট্যাক্সি চালকের পানি পান করা থেকে প্রথম ধারণা লাভ করেন। পরে তিনি বলেছেন, দাঁড়িয়ে পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খুব তৃষ্ণার সময় একশ্বাসে অনেক পানি পান করা আরো ক্ষতিকর। পানি পানের বহু থিওরি আমি জমা করেছি, কিন্তু সাধারণ একজন ট্যাক্সি চালক যেভাবে বসে ধীরে ধীরে ছোট ছোট তিন ঢোকে তিন নিশ্বাসে পান করলো, এ ছিল আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমি বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম এ ঘটনাটি কী ইচ্ছাকৃত না কাকতালীয়। যখন চালক ব্যক্তিটি আমাকে সব বুঝিয়ে বললেন, তখন আমার সামনে জ্ঞানের দরজা খুলে গেল। আমি সেই মহামানবের সকল সুন্নত সম্পর্কে শ্রদ্ধাভরে জানার সুযোগ পেলাম। যা দেড় হাজার বছর আগে একটি অনুন্নত পরিবেশে থেকেও ইসলামের নবী (সা.) শিক্ষা দিয়ে গেছেন। যার মধ্যকার বিজ্ঞান সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দিনে দিনে বিশ্বের মানুষ আরো বেশি করে বুঝতে পারছে।
মানুষ যখন বসে প্রথম এক ঢোক পানি খায়, এরপর নিঃশ্বাস নেয় তখন পানির পরপরই তার দেহে অক্সিজেন প্রবেশ করে। এরপর তিনবার যখন এ কাজটি করে তখন তার মস্তিষ্ক ও রক্তের শিরা-উপশিরা যথেষ্ট অক্সিজেন লাভ করে, ফুসফুস আরাম পায়, খাদ্য ও শ্বাসনালী নিজেদের সেরা পারফর্ম করে, পাকস্থলী ধীরে ধীরে সে পানিগুলো রিসিভ করে। বিভিন্ন নালী ও শিরা পানিটাকে ফিল্টারিং করে, পানিতে কোনো জীবাণু বা ময়লা থাকলে উপকারী জীবাণুরা সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
দাঁড়িয়ে পানি পান করলে এর তীব্র গতি পাকস্থলীকে যেভাবে আঘাত করে, তার কুপ্রভাব কিডনী পর্যন্ত পৌঁছে যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি এমনকি মূত্রথলিতেও চাপ সৃষ্টি করে। আর তৃষ্ণার্থ বা ক্লান্ত মানুষ এক নিঃশ্বাসে অনেক পানি খেলে এতে তার শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা, রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কমান্ড ইত্যাদি সবক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। বিষম খেয়ে বা খাদ্যনালীতে আটকে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটাও অসম্ভব নয়।
শুধু এ বিজ্ঞানী নয়, দুনিয়ার আরো গবেষণা প্রতিষ্ঠান মুসলমানদের পানি পানের সুন্নত পদ্ধতিকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিচ্ছে, স্বাগত জানাচ্ছে। পাশ্চাত্যের ইসলামগ্রহণের যে প্রবণতা দিনদিনই বাড়ছে এতে বড় বড় ঘটনাতো বটেই সাধারণ মুসলমানদের জীবনরীতি দেখেও অসংখ্য মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৩২শ’ মানুষ ইসলামগ্রহণ করে। তাদের এ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে পানি পান, খাদ্যগ্রহণ, পারিবারিক শান্তি, বিবাহিত জীবনের পবিত্রতা, সন্তানদের মায়া-মমতা, এমনকি রোগীর সেবা, মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা ও ইসলামী পদ্ধতির জানাজা দাফন-কাফন।