রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সদকাতুল ফিতর আদায়: গুরুত্ব ও তাৎপর্য

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১২:২৬ পিএম, ১৭ মে ২০১৯ শুক্রবার

নারী-পুরুষ, স্বাধীন-পরাধীন, শিশু-বৃদ্ধ, ছোট-বড় সকল স্বামর্থবান মুসলিমের জন্য সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব।

দ্বিতীয় হিজরিতে উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর রমজান মাসের রোজা ফরজ করার সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের ‘সাদাকাতুল ফিতর’ আদায় করার নির্দেশ দেন। একে সাধারণত রোজার ‘ফিতরা’ বলা হয়।

এটা মূলত মাহে রমজানেরই নির্ধারিত সাদকা বা দান। শরিয়তের পরিভাষায় রমজান মাস শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে মাথাপিছু যে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য গরিব-মিসকিনদের সাদকা করা হয়, একে ‘সাদাকাতুল ফিতর’ বলে।

বহু হাদীস দ্বারা সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট। মহানবী (সা.) এর যুগে মোট চারটি পণ্য দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো, যেমন খেজুর, কিশমিশ, জব ও পনির। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমাদের সময় ঈদের দিন এক সা খাদ্য দ্বারা সাদকা আদায় করতাম। আর তখন আমাদের খাদ্য ছিলো জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (সহিহ বোখারি)

এরপর হজরত মুয়াবিয়ার (রা.) যুগে গমের ফলন বেড়ে যাওয়ায় গমকে আলোচিত চারটি পণ্যের সঙ্গে সংযোজন করা হয়। আর তখন গমের দাম ছিল বাকি চারটি পণ্যের তুলনায় বেশি। আর মূলত এই দাম বেশি থাকার কারণেই হজরত মুয়াবিয়া গমকে ফিতরার পণ্যের তালিকাভুক্ত করেছিলেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন, নবীজি (সা.) এক সা খেজুর বা এক সা জব দিয়ে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তী সময় লোকজন (সাহাবা আজমাইনরা) দুই মুদ গমকে (আধা সা) এগুলোর সমতুল্য মনে করে এবং আদায় করে। (বোখারি)

রমজান মাস শেষ দশক আসার সঙ্গে সঙ্গে রোজাদারের অপরিহার্য কর্তব্য হলো নির্ধারিত পরিমাণে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা। খেজুর, কিশমিশ, মুনাক্কা এবং যব দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা হলে ১ সা অর্থাৎ তিন কেজি ৩০০ গ্রাম অথবা এর মূল্য আদায় করতে হবে। আটা বা গম দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা হলে অর্ধ সা অর্থাৎ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর সমান মূল্য আদায় করতে হবে। মাথাপিছু এক কেজি ৬৫০ গ্রাম গম বা আটা অথবা এর স্থানীয় বাজারমূল্যের সমান ফিতরা দিতে হয়।

রোজা পালনে বা সিয়াম সাধনায় অত্যন্ত সতর্কতা সত্তেও যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়, তার প্রতিকার ও প্রতিবিধান বা ক্ষতিপূরণের জন্য রমজান মাসের শেষে স্বামর্থবানদের ওপর সাদাকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে। ধনীদের পাশাপাশি গরিবেরাও যেন ঈদের আনন্দের ভাগিদার হতে পারে, সে জন্য ইসলামি শরিয়তে ঈদুল ফিতরে ধনীদের ওপর ‘সাদাকাতুল ফিতর’ ওয়াজিব করা হয়েছে।

নবী করিম (সা.) সাদাকাতুল ফিতর এ জন্য নির্ধারিত করেছেন যাতে ভুলক্রমে সৃষ্ট গুনাহ থেকে রোজা পবিত্র হয়। হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সাদাকাতুল ফিতর দ্বারা রোজা পালনের সকল দোষত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়’ (আবু দাউদ)। 

রোজার অন্যান্য আমলের মতো সাদাকাতুল ফিতরকেও গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা মুমিনদের কর্তব্য।